|
|
|
|
রাজ্য কমিটি |
নারাজ বুদ্ধদেব, তবু থাকতে পারেন লক্ষ্মণ |
প্রসূন আচার্য • কলকাতা |
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রবল আপত্তি। তবুও ‘তৃণমূলের সন্ত্রাস’ এবং ‘মিথ্যা মামলা’ এই দুই বিষয়কে সামনে রেখেই শেষ পর্যন্ত রাজ্য কমিটিতে থেকে যেতে পারেন বিতর্কিত লক্ষ্মণ শেঠ।
পূর্ব মেদিনীপুরের লক্ষ্মণবাবু এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষক নেতা তরুণ রায় ‘পলাতক’ থাকার কারণেই এ বারের রাজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে পারেননি। দল যখন শুদ্ধকরণের পথে হাঁটছে, তখন লক্ষ্মণবাবুর মতো বিতর্কিত নেতাকে রাজ্য কমিটিতে রাখায় প্রবল আপত্তি রয়েছে বুদ্ধবাবুর। কিন্তু
প্রতিনিধিরা যে ভাবে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ব্যর্থতার জন্য বুদ্ধবাবুর সরকারের দিকে আঙুল তোলার পাশাপাশি তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’ নিয়ে মুখ খুলছেন, তাতে লক্ষ্মণ ও তরুণবাবু দু’জনেরই এ বারও রাজ্য কমিটিতে থাকার সম্ভবনা। সম্প্রতি সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট এক নির্দেশে দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, যাঁরা সন্ত্রাসের কারণে ঘরছাড়া বা পলাতক, তাঁদের কোনও কমিটি থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। এই নির্দেশও লক্ষ্মণবাবুর পক্ষেই যাচ্ছে। তাই তাঁকে জেলা কমিটিতেও রাখা হয়েছে। ‘বীরের মর্যাদা’ পাওয়া জামিনে মুক্ত সুশান্ত ঘোষেরও রাজ্য কমিটিতে স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, শেষ পর্যন্ত কারাটের সঙ্গে কথা বলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে আলিমুদ্দিন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক প্রভাবশালী সদস্যের কথায়, “শনিবার রাজ্য কমিটি গঠিত হবে। তার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা মনে করি, তিন জনের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে বর্তমান রাজ্য সরকার। এই পরিস্থিতিতে লক্ষ্মণ ও তরুণবাবুকে রাজ্য কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার প্রশ্ন উঠছে কেন?” লক্ষ্মণ এবং তরুণবাবুকে রেখে সুশান্তকে রাজ্য কমিটিতে নেওয়ার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই ‘চাপ’ সৃষ্টি করেছেন দুই জেলার নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, তিন নেতাই তৃণমূলের সন্ত্রাসের শিকার। তাঁদের পার্টি উপযুক্ত মর্যাদা না দিলে নিচুতলার কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে।
আর এক বিতর্কিত নেতা, রাজ্য কমিটির সদস্য আরামবাগের অনিল বসুর ব্যাপারে অবশ্য রাজ্য নেতৃত্ব এতটা ‘নরম’ নয়। সুদর্শন রায় চৌধুরীকে জেলা সম্পাদক করার পর থেকেই অনিলবাবু রাজ্য পার্টির সঙ্গে ‘দূরত্ব’ বজায় রাখছেন। কেন অনিলবাবু পর পর দু’দিন সম্মেলনে এলেন না? সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তীর জবাব, “শুনেছি তাঁর শরীর খারাপ।” শ্যামলবাবু আরও বলেন, “শুধু অনিলবাবু কেন, বেশ কয়েক জনই তো নানা কারণে সম্মেলনে যোগ দিতে পারেনি। তাঁদের নিয়ে তো কেউ কথা বলছেন না!” পূর্ব মেদিনীপুরের আর এক নেতা অশোক গুড়িয়াও ‘পলাতক’ থাকার কারণে এ বার সম্মেলনে যোগ দিতে পারেননি।
কী ভাবে তাঁরা সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন, কত জন ঘরছাড়া বা পলাতক, তা নিয়ে সম্মেলনে বিস্তারিত রিপোর্ট করেন দুই জেলার প্রতিনিধিরা। পরে শ্যামলবাবু বলেন, “পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৮৫টি মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। তার মধ্যে কঙ্কাল-কাণ্ডে ১৬টি মামলা করা হয়েছে। তিন হাজার পার্টি কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১০০ জনকে। যাতে পার্টি মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, তার জন্য মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে।”
পূর্ব মেদিনীপুরে এক হাজারেরও বেশি মামলায় সিপিএমের ৩১৪ জন জেল খাটছেন। অভিযুক্ত বা আসামী করা হয়েছে ১৫ হাজার ৩৪৫ জনকে। এই তালিকায় অন্যতম লক্ষ্মণ শেঠ। শ্যামলবাবু বলেন, “এই জেলায় সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের থেকে ৬১৪ একর জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। জরিমান আদায় করা হয়েছে ৪ কোটি টাকা।” পূর্ব মেদিনীপুরের প্রতিনিধিরা মনে করেন, তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লক্ষ্মণবাবু চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন বলেই তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বও সে কথা মেনে নিয়েছে। |
|
|
|
|
|