সলমন খুরশিদের পরে এ বার বেণীপ্রসাদ বর্মা। উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনী প্রচারে সংখ্যালঘু সংরক্ষণের পক্ষে সওয়াল করে ফের বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন কংগ্রেসের আরও এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এবং সেই ফারুকাবাদেই।
আজ অবশ্য দলের পক্ষ থেকে গোটা বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু পরপর দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর একই ধরনের মন্তব্যকে পরিকল্পিত নির্বাচনী রণকৌশল বলে বিজেপির পক্ষ থেকে আক্রমণ শানানো হয়েছে। কেন্দ্রে জোট সঙ্গী হলেও উত্তরপ্রদেশে প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলও এ ভাবে সংখ্যালঘু তোষণের আজ কড়া সমালোচনা করে। দলের পক্ষ থেকে বিষয়টি রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে অভিযোগ করার পাশাপাশি অবিলম্বে কেন্দ্রীয় ইস্পাতমন্ত্রী বেণীপ্রসাদ বর্মাকে উত্তরপ্রদেশে ভোটের প্রচার থেকে সরনোর জন্য আগামিকাল কমিশনকে চিঠি দিচ্ছেন তৃণমূল সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় পর্যটন প্রতিমন্ত্রী সুলতান আহমেদ।
অথচ, গত মঙ্গলবারই নির্বাচন কমিশনের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে সংখ্যালঘু সংরক্ষণ বিতর্কের ইতি টেনেছিলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। কিন্তু গত কাল ফারুকাবাদে দলের সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ ও সলমনের উপস্থিতিতেই কার্যত কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর বিতর্কিত বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন বেণীপ্রসাদ। তিনি বলেন, “উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে পিছিয়ে পড়া মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণ বাড়ানো হবে। এই মন্তব্যের জন্য নির্বাচন কমিশন চাইলে আমায় নোটিস পাঠাতে পারে।”
বেণীপ্রসাদ বর্মা |
ফারুকাবাদ কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছেন সলমন খুরশিদের স্ত্রী লুইস। এর আগে স্ত্রীর হয়ে প্রচারেই বিতর্কিত মন্তব্য করে সমস্যায় পড়েছিলেন সলমন। জল গড়ায় রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত। পরে দুঃখপ্রকাশ করায় নির্বাচন কমিশন বিষয়টিতে ইতি টেনে দেয়। কিন্তু সলমনের দুঃখপ্রকাশের পরপরই ফের কংগ্রেসের আর এক নেতা একই ধরনের মন্তব্য করায় নতুন করে জলঘোলা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিল। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই ওই নির্বাচনী সভার ভিডিও ক্যাসেট সংগ্রহ করেছে। আজ কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা ওই বক্তব্য খতিয়ে দেখছেন। তার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন চলাকালীন কংগ্রেস শীর্ষ শিবির বারবার সংখ্যালঘু সংরক্ষণের বিষয়টি প্রচারে তুলে আনায়, গোটা বিষয়টির মধ্যে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে বলে মনে করছে বিরোধীরা। নির্বাচন কমিশন সলমনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা সত্ত্বেও যে ভাবে বেণীপ্রসাদ ফের একই মন্তব্য করেছেন, তা কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সবুজ সঙ্কেত ছাড়া সম্ভব নয় বলেই মনে করা হচ্ছে।
যদিও বেণীপ্রসাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সরাসরি স্বীকার না করে কংগ্রেস নেত্রী অম্বিকা সোনী আজ বলেন, “দলের নির্দেশ রয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার। তবে বেণীপ্রসাদ ঠিক কোন পরিপ্রেক্ষিতে কী বলেছেন, তা নিয়ে আমার কোনও ধারণা নেই।” তবে ঘনিষ্ঠ মহলে কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্য, নির্বাচনে এ ধরনের বক্তৃতা দিয়েই থাকেন নেতারা। আর তা ছাড়া ওই নেতারা দলীয় ইস্তাহারে যা রয়েছে, তাই বলেছেন। রাজনৈতিক শিবিরগুলি কিন্তু মনে করছে, উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনের মধ্যে সংখ্যালঘু সংরক্ষণ নিয়ে আবারও সরব হতে পারেন কংগ্রেসের অন্য নেতারা।
সংখ্যালঘু ভোট টানার এই খেলায় কংগ্রেস সরাসরি নেমে পড়ায় অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে বিজেপি। দল মনে করছে, যে কেন্দ্রগুলিতে এখনও নির্বাচন বাকি রয়েছে, তাতে সংখ্যালঘু ভোট বেশি থাকায় জেনেশুনে কংগ্রেস এই কৌশল নিয়েছে। বিশেষ করে শেষ দু’টি ধাপের নির্বাচনী এলাকায় প্রায় ৩৫ শতাংশ মুসলিম ভোট রয়েছে। সেই ভোটকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতেই কংগ্রেস কার্যত নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধিকে উপেক্ষা করে এই খেলায় নেমেছে। বিজেপি শিবিরও মনে করছে, এর পিছনে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের প্রত্যক্ষ সমর্থন রয়েছে। দলের নেতা বলবীর পুঞ্জের অভিযোগ, “সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর ছত্রছায়ায় কংগ্রেস নির্বাচন কমিশনকে কার্যত প্রহসনে পরিণত করেছে।”
নির্বাচন কমিশন গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলেও বিজেপির মতোই শরিক তৃণমূল নেতৃত্ব আজ বেণীর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। উত্তরপ্রদেশে তৃণমূল প্রার্থীদের নির্বাচনে লড়তে যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তা নিয়ে অভিযোগ জানাতে মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার এসওয়াই কুরেশির সঙ্গে দেখা করেন সুলতান আহমেদ। পরে বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনের সময়ে ফের সংখ্যালঘু তোষণের খেলা শুরু করেছে কংগ্রেস। প্রথমে সলমন, এখন বেণীপ্রসাদ। অথচ, যদি কংগ্রেস সত্যিই মুসলিমদের সংরক্ষণের প্রশ্নে আন্তরিক হত, তা হলে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা করা হত।” পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে এ বিষয়ে সরকারের কী অবস্থান, তা-ও জানাতে অনুরোধ করেছেন। |