জলকর এবং আয়বৃদ্ধি সংক্রান্ত শর্ত না মানায় দ্বিতীয় দফায় ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দিতে চায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক (এডিবি)। পাশাপাশি, আগের মতো এক বারে পুরো টাকা দিতেও রাজি নয় তারা। এডিবি-র তরফে বিষয়টি কলকাতা পুরসভাকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এডিবি শর্ত মানার কথা এবং আরও কিছু কথা বলেছে। বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তাদের সঙ্গে কথা চলছে। দেখা যাক কী হয়।” তবে কথা বলেই বিষয়টির সমাধান করা যাবে বলেও আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি।
দ্বিতীয় দফায় ইতিমধ্যে ২৫ কোটি ডলার ঋণ মঞ্জুর করেছে এডিবি। ঋণের শর্ত হিসেবে জলকর বসানো এবং আয়বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার কথা ছিল পুরসভার। তা না মানায় এডিবি পুরসভাকে জানিয়ে দিয়েছে দ্বিতীয় দফায় তারা মাত্র ১০ কোটি ডলার দেবে। তা-ও দেওয়া হবে কাজের অগ্রগতির ভিত্তিতে।
পুরসভা সূত্রের খবর, মূলত সংযোজিত এলাকার নিকাশি, পরিবেশ ও বস্তি উন্নয়নের জন্য এডিবি প্রথম দফায় প্রায় ১৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। সেই টাকায় এখনও কলকাতার উন্নয়নের কাজ চলছে। পুরকর্তাদের মতে, প্রথম দফায় যে পরিমাণ ঋণ পাওয়া গিয়েছে, তা দিয়ে শহরের সমস্ত এলাকার চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়নি। তাই দ্বিতীয় দফায় আরও ২৫ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার জন্য এডিবির কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়।
এডিবি সেই ঋণ মঞ্জুরও করে। কিন্তু চলতি কাজের পর্যালোচনা করতে গিয়ে তারা দেখে পুরসভা তাদের শর্তের অন্যতম, জলকর বসানো এবং আয়ের উৎস বাড়ানোর দিকে তেমন নজর দেয়নি। তার পরেই পুরসভাকে এডিবি-র তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, শর্ত না মানলে পুরসভার চাহিদামতো ঋণ তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। তাই ঋণের পরিমাণ কমিয়ে ১০ কোটি ডলার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তারা জানিয়ে দিয়েছে, আগে যেমন একলপ্তে টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এ বার তা-ও দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কাজের বিচারে কিস্তিতে ঋণের টাকা দেওয়া হবে।
পুরসভা সূত্রের খবর, শুধু এডিবিই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারও চায় জলকর বসানো হোক। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের ঘোষিত নীতিই হল, জলকর বসানো যাবে না। এর আগে তৃণমূল বোর্ডে সুব্রত মুখোপাধ্যায় মেয়র থাকাকালীন এডিবি-র শর্ত মেনে জলকর বসিয়ে ছিলেন। কিন্তু দলনেত্রীর প্রবল চাপে তিনি তা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন। তার পর থেকে বারবারই কলকাতা পুরসভা এলাকায় জলকর বসানোর বিষয়টি উঠেছে। কিন্তু সুব্রতবাবু, তাঁর পরবর্তী বামফ্রন্ট বোর্ডের মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য কিংবা বর্তমান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, কেউ-ই জলকর বসানোর ব্যবস্থা করেননি। এখন এডিবি তাদের দ্বিতীয় দফার ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন করে শহরে জলকর বসানোর বিষয়টির উপরে জোর দিচ্ছে। এ বিষয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নেব।” তবে পুর দফতরের এক কর্তা জানান, শহরে শুধুমাত্র সিকি ইঞ্চির ফেরুলের ক্ষেত্রে পুরসভা জলকর নেয় না। কিন্তু বাণিজ্যিক সংযোগ এবং যেখানে একসঙ্গে প্রচুর জল দেওয়া হয় (বাল্ক কানেকশন), সে সব ক্ষেত্রে জলকর নেওয়া ইতিমধ্যেই চালু আছে। |