|
|
|
|
লোডশেডিং নয়, গ্রীষ্মে উদ্বৃত্তের আশায় বিদ্যুৎকর্তারা |
পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
আশঙ্কা বদলে গেল আত্মবিশ্বাসে! আসন্ন গ্রীষ্মে দিনে বারো-চোদ্দো ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা করছিলেন রাজ্যের যে বিদ্যুৎ-কর্তারা, তাঁরাই এখন দাবি করছেন, গরমে লোডশেডিং তো হবেই না, উল্টে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকবে।
রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের তরফে সম্প্রতি এমনই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মহাকরণ-সূত্রের খবর: বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত এবং বিদ্যুৎ-সচিব মলয় দে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, আগামী গ্রীষ্মে দিনে-রাতে চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আগাম সব বন্দোবস্ত সেরে ফেলা হয়েছে। যান্ত্রিক বিভ্রাট না-ঘটলে নিতান্ত বিদ্যুতের অভাবে গরমে লোডশেডিং হওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা নেই বলেই মুখ্যমন্ত্রীকে ভরসা দিয়েছেন তাঁরা।
কিন্তু হঠাৎ কী এমন ঘটল যে, আশঙ্কা রাতারাতি ‘ভরসা’য় বদলে গেল? রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তার ব্যাখ্যা: ঘোষণা সত্ত্বেও এ বছর কোল ইন্ডিয়া-র কয়লার দাম এখনও তেমন বাড়েনি। উল্টে রাজ্য সরকার অনুমতি দেওয়ায় স্থগিত থাকা মাসুলবৃদ্ধি যেমন কাযর্কর করা গিয়েছে, তেমন গ্রাহকদের থেকে বাড়তি জ্বালানি খরচও (ফুয়েল সারচার্জ) নেওয়া হচ্ছে। ফলে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের আর্থিক সঙ্কট কিছুটা মিটেছে। তাই গ্রীষ্মে বাজার থেকে বিদ্যুৎ বা কয়লা কিনতে টাকার কোনও সমস্যা হবে না বলে তাঁরা আশাবাদী। “উপরন্তু এখন চাহিদা কম থাকায় লোডশেডিং করে ওই বিদ্যুৎ ভিন রাজ্যে দিয়ে সঞ্চয় করে রাখা হচ্ছে। গ্রীষ্মে তা ফেরত পাওয়া যাবে। এ ছাড়া স্বল্পমেয়াদি সময়ের জন্যও বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি হয়ে গিয়েছে।” বলেন ওই কর্তা। |
গরমে ভরসা |
|
কোথা থেকে |
* কতটা |
বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম |
৩০০০ |
পুরুলিয়া জলবিদ্যুৎ ও অন্যান্য |
৯৫০ |
বেসরকারি ছোট বিদ্যুৎ কেন্দ্র |
৫০ |
এনটিপিসি, এনএইচপিসি |
৬০০ |
ডিভিসি, বিদ্যুৎ সঞ্চয় ও আমদানি |
১২০০ |
* বিদ্যুৎ মেগাওয়াটে/প্রতিদিন সূত্র: বিদ্যুৎ দফতর |
|
বিদ্যুৎ-কর্তাদের দাবি: আসন্ন গ্রীষ্মে সিইএসসি অঞ্চল বাদ দিলে পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা হবে কম-বেশি ৪৮০০ মেগাওয়াট। পাশাপাশি তখন সিইএসসি-র গ্রাহকদের জন্য বণ্টন সংস্থাকে দিতে হবে রোজ প্রায় ছ’শো মেগাওয়াট। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৫৪০০ মেগাওয়াট। বণ্টন সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যের নিজস্ব উৎপাদন এবং অন্যান্য উৎস থেকে দৈনিক প্রায় ৫৮০০ মেগাওয়াট পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে দিনে প্রায় চারশো মেগাওয়াট উদ্বৃত্ত থাকবে বলে কর্তাদের দাবি।
এবং এই হিসেবের ভিত্তিতেই মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা ‘আশা’র কথা শুনিয়েছেন। বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান, গ্রীষ্মে কয়লার অভাবে যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাঘাত না-ঘটে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সঙ্গে তিনি ইতিমধ্যে কথা বলে রেখেছেন। তাঁর দাবি, গরমে মানুষ ঠিকই বিদ্যুৎ পাবেন। যদিও বণ্টন সংস্থার কর্তাদের একাংশ এ ব্যাপারে অতটা নিশ্চিত নন। তাঁদের বক্তব্য: মার্চের মধ্যে বণ্টন সংস্থার গ্রাহকসংখ্যা কোটি ছাড়াবে। ফলে চাহিদা আরও বাড়বে। তাই আগাম যাবতীয় ব্যবস্থা নিলেও গ্রীষ্মে কিছু না কিছু বিদ্যুৎ ঘাটতির সম্ভাবনা দেখছে এই মহল। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর: ২০১১-র ফেব্রুয়ারিতে কোল ইন্ডিয়া’র কয়লার দাম অনেকটা বেড়েছিল। যে কারণে বিদ্যুতের মাসুল ও ফুয়েল সারচার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব ওঠে। কিন্তু রাজ্যের নতুন সরকার তাতে সায় না-দেওয়ায় চলতি অর্থবর্ষের (২০১১-১২) গোড়া থেকে বণ্টন সংস্থা পড়ে যায় প্রবল আর্থিক সঙ্কটে। ধারে কয়লা কিনতে গিয়ে কোল ইন্ডিয়ার কাছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমেরও অন্তত ন’শো কোটি টাকা দেনা হয়েছে। তবে সরকার সম্প্রতি ইউনিটপিছু ৪৪ পয়সা মাসুল ও ৩৮ পয়সা ফুয়েল সারচার্জ বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়ায় বণ্টন সংস্থার বিদ্যুতের দর ইউনিটপিছু ৪ টাকা ২৭ পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ৯ পয়সা। এতে সংস্থার মাসিক আয় প্রায় দেড়শো কোটি টাকা বেড়েছে। নিগমের আয় বেড়েছে মাসে ৬০-৬৫ কোটি টাকা। পরিস্থিতির উন্নতি দেখে ব্যাঙ্কগুলোও এখন ঋণদানে আগ্রহী বলে বিদ্যুৎ-কর্তাদের দাবি।
আর এ সবের ভরসাতেই গরমে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের আশ্বাস দিচ্ছেন তাঁরা। |
|
|
|
|
|