পশ্চিমবঙ্গে আর্সেনিক দূষণ ধরা পড়েছিল প্রায় তিন দশক আগে। ওই বিষের মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে ২৫০০ কোটিরও বেশি টাকা পেয়েছে রাজ্য। কথা ছিল, সেই টাকায় আর্সেনিক দূরীকরণ যন্ত্র বসিয়ে পরিস্রুত জল সরবরাহ করা হবে। কিন্তু আগের সরকার আর্সেনিক দূরীকরণের প্রযুক্তি চূড়ান্ত করতে না-পারায় একটিও প্রকল্প সম্পূর্ণ করতে পারেনি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। এ বার সেই প্রযুক্তির খোঁজে ১৪ দেশের জলবিজ্ঞানী, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু), বিশ্বব্যাঙ্ক এবং কেন্দ্রের বিভিন্ন দফতরের সহযোগিতায় ১৮ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় জলের মান সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন বসছে।
১৯৯৩ সালে রাজ্যের আট জেলার ৭৯টি ব্লককে ‘প্রবল আর্সেনিক-আক্রান্ত’ বলে ঘোষণা করে অর্থসাহায্য পাঠাতে শুরু করে কেন্দ্র। মূল উদ্দেশ্য ছিল, আর্সেনিক দূরীকরণের যন্ত্র লাগিয়ে বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করা। তার সঙ্গে ফ্লোরাইড এবং জলের লবণাক্ত ভাব দূর করার প্রকল্পও ছিল। কিন্তু একটিও যন্ত্র বসাতে পারেনি সরকার। তার বদলে ১৭ বছর আগে যে-সব জেলাকে ‘আর্সেনিক-আক্রান্ত’ বলে ঘোষণা করা হয়, সেখানে সাধারণ জল প্রকল্প তৈরি করে খরচের হিসেব দেখানো হয় বলে অভিযোগ।
রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে পাওয়া হিসেবে দেখা যাচ্ছে, আট জেলায় ভূগর্ভস্থ জলের আর্সেনিক দূরীকরণে মোট ৩৩৮টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ওই সব প্রকল্পের অধীনে ৮৯৫টি গভীর নলকূপ, ৪১৩টি জলাধার এবং পাইপলাইন তৈরির কথা ছিল। খরচ ধরা হয় ৯১২ কোটি টাকা। এ ছাড়া নদীর জল শোধন করে সরবরাহের প্রকল্পে বরাদ্দ করা হয় ১৬৪৪ কোটি টাকা। বহু নলকূপ এবং জলাধার তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বিষ দূর করার যন্ত্র না-থাকায় আগের আমলে সাধারণ ভাবেই নতুন নলকূপ থেকে জল সরবরাহ শুরু করে দেওয়া হয়। ২০১১ সালের মাঝামাঝি আর্সেনিক দূরীকরণ প্রকল্প সম্পূর্ণ করার পরিকল্পনা করেছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ। আর্সেনিক দূরীকরণের সরঞ্জাম (আর্সেনিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা এটিপি) কেনার জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আর্সেনিক টাস্ক ফোর্স ২০০৯ সালে ন’টি বিদেশি প্রযুক্তি চূড়ান্ত করে। কিন্তু ২০১১র জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ২৮ বার দরপত্র ডাকার পরেও সরঞ্জাম কেনার কথা পাকা করতে পারেনি তারা। ফলে একটি প্রকল্পও শেষ হয়নি।
নতুন সরকারের জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “আর্সেনিক দূর করার দীর্ঘমেয়াদি উপায় নিয়ে সারা বিশ্বে যে-গবেষণা হচ্ছে, আমরা তার সুফল পেতে চাই। জানতে চাই, এ দেশের পরিবেশ অনুযায়ী জলে ফ্লোরাইড, লবণাক্ত ভাব দূর করার কোন প্রযুক্তি সব চেয়ে ভাল ভাবে এবং বেশি দিন ধরে কাজ করতে পারবে। তাই এই সম্মেলন।” তিনি জানান, সম্মেলনের অধিকাংশ খরচ বহন করছে কেন্দ্রের পানীয় জল ও নিকাশি মন্ত্রক। |