|
|
|
|
অনটন জয় করেই জাতীয় স্কুল গেমসে সফল দুই ভাই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পূর্বস্থলী |
খেতমজুরের কাজ করে সংসার চালান বাবা। কিছু দিন আগে পর্যন্ত টালির চালের এক চিলতে ঘরই ছিল মাথা গোঁজার জায়গা। দারিদ্র অবশ্য দমিয়ে রাখতে পারেনি গিয়াসউদ্দিন ও কুতুবউদ্দিনের লড়াই। পরপর তিন বার জাতীয় স্কুল গেমসের জিমন্যাস্টিকে পদক জিতে পূর্বস্থলীর এই দুই ভাই এখন দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখছে।
পূর্বস্থলী ২ ব্লকের খালেখাঁতলা পঞ্চায়েতের বাবুইডাঙা গ্রামে বাড়ি নুর ইসলাম শেখের। দুই ছেলে গিয়াসউদ্দিন ও কুতুবউদ্দিন প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে নীলমনি ব্রহ্মচারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। প্রথম জন এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে। ছোট ছেলে কুতুবউদ্দিন নবম শ্রেণিতে পড়ে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কলকাতার সাই কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্কুল গেমসে জিমন্যাস্টিকের অ্যাক্রোবাইট বিভাগে সেরা হয়েছে দু’জনে। তবে এ বারই প্রথম নয়, এর আগেও দু’বার এই প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়েছে তারা। |
|
নিজস্ব চিত্র |
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ছোটবেলা থেকেই জিমন্যাস্টিকে ঝোঁক দুই ভাইয়ের। তাদের আগ্রহ দেখে বছর আটেক আগে নুর ইসলাম ভর্তি করে দেন নবদ্বীপ দেহসৌষ্ঠব ক্লাবে। সেখানে দুই কোচ রতনলাল সাহা ও অভিজিৎ দেবনাথের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ শুরু। ২০০৮ সালে চণ্ডীগড়ে আয়োজিত জাতীয় স্কুল গেমসে অ্যাক্রোবাইটে প্রথম হয় তারা। পরের বছর মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে ওই প্রতিযোগিতায় একই বিভাগে দ্বিতীয় হয় তারা। তার পরের বছর প্রতিযোগিতাটি বন্ধ ছিল। ২০১১-২০১২ বর্ষের প্রতিযোগিতাটি হয় কলকাতা সাই কেন্দ্রে। সেখানে আবার শীর্ষস্থান দখল করে দু’জন। এ বারের প্রতিযোগিতায় দেশের ১৫টি রাজ্য থেকে এসেছিলেন প্রতিযোগীরা।
পরপর সাফল্যে খুশি দুই ভাই। তাদের কথায়, “অনটনের মধ্যেও বাবা-মা আমাদের প্রেরণা দিয়েছেন। এখন আমাদের স্বপ্ন, দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা।” আনন্দের পাশাপাশি রয়েছে আফশোসও। তারা জানায়, দু’জনের মিলিত চেষ্টায় এসেছে এই সাফল্য। কিন্তু পরের বার গিয়াসুদ্দিন আর স্কুলে থাকবে না। ফলে স্কুলভিত্তিক প্রতিযোগিতায় আর এক সঙ্গে যোগ দেওয়া হবে না দু’জনের।
ছেলেদের সাফল্যে খুশি নুর ইসলামও। পঞ্চায়েতের তরফে কিছু দিন আগে ইন্দিরা আবাস যোজনার বাড়ি পেয়েছেন তাঁরা। নুর ইসলাম বলেন, “আমার সাধ আছে, কিন্তু সাধ্য নেই। কিন্তু নিজেদের জেদে ওরা এগিয়েছে।” স্থানীয় বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দারিদ্রকে জয় করে ওদের এমন সাফল্য অন্য পড়ুয়াদের উদ্বুদ্ধ করবে। পরিবারটিকে সাধ্য মতো সাহায্যের চেষ্টা করা হবে।”
|
|
|
|
|
|