ভ্যাট থেকে উপচে পড়ে গোটা এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে জঞ্জাল। ভ্যাটের আশেপাশে জঞ্জালের একাধিক স্তূপ। জঞ্জাল বলতে রক্তমাখা ব্যান্ডেজ, ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ, মলমূত্র ভরা কালো প্লাস্টিকের ব্যাগ। জঞ্জালের ওপরে ভনভন করছে মাছি। কুকুর বেড়াল মুখে করে টানাটানি করছে ব্যবহৃত গজ, তুলোর বাক্স। যে কোনও ভাগাড়ের এমনটাই পরিচিত দৃশ্য। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের ভ্যাট এমনই চেহারা নিয়েছে। হাসপাতালের প্যাথোলজি বিভাগের পেছনেই হাসপাতালের জঞ্জাল ফেলার জায়গা। প্রতিদিন যেখানে হাসপাতালের বর্জ্য অপসারণ করার নিয়ম। সেখানে গত দু সপ্তাহ ধরে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের বর্জ্য সংগ্রহ করা বন্ধ করে দিয়েছে পুরসভা। গত দু’সপ্তাহ ধরেই ডাম্পিং গ্রাউন্ড নিয়ে একের পর এক বাধার মুখে পড়ে জলপাইগুড়ি পুরসভার জঞ্জাল অপসারণের কাজই থমকে রয়েছে। জঞ্জাল সংগ্রহ করলেও ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলার উপায় না থাকায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় যেমন সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে জঞ্জাল অপসারণ বন্ধ রয়েছে, তেমনই সদর হাসপাতালের জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজও বন্ধ রয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, বাধ্য হয়েই হাসপাতালের জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। দিনের পর দিন জঞ্জাল জমে গোটা এলাকায় পুঁতিগন্ধময় পরিবেশ তৈরি হয়েছে। জমে থাকা চিকিৎসা বর্জ্য থেকে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। |
প্যাথোলজি বিভাগের পেছনেই ভ্যাট থাকলেও জঞ্জাল অপসারণ না করায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে হাসপাতালের সার্জিকাল, মেডিক্যাল ওয়ার্ড লাগোয়া এলাকাতেও জঞ্জাল ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, দোতালার মহিলা ওয়ার্ড, চোখের বিভাগ, এবং অস্ত্রোপাচোরের ঘরেও দুর্গন্ধ ভেসে আসছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার হাসপাতালের তরফে জেলা প্রশাসন ও পুরসভাকে জানানো হয়েছে। এদিন বৃহস্পতিবার পুরসভার সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একপ্রস্ত আলোচনাও হয়েছে। পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সমস্যা না মিটলে কিছুতেই জঞ্জাল সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে সংক্রমণ ও দূষণের কবল থেকে হাসপাতালকে রক্ষা করতে বিকল্প উপায়ের চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানানো হয়েছে। সদর হাসপাতালের সুপার ব্রজেশ্বর মজুমদার বলেন, “দীর্ঘদিন জঞ্জাল অপসারণের কাজ বন্ধ থাকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভ্যাট উপচে পড়েছে। জমে থাকা জঞ্জাল থেকে সংক্রমণের আশঙ্কাও রয়েছে। পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়েছে। তবে এদিন পুরসভার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দেখা যাক কী হয়।” হাসপাতাল ভবনের পেছনেই জমে থাকা বর্জ্যের স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ঢুকে পড়ছে ওয়ার্ডে। হাসপাতালের এক নার্স বলেন, “জোরে হাওয়া বইলে হাসপাতালের সার্জিকাল বা মহিলা ওয়ার্ডে থাকা যায় না। দুর্গন্ধে বমি চলে আসে। নাকে রুমাল চাপা দিয়ে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। রোগীদের অবস্থাও বুঝতেই পারছেন।” পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “শহরে প্রতিদিন ৫০ মেট্রিক টন ময়লা সংগ্রহ করা হয়। ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ময়লা ফেলার উপায় না থাকাতেই ময়লা সংগ্রহ করার কাজ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। সদর হাসপাতাল থেকেও ময়লা সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না। তবে জমে থাকা বর্জ্য থেকে মারাত্মক দূষণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। বিকল্প উপায় খোঁজা হচ্ছে।” |