আর্থিক মন্দা কাটাতে সরাসরি রেল যোগাযোগবিহীন এলাকায় বাস পরিষেবা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম কর্তৃপক্ষ। ওই ব্যাপারে সমীক্ষা চালিয়ে দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে নিগমের ডিভিশনাল ম্যানেজারদের নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি বিয়ে সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ফের বাস ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিগম কর্তৃপক্ষ। সংস্থার হাল ফেরাতে আরও কী কী পরিকল্পনা নেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি নিগমের পরিচালন বোর্ডের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে ঠিকাদার নিযুক্ত কর্মীদের কোন পরিস্থিতির জেরে বসিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিতে হয়েছে, সে সব ব্যাপারেও বিশদে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আর্থিক মন্দা কাটাতে আমরা সরাসরি রেল যোগাযোগবিহীন এলাকাগুলি চিহ্নিত করে পরিকল্পনামাফিক বাস পরিষেবা বাড়াতে চাইছি। ২২ ফেব্রুয়ারি বোর্ড মিটিংয়ের আগে ওই ব্যাপারে সমীক্ষা করে সমস্ত ডিভিশনাল ম্যানেজারদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। বিয়ে সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও আমরা বাস ভাড়া দেওয়ার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।” এনবিএসটিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৬৪ কোটি টাকা দেনার বোঝা ইতিমধ্যে সংস্থার উপরে রয়েছে। রাজ্য সরকার ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে আর্থিক মন্দা কাটাতে বিকল্প চিন্তাভাবনা করে খরচ কমিয়ে আয় বাড়ানোর ব্যাপারে বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে। ওই পরিকল্পনার সূত্র ধরেই এবার রেল যোগাযোগহীন এলাকাগুলিকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করে অতিরিক্ত বাস চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে। বিভিন্ন দূরপাল্লার তো বটেই, স্বল্প দূরত্বের রুটগুলির মধ্যে লাভজনক হতে পারে এমন সব রুটের তালিকা তৈরির কাজও কয়েকটি ডিভিশনে শুরু হয়ে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগণ বলেন, “সরাসরি রেল যোগাযোগ নেই এমন সব রুটের কিছু তালিকা আমরা ইতিমধ্যে পেয়ে গিয়েছি। বহরমপুর, রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি ডিভিশন থেকে দক্ষিনবঙ্গের দূরপাল্লার বিভিন্ন রুট ওই তালিকায় রয়েছে।” নিগম সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি-মেদিনীপুর, বহরমপুর-পুরুলিয়া, শিলিগুড়ি-খড়গপুর, বাঁকুড়া, বালুরঘাট রুটের নাম ওই বাড়তি বাস পরিষেবার জন্য ইতিমধ্যে তালিকাভুক্ত হয়েছে। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে বাকি সব রুটের নামও চূড়ান্ত হয়ে যাবে। নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পরে সংস্থার বাস বিয়ে সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এবার আয় বাড়াতে নতুন ভাবে ছক কষে ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। তাতে সংস্থার বাস ভাড়া নিতে হলে নূন্যতম ৫ হাজার টাকা ভাড়া ধার্য করা হয়েছে। আগে ডিপোগুলি ওই ভাড়া দেবার সিদ্ধান্ত নিতে পারলেও এখন থেকে এসব ভাড়ার ক্ষেত্রে ম্যানেজিং ডিরেক্টরের অনুমোদন আবশ্যিক করা হয়েছে। নিগম সূত্রেই জানা গিয়েছে, আগামী বোর্ড মিটিংয়ে সরাসরি রেল যোগাযোগবিহীন রুটে বাড়তি বাস চালানোর প্রসঙ্গ ছাড়াও ঠিকাদার নিযুক্ত কর্মীদের বসিয়ে দেবার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত বিশদে তুলে ধরবেন নিগম কর্তারা। ওই ব্যাপারেও তথ্য পরিসংখ্যান তৈরি করা হচ্ছে। নিগমের এক আধিকারিক বলেন, উদাহরণ হিসাবে উল্টোডাঙা ডিপোর কথা ধরলে দেখা যাবে, সেখানে কর্মী আছেন ১৫১ জন। তাদের মধ্যে ঠিকাদার নিযুক্ত ৭৪ জন, স্থায়ী ৭৭ জন। অথচ সেখান থেকে ৫টি রুটে বাস চলছে মাত্র ৬টি। এই অবস্থা কমবেশি সব ডিপোতেই। বৈঠকে প্রয়োজনে যাতে সবই তুলে ধরা যায় সে কথা ভেবে যাবতীয় তথ্য নেওয়া হচ্ছে। |