শহরের থানা রোড এলাকায় পাঁচটি দোকান অগ্নিকাণ্ডে ছাই হয়ে যাওয়ায় রায়গঞ্জ দমকল কেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠালেন ইটাহারের তৃণমূল বিধায়ক অমল আচার্য। গত সোমবার রাতে রায়গঞ্জ থানা রোড এলাকায় পর পর ৫টি দোকানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দমকল কর্মীদের কর্তব্যে গাফিলতি, ইঞ্জিন দেরিতে আসা ও জল ফুরিয়ে যাওয়ার কারণেই আগুন ভয়াবহ আকার নেয় বলে অভিযোগ তোলেন রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত, তৃণমূল নেতা তিলক চৌধুরী, রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ী-সহ রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীরা। মোহিতবাবু দমকল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনেরও দ্বারস্থ হন। এর পরেই নড়েচড়ে বসে রাজ্য সরকার। তৃণমূলের তরফেও দলের জেলা সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক তড়িঘড়ি দমকল কর্তৃপক্ষের পরিকাঠামো উন্নয়নে রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হন। বেহাল পরিকাঠামো নিয়ে দোষারোপও চলছে। অমলবাবু বলেন, “রায়গঞ্জ দমকল কেন্দ্রের পরিকাঠামো ভাল নয়। পূর্বতন রাজ্য সরকারের গাফিলতির জেরে ওই কেন্দ্রের পরিকাঠামোর উন্নয়ন হয়নি। সেই কারণেই, দমকল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী ও দমকল মন্ত্রীর কাছে রায়গঞ্জ দমকল কেন্দ্রের পরিকাঠামোর উন্নয়নের ব্যাপারে একাধিক প্রস্তাব পাঠাচ্ছি।” |
অন্যদিকে, রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিতবাবু বলেন, “দমকল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জেরে রায়গঞ্জের পাঁচটি দোকান ভষ্মীভূত হয়ে গিয়েছে। দমকল মন্ত্রীর কাছে ফ্যাক্স করে দলের তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে। তৃণমূল বিধায়ক অমলবাবু কোথায়, কী প্রস্তাব পাঠাচ্ছেন তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এতদিনে কেনও রায়গঞ্জ দমকল কেন্দ্রের পরিকাঠামোর উন্নয়ন হল না তার জবাব তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারকেই দিতে হবে।” রায়গঞ্জ দমকল কেন্দ্রের আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মন্ডল জানান, রাজ্যের কাছে একাধিক বার কেন্দ্রের পরিকাঠামোর উন্নয়নের আর্জি জানানো হলেও কোনও লাভ হয়নি। আগুন লাগলে ও দুর্ঘটনা ঘটলে তাঁদের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। অমলবাবুর উদ্যোগে তাঁরা খুশি। রায়গঞ্জ দমকল কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, টু পাম্প স্টেশনের ওই কেন্দ্রে তিনটি ইঞ্জিন রয়েছে। ফায়ার অপারেটর রয়েছেন ২২ জন। পুরানো হয়ে যাওয়ায় ২টি ইঞ্জিন মাঝে মধ্যেই বিকল হয়ে যায়। তিনটি ম্যানুয়াল ল্যাডার রয়েছে। দমকল কেন্দ্রের হাইড্রোলিক ল্যাডার, নিজস্ব রিকভারি ভ্যান ও হাইড্রোলিক কাটার নেই। দুটি ইঞ্জিন মাঝে মধ্যেই বিকল হয়ে যাওয়ায় একসঙ্গে একাধিক এলাকায় আগুন লাগলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে তাঁদের পৌঁছতে দেরি হয়। তাই, আরও দুটি ইঞ্জিন দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে একাধিকবার আর্জি জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও, বড়সড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার মোকাবিলায় আরও ১৪ জন ফায়ার অপারেটরের প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের জলাধার থেকে যাতে আগুন নেভানোর জল মেলে সেই ব্যবস্থার জন্যও জেলা প্রশাসনের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে। নিতাইবাবু বলেন, “প্রতি মাসে রায়গঞ্জ মহকুমায় ছোট বড় মিলিয়ে গড়ে ৩০টিরও বেশি অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। পরিকাঠামোর অভাবের জেরেই দমকল কর্মীদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠছে।” অমলবাবু বলেন, “রায়গঞ্জ দমকল কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিকাঠামোর উন্নয়নে রাজ্য সরকারের কাছে সমস্ত প্রস্তাবই পাঠানো হচ্ছে।” |