মোটরসাইকেলে হঠাৎ বিধায়কের গাড়ির সামনে, মৃত্যু |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
রানিগঞ্জের বিধায়ক সোহরাব আলির গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হল এক মোটর সাইকেল আরোহীর। শুক্রবার দুর্গাপুরের মুচিপাড়ার কাছে জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম গঙ্গারাম কর্মকার (৫২)। তিনি সগড়ভাঙ্গায় থাকতেন। মুচিপাড়া এলাকার বাসিন্দারা গাড়ির চালককে মারধর শুরু করেন। বিধায়ককেও গালিগালাজ করা হয়। তবে পুলিশ পৌঁছে যাওয়ায় অশান্তি বেশি দূর গড়ায়নি। গাড়ির চালক মহম্মদ ইসরাফিলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। |
দুর্ঘটনার পরে। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। দ্রুত গতিতে বিধায়কের গাড়ি ছুটছিল কলকাতার দিকে। মুচিপাড়া মোড়ে ঢোকার মুখে সেটি ধাক্কা মারে একটি মোটর সাইকেলকে। এর পরেই গাড়িটি জাতীয় সড়ক ছেড়ে বাঁ দিকের রাস্তায় নেমে পড়ে। মোটর সাইকেলটি তখনও গাড়ির তলায় আটকে ছিল। তবে তার আরোহী গঙ্গারামবাবু ধাক্কার পরেই রাস্তায় ছিটকে পড়েন। আশপাশের বাসিন্দারা গাড়িটিকে তাড়া করেন। বেশ কিছুটা গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে গাড়িটি। অভিযোগ, এই সময়ে গাড়ির চালক মহম্মদ ইসরাফিল নেমে পালাতে যান। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা তাঁকে ধরে মারধর শুরু করেন। গাড়িটির কাচ ভাঙচুর করা হয়। টানাহ্যাঁচড়া করা হয় সোহরাব আলিকেও। তিনি নিজের পরিচয় দিলে জনতা নিরস্ত হয়। এই ঘটনার জন্য জাতীয় সড়কের ওই জায়গায় যানজট সৃষ্টি হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। বিধায়ককে উদ্ধার করে স্থানীয় ফাঁড়িতে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে গাড়ি এবং মোটরবাইকটিও নিয়ে যায়।
বিধায়ক অভিযোগ করেন, মোটর সাইকেলটি ট্রাফিক আইন না মেনে ভুল লেন ধরে আসছিল। আচমকা সেটি সামনে পড়ে যাওয়ায় গাড়ির চালক নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, “আমি সরকারি কাজে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ এমন ঘটে গেল। দুর্ঘটনা ঘটতে দেখে এলাকার মানুষের ক্ষোভ প্রকাশ সঙ্গত। তবে কয়েক জন গালিগালাজ করেছে।” তাঁর দাবি, দুর্ঘটনার পরে গাড়িটি নিয়ে তিনি থানার উদ্দেশেই রওনা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাসিন্দারাই গাড়িটি আটকে দেন। দুর্ঘটনার খবর তিনি দলের জেলা সভাপতি (শিল্পাঞ্চল) অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে জানান। অপূর্ববাবু বলেন, “দুঃখজনক ঘটনা। আমরা মৃতের পরিবারের পাশে আছি।” পরে সোহরাব আলি আসানসোলে ফিরে যান।
গঙ্গারামবাবুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সগড়ভাঙ্গায় শোকের ছায়া নেমে আসে। গঙ্গারামবাবু আকাশবাণী ও দুরদর্শনে গান করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে গানের শিক্ষকতার সুবাদে এলাকায় তাঁর পরিচিতি ছিল। দেশের নানা শহরেও তিনি গানের অনুষ্ঠান করেছেন। তাঁর আসল বাড়ি বাঁকুড়ার কাদাশোলে। তবে ছোটবেলা থেকেই তিনি থাকতেন সগড়ভাঙ্গায় লোহার পরিবারে। পরিবারের সদস্য বংশীধর লোহার বলেন, “আমরা তিন ভাই। ওকে নিয়ে আমরা ছিলাম চার ভাই। ওর সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু একেবারে আপনজন ছিল।” এ দিন গঙ্গারামবাবু গানের শিক্ষকতা করতেই মোটর সাইকেল চড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। হঠাৎ দুপুরে এই দুঃসংবাদ আসে। পাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা অমরেন্দ্র মুখোপাধ্যা। বলেনন, “সব সময় ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে থাকত। সে জন্য খুব জনপ্রিয়ও ছিল।”
|