আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতি কতটা
গ্রহণযোগ্য, বিতর্ক দলে
নভিত্তি বাড়াতে জাতিসত্তার আত্মপরিচয়কে কতটা প্রাধান্য দেওয়া উচিত, তা নিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
প্রতিনিধিদের একাংশের মত, জাতিসত্তার আত্মপরিচয়কে স্বীকৃতি না দেওয়ায় হিন্দি-বলয় তো বটেই, এ রাজ্যেও পাহাড়-জঙ্গলমহল থেকে সিপিএমের পায়ের তলার মাটি ক্রমে সরে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়া পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। এই অবস্থায় পরিচিতিসত্তার আন্দোলন থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখলে আখেরে দলের বড় ক্ষতি হবে।
এই মতের বিরোধীও রয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, লালুপ্রসাদ, মুলায়ম সিংহ থেকে শুরু করে দার্জিলিংয়ে বিমল গুরুঙ্গরা যা পারেন, কমিউনিস্ট দল হিসেবে সিপিএম তা পারে না। তাঁদের দাবি, আত্মপরিচয়ের রাজনীতির পরিবর্তে শ্রেণির আন্দোলনকেই তুলে ধরে এগোতে হবে।
বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্যে আত্মপরিচয় বা পরিচিতিসত্তার আন্দোলন হচ্ছে। একে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। পরিচিতিসত্তার আন্দোলনের মধ্যে যে গণতান্ত্রিক উপাদান রয়েছে, তা যথোপযুক্ত বা ন্যায়সঙ্গত হলে আমরা তার পাশে থাকব।” এ কথা বলার পরেও শ্যামলবাবুর মন্তব্য, “গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলন কোনও পরিচিতিসত্তার আন্দোলন নয়। জঙ্গলের আদিবাসীদের মধ্যেও নানা ভাগ আছে। কেউ কোনও আন্দোলন করলেই তার পাশে দাঁড়াতে হবে, তার কোনও মানে নেই। পরিচিতিসত্তার সেই আন্দোলনে যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁর ভূমিকা কী তা দেখতে হবে।”
দলীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, সিপিএম গোর্খাদের আত্মপরিচয়ের আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিলে পৃথক তেলেঙ্গানা আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিতে হবে। যা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু বিষয়টি থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখলেও সিপিএম প্রাসঙ্গিকতা হারাবে। এই পরিস্থিতিতে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টায় নেমেছেন দলীয় নেতৃত্ব।
পৃথক গোর্খাল্যান্ডের বিরোধিতা করলেও পাহাড়ের মানুষের আত্মপরিচয়ের আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিয়ে দার্জিলিং জেলার সম্মেলনে দলিল পেশ করা হয়েছিল। বিতর্কের শুরু তখন থেকেই। পার্টি কংগ্রেসে দলের রাজনৈতিক খসড়া রিপোর্টে আত্মপরিচয়ের রাজনীতি নিয়ে পৃথক অনুচ্ছেদ রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘জাত, ধর্ম, জাতি ও উপজাতির ভিত্তিতে আত্মপরিচয়ের রাজনীতি ক্রমেই বাড়ছে। এ ভাবে মানুষকে ভাগ করার নীতি বুর্জোয়া ও সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ পূরণ করে। তাই আত্মপরিচয়ের রাজনীতি বামপন্থীদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ’। শ্রেণি আন্দোলনকে দুর্বল করতে বিভিন্ন সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এ সবের পিছনে অর্থ ব্যয় করছে, এই অভিযোগ তুলে খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘শ্রেণি আন্দোলনকে গুরুত্ব দিয়ে পরিচিতিসত্তার আন্দোলনের মোকাবিলা করতে হবে’।
বুধবার সম্মেলনের উদ্বোধন করে প্রকাশ কারাট বলেন, পশ্চিমবঙ্গের নতুন সরকার জাত ও ধর্ম ভিত্তিক আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এর মোকাবিলায় নিম্নবর্গ ও সংখ্যালঘুদের সামাজিক শোষণের সঙ্গে অর্থনৈতিক আন্দোলন যুক্ত করে শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
কারাটের কথার সূত্র ধরেই দার্জিলিং, পুরুলিয়া-সহ একাধিক জেলার প্রতিনিধিরা বলেন, পরিচিতিসত্তার আন্দোলন থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখলে দলের বড় ক্ষতি হবে। এর বিরোধিতা করে উত্তর ২৪ পরগনার এক প্রতিনিধি বলেন, দল আত্মপরিচয়ের আন্দোলনকে গুরুত্ব দিলে শ্রেণি আন্দোলন গুরুত্ব হারাবে। যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও দলে মুসলিম, তফসিলি জাতি, উপজাতির মানুষকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। উচ্চবর্ণ হওয়ায় যোগ্যদের বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। যা কমিউনিস্ট পার্টিতে কাম্য নয়। তাঁকে সমর্থন করেন আরও কয়েক জন। বিতর্ক চলছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.