শিক্ষা ক্ষেত্রে হিংসার অন্যতম মূল কারণ ছাত্রভোট। তাই ছাত্র সংসদের নির্বাচনে গোলমাল এড়াতে এ বার গুচ্ছ বেঁধে এক দিনে কয়েকটি কলেজে ভোটের ব্যবস্থা হচ্ছে। কলকাতা পুলিশের পরামর্শ নিয়েই আপাতত মহানগরের ১৪টি কলেজে ভোটের নির্ঘণ্ট তৈরি করেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ওই সব কলেজকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে নির্বাচনের দিন স্থির করা হয়েছে।
ছাত্র সংসদের নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুই হয়নি, শহরের এমন ১৪টি কলেজের অধ্যক্ষ ও কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিমের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। সেখানেই ওই তালিকা তৈরি হয়। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের সম্মতির জন্য তালিকাটি এ দিনই ওই দফতরের সচিব সতীশ তিওয়ারির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, সন্ধ্যায় সচিব সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন। আজ, শুক্রবার নির্বাচন সংক্রান্ত ওই তালিকা সংশ্লিষ্ট কলেজগুলিতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
তবে একাধিক কলেজে একই দিনে নির্বাচনের বন্দোবস্ত করেও সংঘর্ষ ঠেকানো যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ, সাম্প্রতিক অতীতের অবিজ্ঞতা বলছে, কলেজে হিংসা ছড়াচ্ছে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং তা জমা দেওয়াকে ঘিরেই। বিভিন্ন কলেজে বিভিন্ন দিনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা হলে যে সংঘর্ষের আশঙ্কা থেকেই যায়, কলেজ-অধ্যক্ষদের একটা বড় অংশই তা মেনে নিয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অধ্যক্ষদের বলা হয়েছে, কোন কলেজে কবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন স্থির হয়েছে, সেটা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা পুলিশকে আগাম জানিয়ে দিতে হবে। যাতে গোলমাল বাধলে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, “অধ্যক্ষেরা মনোনয়নপত্র পেশ, ফলপ্রকাশ ইত্যাদির সূচি তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শকের কাছে জমা দেবেন। সেটি পেলে পুলিশকে তা জানিয়ে রাখা হবে।” উপাচার্য জানান, নির্বাচনের কাজকর্মের চলাকালীন কোনও রকম গোলমালের আঁচ পেলে সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশকে খবর দিতে বলা হয়েছে অধ্যক্ষদের।
এ দিন মহানগরের বিভিন্ন কলেজে নির্বাচনের যে-নির্ঘণ্ট তৈরি করা হয়েছে, তা হল: ৩ মার্চসরশুনা কলেজ। ১০ মার্চ কিশোর ভারতী ভগিনী নিবেদিতা ও স্কটিশ চার্চ কলেজ। ১৩ মার্চ আশুতোষ, বিজয়গড় জ্যোতিষ রায় ও ক্ষুদিরাম বসু সেন্ট্রাল কলেজ। ৫ এপ্রিল নেতাজিনগর কলেজ ফর উইমেন, সুরেন্দ্রনাথ কলেজ ফর উইমেন, হেরম্বচন্দ্র, রামমোহন, খিদিরপুর ও মৌলানা আজাদ। ২১ এপ্রিল চিত্তরঞ্জন ও নেতাজিনগর কলেজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা মেনে অবশ্য কলেজগুলি নির্বাচন করতে বাধ্য নয়। উপাচার্য জানান, কলেজগুলির নিজস্ব নির্বাচন বিধি রয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। যদিও ছাত্র-সংঘর্ষ এড়াতে কলেজগুলি তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করবে বলেই আশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক দেবাশিস বিশ্বাস জানিয়েছেন, ৫ এপ্রিল স্নাতক স্তরের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা থাকতে পারে। ওই দিন যাতে কোনও পরীক্ষা না-রাখা হয়, সেই জন্য পরীক্ষা নিয়ামককে অনুরোধ জানানো হবে। |