|
|
|
|
লটারি নিয়ে জালিয়াতি,শঙ্কায় রাজ্য |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আলিপুরদুয়ার ও কলকাতা |
লটারিতে এক কোটি এক লক্ষ টাকা মিলেছে এবং তাঁর সেই টিকিট লটারি দফতরের কিছু কর্মী ছিঁড়ে দিয়েছেন বলে পুলিশে অভিযোগ করেছিলেন কালচিনির দিনমজুর রাজকুমার সাউ। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা গেল, লটারির প্রকৃত দাবিদার এক ব্যাঙ্ককর্মী। লটারির টিকিট ছিঁড়ে ফেলে দেওয়ার যে অভিযোগ হয়েছে, তাতে কোনও জালিয়াতি চক্রের হাত থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা রাজ্য প্রশাসনের। অন্য দিকে, রাজকুমারবাবুর অভিযোগ পেয়ে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সুনীল তিরকি ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “আমার দফতর থেকে রাজ্য লটারির অধিকর্তার কাছে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত অভিযোগের তদন্ত সম্পূর্ণ না-হচ্ছে ততদিন ওই পুরস্কার মূল্য নিয়ে যেন কোনও সিদ্ধান্ত না হয়।” প্রশাসনের এক কর্তাও বলেন, “যে হেতু পুরস্কারমূল্য খুব বেশি এবং একটা অভিযোগ উঠেছে, তাই ওই টাকা আপাতত দেওয়া হচ্ছে না। প্রকৃত লটারির টিকিটটিও রাজ্য লটারি দফতরের হেফাজতেই রয়েছে।” যে পুরস্কার মূল্য নিয়ে ওই অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য লটারির ওই খেলাটি হয় ১ জানুয়ারি। ডিমা চা বাগানের বিচলাইনের বাসিন্দা রাজকুমারবাবুর দাবি, এলাকার এক হকারের কাছ থেকে টিকিটটি কেনেন। ৩ জানুয়ারি তিনি টিকিটটি সংবাদপত্রে মেলান। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের লোকদের জানানোর পরে ২৭ জানুয়ারি কলকাতায় পৌঁছে রাজ্য লটারির দফতরের যান। তাঁর অভিযোগ, “বন্ধুরা অফিসের বাইরে বের হলে অফিসের কিছু লোক টিকিট মেলানোর নাম করে আমায় ভিতরে নিয়ে গিয়ে টিকিট দেখাতে বলে। আমি একসঙ্গে কেনা মোট পাঁচটি টিকিটই বার করেছিলাম। ওই কর্মীরা টিকিটগুলি দেখেই দাবি করেন, সেগুলি জাল। এর পরেই দু-তিনটি টিকিট তাঁরা ছিঁড়ে দেন। জাল টিকিট আনার অপরাধে আমাকে জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়ে বার করে দেওয়া হয়।” ২৮ তারিখ রাজকুমারবাবু কালচিনি থানায় অভিযোগ করেন। ওসি রিংচেন লামা ভুটিয়া তাঁকে বউবাজার থানায় অভিযোগের পরামর্শ দেন। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকিকে নিয়ে রাজকুমারবাবু বউবাজার থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলা যাবে না। কালচিনির বিডিও থেন্ডুপ শেরপার অবশ্য বক্তব্য, “রাজকুমারবাবু যে সত্যিই লটারিতে এক কোটি টাকা জিতেছিলেন তার কোনও প্রমাণ দেখাননি। তাঁর উচিত ছিল লটারির পাওয়ার পরে প্রশাসনের কোনও কর্তা কিংবা পুলিশকে জানিয়ে কলকাতায় রওনা হওয়া।” ঘটনা হল সেই প্রমাণ রাজকুমারবাবু তো দেখাতে পারেনইনি, উপরন্তু রাজ্য প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, তিনি পুরস্কারের আদৌ দাবিদার নন। কারণ, সেই পুরস্কার পেয়েছেন ওই এলাকারই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী। রাজ্য প্রশাসনের ওই কর্তা বলেন, “ওই ব্যাঙ্ককর্মী ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের কাছে প্রকৃত টিকিট, ওই কর্মীর সব রকমের পরিচয়পত্র এবং একটি বন্ড (যা আবশ্যিক) জমা দেন। নথিতে উল্লেখ করেছিলেন, কোন লটারি বিক্রেতার কাছ থেকে তিনি টিকিটটি কিনেছিলেন। এটা করা দরকার, কারণ ওই টিকিট বিক্রেতাও লটারির অর্থমূল্যের কমিশন পাবেন। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সমস্ত কাগজপত্র আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেন।” তিনি জানান, এর পরে ওই লটারি বিক্রেতাও তাঁদের কাছে আইন অনুযায়ী কমিশন পেতে সব রকম নথিপত্র জমা দেন। সেখানেও টিকিটটির বিক্রেতা হিসাবে ওই ব্যাঙ্ককর্মীর কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। ওই কর্তার কথায়, “এত কিছু পরীক্ষা আমরা করি, তার একটাই কারণ। পুরস্কারের অর্থমূল্য যাতে কোনও ভাবেই ভুল লোকের কাছে না যায়। কিন্তু এত কিছুর পরেও কালচিনির এক ভদ্রলোক আমাদের অফিসে এসে প্রবল হইচই করে অভিযোগ করেন, তিনিই নাকি ওই টিকিটের প্রকৃত ক্রেতা এবং তাঁর টিকিট অফিসের কিছু কর্মী ছিঁড়ে দিয়েছেন। উনি থানায় অভিযোগও করেছেন। আমাদের কাছে অবশ্য তিনি অভিযোগ করেননি। তবু আমরা তদন্ত করেছি। ওই ব্যক্তি টিকিটের কোনও ছেঁড়া অংশও আমাদের দেখাতে পারেননি।” কোনও জালিয়াতি চক্র এই ঘটনার পিছনে রয়েছে কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হবে বলে প্রশাসনের ওই শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন। |
|
|
|
|
|