বেশি পরিমাণ কয়লা নিয়ে সংকীর্ণ রাস্তায় যাতায়াত, দূষণ-সহ বিভিন্ন অভিযোগে আসানসোল উত্তর থানার বারাবনির কাছে নুনি মোড়ে বৃহস্পতিবার কয়লাবোঝাই ডাম্পার চলাচল বন্ধ করে দেন তৃণমূলের সদস্য-সমর্থকেরা। তার জেরে বৃহস্পতিবার প্রায় তিন ঘণ্টা ইসিএলের কয়লা পরিবহণ বন্ধ থাকল আসানসোলে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে এ দিন দুপুরে ফের পরিবহণ চালু হয়। ইসিএলের তরফে আসানসোল উত্তর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ আসানসোল উত্তর থানার বারাবনির কাছে নুনি মোড়ে কয়লাবোঝাই ডাম্পার চলাচল বন্ধ করে দেন তৃণমূলের সদস্য-সমর্থকেরা। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, ইসিএলের সালানপুর এরিয়ার মোহনপুর কোলিয়ারির কয়লা এই ডাম্পারগুলিতে পরিবহণ চলছিল। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের বাধায় নুনি মোড় সংলগ্ন পাঁচগাছিয়া রোডে কয়েকশো ডাম্পার দাঁড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের পক্ষে তৃণমূল নেতা মনু রায় অভিযোগ করেন, প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে কয়েকশো ডাম্পার চলাচল করে। রাস্তাটি সংকীর্ণ হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করে। তা ছাড়া ডাম্পারগুলিতে যে পরিমাণ কয়লা পরিবহণ হওয়ার কথা তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে কয়লা পরিবহণ করা হয়। এর ফলে ডাম্পার থেকে কয়লা পড়ে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। মনুবাবু বলেন, “আমরা পুলিশকে অনেক বার এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কিন্তু কোনও ফল পাচ্ছি না। অগত্যা ডাম্পার চলাচল বন্ধ করে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি।” তাঁরা দাবি করেন, স্কুল চলাকালীন এই রাস্তায় ডাম্পার চালানো যাবে না। |
নুনি মোড়ে বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন শৈলেন সরকার।
|
আসানসোল উত্তর থানার ওসি বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। পুলিশের তরফে ডাম্পারগুলিকে গন্তব্যে যেতে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তা না মানায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে এক সময় পুলিশের ধস্তাধস্তিও হয়। বিক্ষোভকারীদের দাবিগুলি পুলিশ বিবেচনা করবে এই আশ্বাস পাওয়ার পরে বেলা ১২টা নাগাদ বিক্ষোভকারীরা ডাম্পারগুলিকে ছেড়ে দেন। এ দিকে, ইসিএলের তরফে এ বিষয়ে আসানসোল উত্তর থানায় অভিযোগ জানানো হয়। সংস্থার সিএমডির কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “এ ভাবে পরিবহণ আটকে দিলে শিল্পের ক্ষতি হবে। শিল্প উৎপাদন মার খাবে। এই ঘটনা অভিপ্রেত নয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগগুলি ঠিক নয়।”
এ বিষয়ে তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের বলেন, “এই আন্দোলন সঠিক পথেই হয়েছে। আগে এলাকার বাসিন্দাদের বাঁচতে হবে। তারপর শিল্প নিয়ে ভাবব।” পরিবহণ বিষয়ক রাজ্য বিধানসভা স্থায়ী কমিটির সদস্য অপূর্ববাবুর অভিযোগ, “সমস্যাটি অনেক দিনের। ডাম্পারগুলির বেপরোয়া চলাচলের জন্য এলাকার বাসিন্দারা অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। বহু বার আবেদন করেও লাভ হয়নি।” ইসিএল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। |