|
|
|
|
নন্দীগ্রামে অস্বস্তি শাসকদলের |
দুর্নীতির নালিশ খোদ তৃণমূল পূর্ত-কর্মাধ্যক্ষের |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
নন্দীগ্রামে তারাই একচ্ছত্র ক্ষমতায়। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতিসবেতেই নিরঙ্কুশ। বিরোধীহীন সেই নন্দীগ্রামে শাসক তৃণমূলের ‘কাজকর্ম’ নিয়ে একের পর এক অভিযোগ উঠছে দলের ভিতর থেকেই। গ্রামোন্নয়নের কাজে ‘ব্যর্থতা’, ‘দুর্নীতি’ নিয়ে তৃণমূল নেতারাই একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলছেন।
এ বার ‘বোমা’ ফাটিয়েছেন নন্দীগ্রামে তৃণমূলের তথা জমি-রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম ‘প্রধান মুখ’ শেখ সুফিয়ান। যিনি আবার তৃণমূল-শাসিত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষও। জেলা পরিষদের বরাদ্দ অর্থে নন্দীগ্রামে রাস্তা সংস্কারের কাজে দুর্নীতি হচ্ছে বলে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে তিনটি রাস্তার মোরাম দিয়ে সংস্কারের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও স্থানীয় বেনিফিসিয়ারি কমিটিকে এড়িয়ে তার পরিমাপ করা হয়েছে বলে জেলা পরিষদের অতিরিক্ত নির্বাহী আধিকারিক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন সুফিয়ান। নিজের দফতরের তত্ত্বাবধানে থাকা এই সব রাস্তার কাজে দুর্নীতির পিছনে দফতরেরই আধিকারিক ও ঠিকাদারদের ‘অবৈধ আঁতাতে’র অভিযোগ করেছেন তিনি।
জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের তোলা এই দুর্নীতির অভিযোগ দলে গোষ্ঠীকোন্দলের পরিণতি বলেও ব্যাখ্যা করছেন তৃমমূলেরই একাংশ। নন্দীগ্রামে পূর্ত দফতর-সহ জেলা পরিষদের বিভিন্ন দফতরের কাজে নিজের ঘনিষ্ঠ লোকজনকে ‘বরাত’ পাইয়ে দেওয়া নিয়ে সুফিয়ানের সঙ্গে ব্লকেরই আরেক নেতা আবু তাহেরের ‘ঠান্ডা লড়াই’ এখন আর গোপন বিষয় নয়। তাহের-ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, জেলা পরিষদের টেন্ডার-প্রক্রিয়ায় ওই সব রাস্তার কাজে নিজের ঘনিষ্ঠ লোকজন বরাত না-পাওয়াতেই পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুফিয়ান এখন নানা অজুহাতে কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এই চাপানউতোরে প্রবল অস্বস্তিতে পড়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সংবাদমাধ্যমে সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি তাহেরও।
সুফিয়ানের অভিযোগ, নন্দীগ্রামের তেখালি বাজার থেকে জামবাড়ি, হরিপুর থেকে চম্পাইনগর এবং মারিচদাণ্ডা অ্যাপ্রোচ রোড--এই রাস্তাগুলির সংস্কারের কাজে যে মোরাম ব্যবহার করা হচ্ছে তা ধুলোমাটির মতো এবং কাজের জন্য ব্যবহৃত মোরাম পরিমাপের সময়ে নিয়মানুযায়ী বেনিফিসিয়ারি কমিটির সদস্যদেরও ডাকা হয়নি। তাঁর আরও অভিযোগ, ওই রাস্তাগুলির সংস্কার-কাজের সামগ্রী খতিয়ে দেখতে জেলা পরিষদের গ্রামীণ সড়ক বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার-সহ একটি দল গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও ওই সব ‘নিম্নমানের’ সামগ্রী ব্যবহার করেই রাস্তার কাজ করা হচ্ছে। নন্দীগ্রামে ওই তিনটি রাস্তা সংস্কারের কাজে দুর্নীতির তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা পরিষদের অতিরিক্ত নির্বাহী আধিকারিকের কাছে গত ১৭ জানুয়ারি লিখিত অভিযোগ করেছেন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুফিয়ান।
গত রবিবারই নন্দীগ্রামের গোকুলনগর পঞ্চায়েতের তৃণমূলের এক মহিলা সদস্যকে মারধর ও গালিগালাজের অভিযোগ উঠেছিল পঞ্চায়েত সমিতির দলীয় কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধেই। একশো দিনের প্রকল্পে রাস্তা তৈরির কাজে ‘দুর্নীতি’ হচ্ছেএই অভিযোগকে কেন্দ্র করেই ওই দিন তৃণমূলের গোষ্ঠী-বিবাদের সূত্রপাত হয় গোকুলনগরের কেশবপুর গ্রামে। সঞ্চয়িতা দাস নামে ওই তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য থানায় পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা দলীয় নেতা স্বদেশ দাসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তার কয়েক দিন আগেই নন্দীগ্রাম-১ ব্লকেরই কালীচরণপুরে একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের সহায়িকা নিয়োগে ‘অনিয়ম’ ধরা পড়ায় বিডিও ওই নিয়োগ বাতিল করেছিলেন। ওই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ব্লকের দশটি পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল জন-প্রতিনিধিরা বিডিও-র ডাকা উন্নয়ন-বৈঠক পর্যন্ত বয়কট করেন। বিডিও-কে ঘেরাও করে রেখে ব্লক অফিস চত্বরে অবস্থান-বিক্ষোভও করেন তাঁরা। পরের পর ঘটনায় দলের বিবাদ প্রকাশ্যে আসায় এবং প্রতি ক্ষেত্রে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ জুড়ে যাওয়ায় ক্রমেই বিড়ম্বনা বাড়ছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের। |
|
|
|
|
|