|
|
|
|
কৌঁসুলির সওয়ালে প্রশ্ন বন্দি-মুক্তি নীতি নিয়েই |
রোশনী মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
রাজ্য সরকার নিযুক্ত বন্দি মুক্তি পর্যালোচনা (রিভিউ) কমিটি যাঁদের মুক্তির সুপারিশ করেছে, তাঁদেরই জামিনের আবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে দাঁড়িয়ে সওয়াল করেছেন সরকারি কৌঁসুলি! যিনি নিজেও আবার ওই বন্দি মুক্তি কমিটির সদস্য! ঘটনার জেরে প্রশ্ন উঠছে রাজ্য সরকারের বন্দি মুক্তির নীতি নিয়েই।
সরকারের বন্দি মুক্তি পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য জানাচ্ছেন, গত ১০ জানুয়ারি ওই কমিটির একটি বৈঠক হয়। সেখানে ১০ জন বন্দির মুক্তির জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত হয়। বন্দিদের নাম মধুসূদন মণ্ডল, শচীন ঘোষাল, সিদ্ধার্থ মণ্ডল, সঞ্জয় মণ্ডল, রাধেশ্যাম দাস, সুদীপ চোংদার, অখিল ঘোষ, বরুণ শূর, কল্পনা মাইতি এবং বিমল মল্লিক। তাঁদের মধ্যে শেষ পাঁচ জন মাওবাদী হিসাবে বন্দি রয়েছেন। কমিটির সদস্য হিসাবে রাজদীপ মজুমদার সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং ওই সিদ্ধান্তে তিনি আপত্তি জানাননি।
অথচ গত ৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে সরকারি কৌঁসুলি হিসাবে তিনি ওই পাঁচ মাওবাদীর জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন।
এই ঘটনায় যারপরনাই বিস্মিত বন্দি মুক্তি পর্যালোচনা কমিটির সদস্যদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, যে রাজদীপবাবু ওই কমিটির সদস্য হিসাবে ওই পাঁচ জন-সহ মোট ১০ জনের মুক্তির সুপারিশের সিদ্ধান্তের শরিক, তিনিই আবার সরকারি কৌঁসুলি হয়ে জামিনের আবেদনের বিরুদ্ধে সওয়াল করলেন কী ভাবে? বন্দি মুক্তি পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্যের কথায়, “সরকার ওই পাঁচ জনের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করতেই পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে অন্য কোনও আইনজীবী সরকারি কৌঁসুলি হতে পারতেন। এটা তো হাস্যকর হয়ে গেল!”
রাজদীপবাবুর অবশ্য দাবি, “আমি ওই মামলায় সরকারি কৌঁসুলি ছিলাম না। তা ছাড়া, বন্দি মুক্তি রিভিউ কমিটির এমন কোনও বৈঠকে আমি ছিলাম না, যেখানে মাওবাদীদের ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিটি কখনও কোনও মাওবাদীকে ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করেনি। করবে না।”
রাজদীপবাবুর বক্তব্য শুনে বন্দি মুক্তি পর্যালোচনা কমিটির ওই সদস্য পাল্টা দাবি করেন, “১০ জানুয়ারির বৈঠকে রাজদীপবাবু যে উপস্থিত ছিলেন এবং ওই ১০ জনকে ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেননি, তার প্রমাণস্বরূপ নথি আছে।”
সুদীপ, অখিল, বরুণ, কল্পনা এবং বিমল নামে ধৃত ‘মাওবাদী’দের হয়ে জামিনের আবেদন করেছিলেন আইনজীবী শুভাশিস রায়।
তিনিও রাজদীপবাবুর দাবি খারিজ করে বলেন, “রাজদীপ মজুমদার এবং দেবাশিস রায় দু’জন সরকারি কৌঁসুলি হিসাবে ওই পাঁচ জনের জামিনের আবেদনের বিরুদ্ধে সওয়াল করেছিলেন। কলকাতা হাইকোর্টে তার নথি আছে।”
এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে মানবাধিকার রক্ষা সংগঠন এপিডিআর। তাদের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে বলেছিলেন, বাম জমানার সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছেন না। এপিডিআরের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জিত শূরের অভিযোগ, “গত বছর স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে মুখ্যমন্ত্রী ৫২ জন রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। পরে তিনি জানান, চণ্ডী সরকার এবং প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় নামক মাওবাদী হিসাবে ধৃত দু’জনকে ছাড়ার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের আপত্তি থাকায় বাকি ৫০ জনকে মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে মুক্তি পেয়েছেন ২৫ জন। তাঁরা সকলেই কেএলও বা গ্রেটার কোচবিহারের সদস্য হিসাবে বন্দি ছিলেন।” |
|
|
|
|
|