জল চুরি!
কোনও ব্যক্তি কিংবা কোনও বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে নয়, খোদ একটি পুরসভার বিরুদ্ধে জল চুরির অভিযোগ। তা-ও অপর এক পুর-কর্তৃপক্ষের। তা নিয়েই কাজিয়া তুঙ্গে। অভিযোগ, কামারহাটি, বরাহনগরের প্রান্তিক এলাকায় জলের সমস্যা এ কারণেই। দৈনিক ৩০ লক্ষ গ্যালন জল চুরি হচ্ছে বলে অভিযোগ জমা পড়েছে পুরমন্ত্রীর দফতরে। বিষয়টি স্বীকার করে ওই দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সম্প্রতি এই বিস্তীর্ণ এলাকায় জল সরবরাহের মূল পাইপটি ফেটে যায়। সে সময়ে বরাহনগরের পাশাপাশি কামারহাটি পুর-এলাকার কিছু অঞ্চলেও বন্ধ হয়ে যায় জল সরবরাহ। বরাহনগর পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, কামারহাটিতে জল সরবরাহের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা পাইপ আছে। বরাহনগরের পাইপে ফাটল হওয়ায় সে সব এলাকায় জল বন্ধের কোনও কারণ ছিল না। তাই বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সন্দেহ বাড়ে।
এর পরেই বরাহনগর জল সরবরাহ বিভাগের কর্মীরা বিষয়টি খতিয়ে দেখেন। তাঁদের অভিযোগ, বরাহনগরের মূল সরবরাহকারী পাইপ থেকে গোপনে জল টানা হচ্ছে। বরাহনগর ও কামারহাটি এলাকায় যৌথ জল-প্রকল্প, পি এইচ ই ও থার্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয়। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি অনুসারে বরাহনগরে দৈনিক ৬০-৭০ লক্ষ গ্যালন জলের চাহিদা থাকে। সেখানে মাত্র ৪০ লক্ষ গ্যালন জল তাঁরা পাচ্ছেন বলে পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি। অভিযোগ অস্বীকার করে কামারহাটি পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, এমন কোনও ঘটনার কথা তাঁদের জানা নেই। অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখা হবে।
বরাহনগর পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের অশোক রায় বলেন, “নতুন বসতি হলে জল সরবরাহ করতে এমন সমস্যা হয়। আর এন টেগোর রোডে অনেক আগে এই সমস্যা হয়েছিল। সে সময়ে জল চুরি বন্ধ করা হয়েছিল।”
বরাহনগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা জল বিভাগের দায়িত্বরত রামকৃষ্ণ পাল বলেন, “প্রান্তিক এলাকা-সহ কিছু জায়গায় জলাভাব খতিয়ে দেখতে গিয়ে সন্দেহ হয়। মূল পাইপটি ফাটায় কামারহাটির কিছু অঞ্চলেও দেখি জল বন্ধ। তখনই দেখা গেল, আর এন টেগোর রোডে দু’টি জায়গায় লাইন ট্যাপ করে জল চুরি করছে কামারহাটি পুরসভা। কামারহাটির প্রাক্তন সিপিএম চেয়ারম্যান গোবিন্দ গঙ্গোপাধ্যায়ের সময় থেকেই এমন হচ্ছে।” যদিও রামকৃষ্ণবাবুর দাবি, দৈনিক তাঁরা ৩০ লক্ষ গ্যালন জল কম পাচ্ছেন। জল চুরিই তার অন্যতম কারণ। তবে ওই পদ্ধতিতে এই বিপুল পরিমাণ জল নিয়ে যাওয়া কতটা সম্ভব, তা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।
কামারহাটির পুর-চেয়ারম্যান সিপিএমের তমাল দে বলেন, “এমন কিছু ঘটছে বলে আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ শুনলাম। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।” এ দিকে গোবিন্দবাবু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “বাজে কথা বলে লাভ নেই। ও ভাবে জল নেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। কামারহাটি পুরসভার নিজস্ব জল সরবরাহের পাইপ রয়েছে।”
এ দিকে, এ ঘটনা প্রসঙ্গে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। দ্রুত পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” |