রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ এসেছে। তবে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া বা এমসিআই-এর চোখে ধুলো দিয়ে তাদের অনুমোদন আদায়ের ‘ঐতিহ্য’-এর যে কোনও রকম বদল হয়নি, তা মেনে নিচ্ছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারাই।
সেই ‘ঐতিহ্য’ মেনে নিছক এমসিআই-এর পরিদর্শনের জন্যই নাম-কা-ওয়াস্তে ১৭০ জন শিক্ষক-চিকিৎসকে বদলি করা হচ্ছে। আসলে এটা যে ‘ছদ্ম-বদলি’, স্বাস্থ্যকর্তাদের কথাতেই তা স্পষ্ট।
খোদ স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা জানিয়ে দিয়েছেন, “মাত্রই সপ্তাহখানেকের ব্যাপার। এমসিআই-এর লোকেরা ঘুরে চলে গেলেই আবার চিকিৎসকেরা নিজের নিজের জায়গায় ফিরে যাবেন। যেখান থেকে তাঁদের বদলি করা হচ্ছে, এই ক’দিন সেই সব জায়গায় কোনও ভাবে ম্যানেজ করে নিতে হবে।” বুধবার রাতেই রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর থেকে নির্দেশ জারি করে একসঙ্গে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ১৭০ জন শিক্ষক-চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে। তাঁদের কলকাতা মেডিক্যাল, নীলরতন সরকার এবং আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যোগ দিতে বলেছেন স্বাস্থ্য ভবন কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই খবর, প্রধানত ন্যাশনাল মেডিক্যাল, মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ থেকে রাতারাতি ৩০-৫০ জন করে শিক্ষক-চিকিৎসককে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বদলি করা হয়েছে উত্তরবঙ্গ, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের বেশ কিছু শিক্ষক-চিকিৎসককেও।
বুধবার রাতে একসঙ্গে এত শিক্ষক-চিকিৎসকের বদলির নির্দেশ আসায় পঠনপাঠন ও হাসপাতালের পরিষেবা কী ভাবে চলবে, তা ভেবে ওই সব মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের আশ্বাস দেন, পরিদর্শকেরা চলে গেলেই স্বস্থানে ফিরবেন শিক্ষক-চিকিৎসকেরা।
বাম জমানায় এই ভাবে শিক্ষক-চিকিৎসকদের তুলে নিয়ে যাওয়াকে ‘কুমিরছানা দেখানো’ বলে ব্যঙ্গ করতেন তৃণমূল নেতানেত্রীরা। অথচ তৃণমূলের আমলেও সেই ‘ট্র্যাডিশন’ সমানে চলেছে। তৃণমূল পরিচালিত চিকিৎসক সংগঠন প্রগ্রেসিভ সার্ভিস ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন এটা হচ্ছে?
ওই সমিতির তরফে নিমাই নাথের জবাব, “দু’টোর মধ্যে চরিত্রগত পার্থক্য আছে। আগে কুমিরছানা দেখানো হত। তার পরে সেই পদগুলি কখনও পূরণ করা হত না। এ বার তা পূরণ করা হবে।” এই তুলনার কথা শুনে বাম সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেল্থ সার্ভিস ডক্টরসের বক্তব্য, “ওই সব পদ পূরণ হবে কি না, তা তো ভবিষ্যৎ বলবে। আসলে সবটাই ফাঁপা বুলি!”
স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্তবাবু অবশ্য এক জায়গার শিক্ষক-চিকিৎসকদের অন্য মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক হিসেবে দেখানোর এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়ে বলেন, “এক জায়গার শিক্ষক-চিকিৎসককে কী ভাবে অন্য জায়গায় তুলে নিয়ে গিয়ে মেডিক্যাল কাউন্সিলের অনুমোদন আদায় করা যায়, সেই কৌশল আমাদের খুব ভাল জানা আছে।”
বৃহস্পতিবার সকালেই ন্যাশনাল ও বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষেরা স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তাকে জানান, একসঙ্গে এত জন শিক্ষক-চিকিৎসককে বদলি করলে তাঁদের পক্ষে পঠনপাঠন চালানো এবং রোগীদের পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে না।
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁদের অ্যানেস্থেসিয়া, প্যাথোলজি, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ থেকে সব চেয়ে বেশি লোক নেওয়া হয়েছে। অ্যানেস্থেটিস্টের অভাবে হাসপাতালে রোজ এত অস্ত্রোপচার কী ভাবে হবে, সেটা তাঁরা ভেবে পাচ্ছেন না। মাইক্রোবায়োলজিতে এখন থাকছেন মাত্র দু’জন। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মনোজ চৌধুরী জানান, তাঁদের মেডিসিন, পেডিয়াট্রিক্স, স্ত্রীরোগ, সার্জারি থেকে লোক নেওয়া হয়েছে। তাঁদের শিশু বিভাগে ৬০টি শয্যায় সব সময় ২০০ জন ভর্তি থাকেন। প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ জন প্রসূতির প্রসব হয় স্ত্রীরোগ বিভাগে। ওখান থেকে লোক তুলে নিলে কাজ চালানো সম্ভব নয়।
|
‘কুমিরছানা’ অদলবদল |
ন্যাশনাল মেডিক্যাল |
৫০ |
বাঁকুড়া মেডিক্যাল |
২০ |
মেদিনীপুর মেডিক্যাল |
৩০ |
অন্যান্য হাসপাতাল |
৭০ |
|