এ বার এক ভাগচাষির আত্মঘাতী হলেন বর্ধমানে। মেমারি-২ ব্লকে কুচুট গ্রাম পঞ্চায়েতের বাজে ন’হাটি গ্রামের বাসিন্দা মাধব সাঁতরা (৪০) ঋণের দায়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে পরিবারের দাবি। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, দাম্পত্য কলহই আত্মহত্যার কারণ। বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ বাড়িতেই কীটনাশক পান করেন মাধববাবু। মেমারি গ্রামীণ হাসপাতালে বিকেলে মারা যান তিনি।
বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “কেন ওই চাষি আত্মহত্যা করেছেন, তা নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। ওঁর নিজের কোনও জমি নেই। ভাগে চাষ করতেন। সেই চাষে যে ধান হয়েছিল, তা বাড়িতে খাবার জন্যই মজুত করা হয়। স্থানীয় বিডিও ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। তাঁকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। আত্মঘাতী চাষি কিন্তু সমবায় সমিতির ঋণ শোধ করে নতুন করে ঋণ নিয়েছিলেন।”
মাধববাবুর ভাই যাদব সাঁতরা অবশ্য বলেন, “দাদা চার বিঘা জমিতে ভাগ চাষ করতেন। আমাদের নিজের জমি নেই। ধানের অভাবি বিক্রি করতে হয়েছে। মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এ বার আড়াই বিঘে জমিতে আলু চাষ করেন। তা-ও ধসা রোগে নষ্ট হয়ে যায়। সব মিলিয়ে মহাজনের কাছে ওঁর প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল। স্থানীয় একটি সমবায় সমিতিতেও কিছু ঋণ ছিল। এ সব শোধ করতে না পারায় চার দিক থেকে চাপ আসছিল। শেষে দাদাকে এই রাস্তা বেছে নিতে হল।” ওই গ্রামেরই বাসিন্দা শেখ নজরুল ও অশোক সাঁতরা বলেন, “ফসল বিক্রি করতে না পেরে আমরা সকলেই সমস্যায় পড়েছি। মাধববাবুর দুই ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ে স্কুলে পড়ে। ছোট ছেলেও মাধ্যমিক দেবে। চাষে বিপর্যয়ের জন্যই ও আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।”
মাধববাবুর দুই প্রতিবেশী ভরত সাঁতরা এবং মোহন মালিকও বলেন, “গ্রামে কার্যত ধান বিক্রি হচ্ছেই না। তার উপরে আলু চাষ করে আমরা বেকায়দায় পড়েছি। আলুতে ধসা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রত্যেকেরই কমবেশি দেনা হয়েছে।” যদিও তৃণমূলের মেমারি-২ ব্লক সম্পাদক অমর সাহার দাবি, “ওই চাষি আত্মহত্যা করেছেন স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে। চাষে বিপর্যয়ের জন্য যাঁরা আত্মহত্যার কথা রটাচ্ছেন, তাঁরা সিপিএমের লোক।” জেলা কৃষক সভার সম্পাদক আব্দুর রজ্জাক মণ্ডল বলেন, “ঘটনা খতিয়ে দেখেই মন্তব্য করতে পারব। তবে রাজ্য সরকারের সর্বনাশা নীতির জেরে কৃষকদের সর্বনাশ হচ্ছে। তাই বহু চাষিই আত্মহত্যা করছেন। এ তো নতুন ঘটনা নয়।” |