হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে রাত ১০টার পরে সরকারি অনুষ্ঠানে মাইক বাজানো নিয়ে শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের নানা এলাকায় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসন ও শাসক দলের নেতা-কর্তাদের সামনেই শব্দ বিধি ভাঙা হচ্ছে দেখে বাসিন্দাদের মধ্যে হতাশাও বাড়ছে। তারই মধ্যে অবশ্য আশার আলো দেখছেন বাসিন্দারা। কারণ, বুধবার রাতে উত্তরবঙ্গের দুটি এলাকায় শাসক দলের বিধায়ক ও মহকুমা প্রশাসনের এক অফিসার কঠোর মনোভাব দেখানো মাইক খুলে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন উদ্যোক্তারা। ওই দুটি ঘটনার কথা সামনে রেখে অন্যত্রও শাসক দলের জনপ্রতিনিধি, পুলিশ-প্রশাসনকে শব্দ বিধি মানার জন্য উদ্যোগী হওয়ার আর্জি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। যে দুটি ঘটনা নিয়ে বাসিন্দারা কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন তার একটি ঘটেছে শিলিগুড়িতে। বুধবার রাতে শিলিগুড়ি পুরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের দেশবন্ধুপাড়ায় উত্তরবঙ্গ উৎসব উপলক্ষ্যে ভলিবল টুর্নামেন্ট হয়। সেখানে অন্যতম আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক তথা শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এসজেডিএ) চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। রাত ১০টার পরেও টুর্নামেন্ট চলছিল। সেখানে চারদিকে বেশ কয়েকটি মাইকে চড়া সুরে গান হচ্ছিল। |
টুর্নামেন্ট কমিটি সূত্রের খবর, রুদ্রনাথবাবু জানিয়ে দেন, রাত ১০টার পরে জনবহুল এলাকায় মাইক বাজানো যাবে না বলে হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। সে জন্য সব কটি মাইক তিনি বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দেন। এমনকী, মাইক বন্ধ না-হলে তিনি অনুষ্ঠান স্থল ছেড়ে চলে যাবেন বলেও রুদ্রনাথবাবু সাফ জানিয়ে দেন বলে কমিটি সূত্রের খবর। তার পরে খেলার ফল ঘোষণার জন্য মাঠের মধ্যে থাকা একটি মাইক চালু রেখে বাকিগুলি বন্ধ করে দেন উদ্যোক্তারা। বিধায়কের পরামর্শে ওই মাইকটির আওয়াজও কমিয়ে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিধায়ক বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে। সেটা তো মানতেই হবে। উদ্যোক্তাদের তা বলায় তাঁরা মেনে নিয়েছেন। তাতে সকলেই খুশি।” ওই এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর স্বপন দাস জানান, সকলেরই শব্দ বিধি মানা উচিত। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুরদুয়ারে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর আযোজিত চা বাগিচা ও আদিবাসী উৎসব। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ডুয়ার্সের শামুকতলার সাঁওতালপুর মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ে সংলগ্ন মাঠে উৎসব শুরু হয়। চারদিনের অনুষ্ঠানে আদিবাসী, লোকসঙ্গীতের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বাংলা ব্যাণ্ডের গান হয়। বুধবার রাত ১০টার পরে মাইক বাজানোর চেষ্টা হলে তাতে বাধা দেন মহকুমাশাসক অমলকান্তি রায়। সে জন্য কয়েকটি আদিবাসী দল অনুষ্ঠান করতে পারেনি। পরে তাদের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন মহকুমাশাসক। সরকারি সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ উৎসব সহ নানা সরকারি অনুষ্ঠানে গভীর রাত পর্যন্ত মাইক বাজানো নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের বিষয়টি মহাকরণেও পৌঁছেছে। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে কোথাও যাতে রাত ১০টার পরে মাইক না-বাজানো হয় সেটা নিশ্চিত করতে পুলিশ-প্রশাসনকে মহাকরণ থেকে সতর্ক করা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। কিন্তু, জনপ্রতিনিধি, মন্ত্রী রাত ১০টার পরে অনুষ্ঠানে থাকলে কী ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব, সেই প্রশ্নেই পুলিশ মহলে চলছে জল্পনা। |