‘প্রকৃত’ চাষির বদলে ‘ফড়ে’রা নাম ভাঁড়িয়ে গলসির বিভিন্ন চালকলে ধান বিক্রি করছে বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেই অভিযোগে এ বার দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। যদিও ব্লক প্রশাসন যে ৩০ জনের নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিল, ধৃতদের এক জনের নাম সেই তালিকায় নেই। তবে তিনি এই চক্রের ‘পান্ডা’ বলে পুলিশের দাবি।
পুলিশ জানায়, গত ৯ ফেব্রুয়ারি বর্ধমানের গলসি ১-এর বিডিও নিরঞ্জন কর ৩০ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তার ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বঙ্কিম রায় এবং সাহের মির আলি ওরফে শের আলি নামে দু’জনকে ধরা হয়েছে। প্রথম জনের বাড়ি গলসির পারাজ গ্রামে, অপর জনের পুরষায়। শুক্রবার বর্ধমান সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ইয়াসমিন আহমেদ তাঁদের ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। |
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৭ জানুয়ারি পারাজে ধান কেনার দাবিতে হওয়া একটি অবরোধকে কেন্দ্র করে। ওই অবরোধের জেরে আরও বহু যাত্রীর মতো যানজটে আটকে পড়েছিলেন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকও। ঘটনাস্থল থেকেই তিনি খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। পরে গলসি ১ ব্লকে কয়েক দিন ধান কেনার বিশেষ শিবিরও করা হয়। যদিও প্রশাসনের প্রত্যাশা মতো ধান সংগৃহীত হয়নি।
তখনই খাদ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, প্রকৃত চাষি নয়, ফড়েরাই চাপ সৃষ্টি করে সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করার চেষ্টা করছে। তাঁর নির্দেশে পারাজ এলাকার বিভিন্ন চালকলে তদন্ত চালিয়ে জেলা প্রশাসন এমন ৩০ জনের নাম পায় যাঁদের ততটা জমি না থাকলেও প্রচুর ধান বিক্রি করেছিলেন। পরে গলসি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিডিও। একই সঙ্গে যুগ্ম বিডিও অমিতাভ ভট্টাচার্যের করা একটি তদন্ত রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়। তাতে ১৩ জনের নাম, পরিচয় ও জমিজমার বিবরণ ছিল।
তদন্তে নেমে পুলিশ স্থানীয় চালকলগুলিকে নোটিস দিয়ে জানতে চেয়েছিল, কোন কোন চাষির কাছ থেকে তারা ধান কিনেছে। কিন্তু শেষমেশ অভিযুক্ত ৩০ জনের মধ্যে ৪ জনের অস্তিত্ব জানা যায়নি। পুলিশ জানায়, সাহের আলি মির ও তাঁর পরিবারের হাতে মোট ৬০-৬৫ বিঘে জমি রয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তিনি যে পরিমাণ ধান বিক্রি করেছেন, তা ফলাতে লাগে অন্তত ১২১ বিঘে জমি প্রয়োজন। কিন্তু বঙ্কিম রায় সম্পর্কে এ রকম কোনও বিস্তারিত তথ্য দেয়নি গলসি থানা। ৩০ জন অভিযুক্তের তালিকায় তাঁর নামও ছিল না।
বঙ্কিমবাবুর আইনজীবী সদন তা-র প্রশ্ন, “মূল অভিযোগে নাম নেই, পুলিশের হাতে বিস্তারিত তথ্য নেই, তবু কী করে ওঁকে গ্রেফতার করা হল?” বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “আমরা তদন্তে নেমে দেখেছি, ওই এলাকায় যারা চাষি সেজে বিভিন্ন চালকলে ধান বিক্রি করেছে, বঙ্কিম রায়ই তাদের পান্ডা। তাঁর বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করার চেষ্টা চলছে।” জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “বিডিও-র দায়ের করা অভিযোগে ওই নাম ছিল না ঠিকই। তবে জালিয়াতিতে জড়িত বলে তদন্তে জানা গেলে পুলিশ গ্রেফতার করতেই পারে।”
বর্ধমান জেলা চালকল মালিক সমিতির সম্পাদক দেবনাথ মণ্ডলের অভিযোগ, “পারাজে পথ অবরোধের পরেই প্রশাসন কিছু লোককে বলির পাঁঠা করার চেষ্টা করছে।” তবে সরাসরি কোনও পক্ষ না নিয়ে রাজ্য ধান ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক প্রশান্ত লাহা বলেন, “আমরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি।” |