চোখের সামনে পথ দুর্ঘটনায় কিশোর পুত্রকে মারা যেতে দেখেও ‘সামাজিক কর্তব্য’ ভুললেন না বসিরহাটের উত্তর বাগুন্ডি গ্রামের তপনকুমার সাঁতরা। দুর্ঘটনার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে মৃত ছেলে স্নিগ্ধদীপ সাঁতরার (১৪) চোখ দু’টি দান করলেন।
তপনবাবুর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর। মরণোত্তর চক্ষুদান নিয়ে সরকারি এবং বেসরকারি স্তরে প্রচার চলে। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরেরই বক্তব্য, এখনও সে ভাবে সচেতনতা গড়ে তোলা যায়নি। মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত পাণ্ডে বলেন, “এটা অভিনন্দনযোগ্য প্রয়াস। সকলের মধ্যে এই সচেতনতা দেখা দিলে অনেক দৃষ্টিহীন মানুষ দৃষ্টি ফিরে পাবেন। তপনবাবুকে ধন্যবাদ।” রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি-র অধিকর্তা গৌতম ভাদুড়ি বলেন, “পুত্রহারা বাবার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্নিগ্ধদীপ বসিরহাট হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। তপনবাবু হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক। কদমতলায় টাকি রোডের ধারে তাঁর ক্লিনিক। এ দিন ক্লিনিকে বাবার থেকে টিফিনের টাকা নিয়ে সাড়ে ১০টা নাগাদ স্কুলে যাচ্ছিল স্নিগ্ধদীপ। রাস্তা পেরনোর জন্য স্নিগ্ধদীপ সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই সময়ে হাসনাবাদমুখী একটি লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা মারে। তার পরে পিষে দেয় স্নিগ্ধদীপকে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এর পরে তপনবাবু ছেলের চোখ দু’টি দান করার সিদ্ধান্ত নেন। যোগাযোগ করেন বসিরহাটের সেবায়ন চক্ষুদান কেন্দ্রের সঙ্গে। এর পরে পুলিশের উপস্থিতিতে বসিরহাট হাসপাতালে সেবায়নের চিকিৎসক স্নিগ্ধদীপের চোখ দু’টি তুলে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
তপনবাবুর দুই ছেলের মধ্যে স্নিগ্ধদীপ বড়। ছেলেকে হারিয়ে কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না তপনবাবু বা তাঁর স্ত্রী মমতাদেবী। স্নিগ্ধদীপের পিসি অনিতাদেবী বলেন, “ওকে আর ফিরে পাব না। ওর চোখ দিয়ে যাতে কেউ দেখতে পায়, সেই কারণেই চক্ষুদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
চোখ সংগ্রহের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে পুলিশ স্নিগ্ধদীপের দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠায়। রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি-র কর্তাদের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে চক্ষুদানের ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু পুলিশের অসহযোগিতায় সেই কাজ সহজে হয় না। গৌতমবাবু বলেন, “এ দিনের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা ভাল ছিল।”
এ দিকে, দুর্ঘটনার পরে স্কুলের ব্যস্ত সময়ে ওই রাস্তা দিয়ে লরি চলাচল বন্ধের দাবি তুলে কিছু ক্ষণের জন্য অবরোধ করে জনতা। পুলিশ গেলে ঘেরাও করা হয়। পরে অবশ্য পুলিশ ও জনতা লরিটিকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে। গ্রেফতার করা হয় লরি-চালককে। ওই এলাকা দিয়ে স্কুলের সময়ে লরি-ট্রাকের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণের দাবি তোলেন স্নিগ্ধীপের স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন রায় এবং ছাত্রছাত্রীরা। তাঁরা হাসপাতালেও যান। পুলিশ দাবির বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে। |