ধর্ষণের অভিযোগের তদন্তে গাফিলতি নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। বৃহস্পতিবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকেরাও কার্যত একই কথা বললেন। তাঁদেরও অভিযোগ, মেডিক্যাল পরীক্ষার ক্ষেত্রে যে তৎপরতা প্রয়োজন ছিল, পুলিশ তা দেখায়নি।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক লক্ষ্মীকান্ত ঘোষ এ দিন বলেন, “শনিবার পার্ক স্ট্রিট থানার এক সাব-ইনস্পেক্টর আমাদের কাছে কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন। তাতে মেডিক্যাল পরীক্ষায় কী জানতে চাওয়া হচ্ছে, সেই গুরুত্বপূর্ণ কথাটিই লেখা ছিল না। ওঁকে সেটা বলা হলে তিনি দায়সারা ভাবে বলেন, ‘ঠিক আছে। সোম-মঙ্গলবার নতুন করে একটা চিঠি নিয়ে আসব।’ আমরা তখন তাঁকে বলি, ধর্ষণের পরীক্ষার ক্ষেত্রে এত দেরি করলে কিছুই জানা যাবে না। তখন উনি হাতে লিখে ওই কাগজে কিছু সংশোধন করেন।”
তার পরেও মেডিক্যাল পরীক্ষা ওই দিন করা গেল না কেন? চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এর পরে তাঁরা পুলিশকে বলেন অভিযোগকারিণীকে নিয়ে আসতে। তখন ওই পুলিশকর্মী জানান, ওই মহিলাকে হাসপাতালেই আনা হয়নি। সে দিন একে শনিবার, তার উপরে বেলা সাড়ে এগারোটা বেজে গিয়েছে। লক্ষ্মীকান্তবাবুর বক্তব্য, তাঁরা ওই মেডিক্যাল পরীক্ষা দ্রুত করার পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু ওই পুলিশকর্মীই তাঁদের বলেন, ‘আমরা বরং সামনের সোম-মঙ্গলবার নাগাদ ওঁকে নিয়ে আসব।’ |
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁদের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে সাত জন শিক্ষক-চিকিৎসক আছেন।
তার মধ্যে এক জন মহিলাও রয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এই ধরনের পরীক্ষা মহিলা চিকিৎসককে দিয়ে করাতে পারলে ভাল হয়। ওই মহিলা চিকিৎসক শনিবার ডিউটিতে ছিলেন বলেও জানা গিয়েছে। তাই পুলিশ যদি শনিবারই অভিযোগকারী মহিলাকে নিয়ে আসত, তবে সে দিনই তাঁর পরীক্ষা করা যেত বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ দিন জানিয়েছেন।
কেন পুলিশের কাজে এ রকম গড়িমসি হল?
লক্ষ্মীকান্তবাবু বলেন, “সাধারণত ধর্ষণের পরীক্ষার ক্ষেত্রে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে পুলিশ কর্মীরা আসেন। তাঁরা এ সব নিয়মগুলো ভাল জানেন। এ ক্ষেত্রে থানা থেকে কেন এলেন তা বুঝতে পারিনি।” পুলিশের এই গড়িমসি মনোভাবের কথা কি চিকিৎসকেরা পুলিশকর্তাদের জানাবেন? লক্ষ্মীকান্তবাবু বলেন, “পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু জানতে চাওয়া হলে অবশ্যই আমাদের অভিজ্ঞতার কথা বলব।”
পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ সম্পর্কে কী বলছেন লালবাজারের কর্তারা? কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল কমিশনার শিবাজী ঘোষ এ দিন বলেন, “১১ ফেব্রুয়ারি মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পরীক্ষার আবেদন করা হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে ১৪ তারিখে নিয়ে যেতে বলেন।” তবে পুলিশ কর্তাদের দাবি, অভিযোগকারিণী এবং তাঁর আত্মীয়া তাঁদের প্রতি পুলিশের দুর্ব্যবহার নিয়ে যে নালিশ এনেছেন, সে ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ নেওয়া হয়েছে। যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) তদন্ত-ও শুরু করেছেন।
ওই মহিলার মেডিক্যাল পরীক্ষায় কী পেয়েছেন চিকিৎসেকরা?
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, অভিযোগকারিণীকে পরীক্ষা করে কিছু ‘মেকানিক্যাল ইনজুরি’ পাওয়া গিয়েছে। সেটা ঠিক কী রকম? চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, খুব জোরে দৌড়তে গিয়ে কেউ পড়ে গেলে যেমন ক্ষত হয়, ওই মহিলার আঘাতের চিহ্ন অনেকটাই সে রকম। ওই চিহ্ন দেখে জোর দিয়ে বলা যায় না, তাঁর শারীরিক নিগ্রহ হয়েছে। তাঁর দেহে কোনও নখের আঁচড় বা কামড়ের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলেও হাসপাতাল সূত্রের খবর। সাধারণ ভাবে ধর্ষণের ক্ষেত্রে ঘটনার পরে যত দ্রুত সম্ভব ‘সোয়াব টেস্ট’ করালে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। অভিযোগকারিণী কমবয়সী বা অবিবাহিতা হলে ধর্ষণের চিহ্ন দিন কয়েক পরেও বোঝা সম্ভব। ওই মহিলার আগের শারীরিক সম্পর্কের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই ঘটনার অত দিন পরে বহু প্রমাণই হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন। চিকিৎসকরা জানান, ওই মহিলার পোশাকও পরীক্ষা করা যায়নি। তাই এ ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া সম্ভব নয় বলে তাঁদের অভিমত। |