কলেজে স্থায়ী ক্যাসিয়ার না থাকায় ছাত্রছাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত ছাত্রদের চাপে পড়ে ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে বসলেন অধ্যক্ষ শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটে রামপুরহাট কলেজে। তবে ক্যাশকাউন্টারে যাওয়ার আগে ছাত্ররা অধ্যক্ষকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। আঙুল উঁচিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেন এসএফআই পরিচালিত ছাত্র সংসদের এক সদস্য বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অভিজিৎ হালদার। এ দিনই ক্যাসিয়ার পদে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ-সহ ৫টি শূন্য পদ পূরণ করার দাবিতে অধ্যক্ষের ঘরের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ করেন কলেজের স্থায়ী ও অস্থায়ী ৩২ জন শিক্ষাকর্মী।
ছাত্রদের আচরণ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বলেন, “দু’দিন আমি ছিলাম না। এ দিন কিছু ছাত্র তাদের দাবি নিয়ে আমার কাছে আসে। কিন্তু তারা যে ভাবে কথাবার্তা বলছিল তা নিন্দনীয়। তবে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতাম।” |
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন ধরে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রদের ফর্ম পূরণের কাজ চলছে। কিন্তু ক্যাসিয়ার পদে কোনও স্থায়ী কর্মী নেই। এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের হয়রান হতে হচ্ছে। ছাত্র অভিজিৎ হালদার বলেন, “ফর্ম পূরণের কাজ চলছে। কিন্তু ক্যাশিয়ার পদে স্থায়ী লোক না থাকায় অনেকে ঘুরে যাচ্ছে।” তাঁর দাবি, “এ ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছিল। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ দিন অধ্যক্ষ আসতেই তাঁর কাছে অভিযোগ জানাতে যাই। অধ্যক্ষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করিনি।” সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল ইসলাম বলেন, “শুনেছি অধ্যক্ষের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়েছে। ছাত্ররা দু’দিন ধরে হয়রান হচ্ছে। তাদের সমস্যার কথা বলতে গিয়ে আমাদের সদস্য অভিজিৎ কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল।” যদিও অধ্যক্ষের সঙ্গে এ দিনের এই আচরণ নিন্দনীয় নয়, দাবি রাজিবুলের। অন্য দিকে, টিএমসিপির কলেজ ইউনিট সভাপতি সুমন মণ্ডল বলেন, “এক মাস আগে আমাদের সদস্যরা ছাত্রছাত্রীদের দাবি জানাতে গিয়েছিল, তখন নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ করেছিলেন অধ্যক্ষ। এ দিন এসএফআই সদস্যরা খারাপ আচরণ করলেও অধ্যক্ষ প্রতিবাদ পর্যন্ত করলেন না! এর থেকে বোঝা যাচ্ছে অধ্যক্ষের এসএফআইয়ের যোগসাজোস আছে।” ছাত্রদের অভিযোগ, কলেজে টেস্ট পরীক্ষা চলছে। অথচ উত্তরপত্র, প্রশ্নপত্রের অভাব হচ্ছে। অধ্যক্ষ বলেন, “ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এই সমস্যা। সে জন্য কয়েকটি ক্লাসের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। পড়ুয়াদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব।” |
ক্যাসিয়ারের ভূমিকায় অধ্যক্ষ। |
গত ১১ জানুয়ারি কলেজের অধ্যক্ষ শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মানসিক নির্যাতন’ ও ‘হেনস্থা’র অভিযোগ উঠেছিল কলেজেরই কিছু টিএমসিপি সদস্য-সমর্থক পড়ুয়ার বিরুদ্ধে। অন্য দিকে, রামপুরহাট কলেজ শিক্ষা কর্মী ইউনিয়নের সম্পাদক বসন্ত সিংহ বলেন, “১০ বছর ধরে স্থায়ী ক্যাশিয়ার নেই। এ ছাড়া, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৫টি পদ খালি আছে।” তাঁর অভিযোগ, “অথচ বাইরের লোক এনে ক্যাশ কাউন্টার চালানো হচ্ছে। অল্প পারিশ্রমিকে লোক দিয়ে ল্যাবরেটরি চালানো হচ্ছে।” অধ্যক্ষ বলেন, “২০০৯ সালে ক্যাশিয়ার পদে এক জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল। তিনি ছেড়ে চলে যান। পদ্ধতিগত কারণে নতুন কাউকে নিয়োগ করতে দেরি হচ্ছে। তবে শীঘ্রই নিয়োগ করা হবে। বাকি ৫টি পদে কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে ছাত্রছাত্রীদের ফর্ম পূরণ করতে যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য ক্যাশে গিয়ে বসি এবং বাইরে থেকে এক জনকে নিয়ে এসে কম্পিউটারের কাজ করে নিতে হয়েছে। আর ল্যাবরেটরির ব্যাপারে পরিচালন সমিতিতে আলোচনা করা হয়েছে।”
|