আদালতের নির্দেশ মেনে রাজ্য সরকার আবার শুরু করতে চলেছে ১৫ বছরের পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিলের প্রক্রিয়া। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট এক নির্দেশে রাজ্যকে জানায়, ১৫ বছর বা তার বেশি পুরনো সব বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিল করে আদালতকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। গোটা প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য রাজ্যের হাতে আর ছ’সপ্তাহ মতো সময় রয়েছে।
আদালতের ওই নির্দেশ প্রসঙ্গে মদনবাবু বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কার্যকর করা হবে। তার আগে এর আইনি দিকগুলিও খতিয়ে দেখতে হবে। আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করা হচ্ছে।” ২০০৮-এর ১৯ জুলাই কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকায় চলে এমন ১৫ বছরের পুরনো সব বাণিজ্যিক যান বাতিল করার নির্দেশ দেয় আদালত। পরবর্তী ছ’মাস ধরে পাবলিক ভেহিকলস্ দফতর ১৫ বছরের পুরনো সমস্ত বাণিজ্যিক গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়। তার ফলে ওই সময়ে কয়েক হাজার বাস, ট্যাক্সি, লরি ইত্যাদি বাতিল হয়ে যায়।
কিন্তু হাইকোর্টের ওই নির্দেশ নিয়ে ভয়ানক আপত্তি তুলেছিলেন তদানীন্তন পরিবহণমন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী। তাতে অবশ্য বিশেষ কাজ হয়নি। ১৫ বছরের পুরনো সব বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিল হয়। কিন্তু পরিবহণ দফতর তখন হাইকোর্টের রায়কে পুরনো গাড়ি বাতিলের এককালীন নির্দেশ হিসেবে ব্যাখ্যা করে। পরে গাড়ি বাতিলের ওই প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। |
অথচ পরিবেশ দফতরের পক্ষ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে ওই নির্দেশের ব্যাখ্যা চেয়ে আবেদন করলে আদালত জানিয়ে দেয়, গাড়ি ১৫ বছরের পুরনো হলেই বাতিল হবে। কিন্তু সেই ব্যাখ্যাও গ্রহণ করেনি পরিবহণ দফতর। সুভাষবাবুর মৃত্যুর পরে রঞ্জিত কুণ্ডু পরিবহণমন্ত্রী হলেও আগের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে। ১৫ বছর এবং তারও বেশি পুরনো বাস, ট্যাক্সি, লরি বাড়তেই থাকে কলকাতা ও শহরতলিতে। অবশ্য এই নিয়ে ইদানীং পরিবেশ দফতর বা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ পুরনো গাড়ি বাতিলের ব্যাপারে আর কোনও ভাবেই উদ্যোগী হয়নি।
সম্প্রতি পরিবহণ সচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকা জানিয়েছিলেন, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অবশ্যই ধারাবাহিক ভাবে কার্যকর করতে হবে। প্রতি বছরই বহু গাড়ির বয়স ১৫ বছর পেরোচ্ছে। তাদের বাতিল করতেই হবে। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, তা হলে কেবল ২০০৮ সালে কিছু গাড়িকে পরিবেশের বলি করা হল কেন? এর পরে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত এই ব্যাপারে হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আদালত জানিয়ে দেয়, রাজ্য সরকারকে ১৫ বছরের পুরনো সমস্ত বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিল করে সেই রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে। পুরনো গাড়ি বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হলে কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজারেরও বেশি বাস এবং ট্যাক্সি বাতিল হবে।
তার ফলে গণ-পরিবহণ নিয়ে সাময়িক সমস্যারও সৃষ্টি হতে পারে। সেই দিকটিও ভাবতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। তবে পুরনো গাড়ি বাতিল নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকায় হতাশ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁরই দায়ের করা কলকাতার বায়ুদূষণ সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলার জেরে পুরনো গাড়ি বাতিলের নির্দেশ দেয় আদালত। সুভাষবাবু বলেন, “পরিবর্তনের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে গত আট মাসে একটি গাড়িও বাতিল হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুরনো গাড়ি বাতিল না হলে তা হবে আদালত অবমাননা।” এই বিষয়টিও আদালতকে স্মরণ করিয়ে দেবেন সুভাষবাবু। তিনি জানান, পুরনো গাড়ি বাতিল হওয়ার পরে সেগুলি মফস্সলে চলে যায়। ইঞ্জিনের নম্বর বদলে নতুন গাড়ি হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে রাস্তায় নামে ওই গাড়িগুলি। মফস্সলের যান-দূষণ নিয়েও আদালত এ বার রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে।
কিন্তু তার আগে দূষণকারী পুরনো সব গাড়ি বাতিল শুরু করতে হবে রাজ্যকে। |