|
|
|
|
সুশান্ত ‘বীর’, আপত্তি সিদ্ধার্থের নামে শোকপ্রস্তাবে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
এক জন সদ্য জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। রাত পোহালেই আবার তাঁর আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার কথা। আর এক জন প্রয়াত। কিন্তু এ রাজ্যের রাজনৈতিক প্রচারে প্রায়শই তাঁর নাম আসে।
সিপিএমের ২৩ তম রাজ্য সম্মেলনের প্রথম দিন অন্তত চিহ্নিত হয়ে থাকল দু’জনের সশরীর এবং অশরীরী উপস্থিতির জন্য! জেল থেকে সদ্যমুক্ত, প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষকে প্রতিনিধি হিসাবে সম্মেলনে যোগ দিতে দেখে বাকি প্রতিনিধিরা তাঁকে কার্যত ‘বীর’ আখ্যায় ভূষিত করলেন! আর প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের নাম শোকপ্রস্তাবে দেখে প্রতিবাদ করলেন প্রতিনিধিদের একাংশ। সম্মেলন পরিচালনাকারী প্রেসিডিয়ামের উদ্দেশে তাঁদের সাফ বক্তব্য, যে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর প্রশাসন এবং দলকে কাজে লাগিয়ে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের নিকেশ করিয়েছিলেন, তাঁর সম্মানে কমিউনিস্টদের সম্মেলনে উঠে দাঁড়ানো যায় না! |
|
স্বাগত ‘লড়াকু কমরেড’। বুধবার রাজ্য সম্মেলনে হাজির সুশান্ত ঘোষ। সঙ্গে রবীন দেব। রাজীব বসুর তোলা ছবি। |
কঙ্কাল-কাণ্ড এবং আরও নানা মামলায় অভিযুক্ত সুশান্তবাবুকে আলিপুর জেলের গেটে সিপিএম ‘বরণ’ করতে যাওয়া থেকেই জনমানসে প্রশ্ন উঠেছিল, যারা শুদ্ধকরণের কথা বলে, তাদের কি এই কাজ মানায়? সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য গোড়া থেকেই বলে এসেছেন, ‘মিথ্যা মামলা’য় সুশান্তবাবুকে ফাঁসানো হয়েছে। জেল থেকে জামিনে মুক্তির সময় তাঁকে ‘স্বাগত’ জানানোর সঙ্গে শুদ্ধকরণের কোনও সম্পর্ক নেই। রাজ্য সম্মেলনে এ বার ইঙ্গিত মিলছে, সুশান্তবাবুকে নিয়ে জনতার মনে যা-ই প্রশ্ন থাক, সিপিএমের নেতা-কর্মীরা অন্তত তাঁকেই ‘নায়ক’ মনে করছেন! গড়বেতার বিধায়ককে বুধবার সম্মেলন-কক্ষে দেখে অধিকাংশ প্রতিনিধিই তাঁর কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁদের বক্তব্যের নির্যাস: জেল-জরিমানা সহ্য করেও এই কঠিন সময়েও যাঁরা পার্টি করে যাচ্ছেন, তাঁরাই দলের ‘প্রকৃত সম্পদ’। কেউ বলেছেন, জেল থেকে সদ্য ছাড়া পেয়েছেন সুশান্তবাবু। বৃহস্পতিবারই তাঁর আবার মেদিনীপুরের আদালতের হাজিরা দিতে যাওয়ার কথা। তার মধ্যেও তিনি সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন। রাজনৈতিক জীবনে যা করেছেন, সবই দলের জন্য। ‘তীব্র আক্রমণে’র মুখে পড়েও দলকে ভোলেননি। ‘কঠিন’ সময়ে এমন ‘লড়াকু কমরেড’ই দরকার। দলের একাংশ এমনও বলতে শুরু করেছে, সম্মেলনে এই মনোভাব বজায় থাকলে নতুন রাজ্য কমিটিতে গড়বেতার বিধায়ককে জায়গা দিতে ‘চাপ’ বাড়বে!
সুশান্তবাবুর মতো আরও দুই জেলার দুই ‘ডাকসাইটে’ নেতা অবশ্য সম্মেলনে অনুপস্থিত। পূর্ব মেদিনীপুরের লক্ষ্মণ শেঠ জেলার মতোই রাজ্য সম্মেলনে আসেননি ফেরার বলে। হুগলির অনিল বসুকে এ দিন অন্তত সম্মেলনে দেখা যায়নি। সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত, রাজ্য নেতৃত্বের ‘সুনজরে’ তিনি আপাতত নেই বুঝেই ‘বিদ্রোহে’র পথে যেতে চেয়েছেন আরামবাগের প্রাক্তন সাংসদ। আলিমুদ্দিনের হস্তক্ষেপে সুদর্শন রায়চৌধুরী হুগলির জেলা সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই অনিলবাবুকে নিয়ে সমস্যার শুরু। তাঁর এ দিনের পদক্ষেপের পরে পরবর্তী রাজ্য কমিটিতে অনিলবাবুর স্থান হয় কি না, তা-ই এখন দেখার।
খসড়া রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করতে গিয়ে শুদ্ধকরণ এবং দলের নেতাদের আচরণ নিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। পরে প্রতিনিধিদের বক্তব্যে পাল্টা আক্রমণ এসেছে তাঁর দিকেই! ‘মিডিয়া অপরাজেয় নয়’ বলে উল্লেখ করে প্রতিনিধিদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, দলের বিপর্যয়ের জন্য সংবাদমাধ্যমের ‘অপপ্রচারে’র উপরে একতরফা দোষ চাপানোর প্রবণতা কবে বন্ধ হবে? সংবাদমাধ্যমের সামনে রাজ্য সম্পাদকের ‘পারফরম্যান্স’ই তো ভয়াবহ! দলীয় নেতৃত্বের সম্পর্কে প্রকাশ্যে বারংবার তির্যক মন্তব্যের জন্য তীব্র আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে, তেমনই ‘অসংযত’ কথাবার্তার জন্য সমালোচনা থেকে রেহাই পাননি গৌতম দেব।
সব কিছুকেই ছাপিয়ে গিয়েছে প্রয়াত সিদ্ধার্থবাবুকে ঘিরে ঘটনা। জ্যোতি বসু, এম কে পান্ধের মতো দলের প্রয়াত নেতাদের পাশাপাশি সিদ্ধার্থবাবুর নাম শোকপ্রস্তাবে ঘোষণা হওয়া মাত্রই প্রতিবাদ ওঠে সম্মেলন-কক্ষে। দাঁড়িয়ে উঠে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন কয়েক জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক প্রতিনিধি সরাসরিই বলেন, আর যাঁর জন্যই হোক, সিদ্ধার্থবাবুর জন্য দাঁড়িয়ে মাথানত করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন কমিউনিস্টদের পক্ষে সম্ভব নয়! প্রেসিডিয়াম এই বিতর্কে আপাতত মুখ খোলেনি। তবে সম্মেলনের শেষে চূড়ান্ত শোকপ্রস্তাবের নথিতে সিদ্ধার্থবাবুর নাম থাকে কি না, সে দিকেই নজর রয়েছে দলের একাংশের। |
|
|
|
|
|