|
|
|
|
|
মানুষের মন পেতে ফের
কৌটো হাতে সিপিএম
অত্রি মিত্র • কলকাতা |
|
ক্ষমতা হারিয়ে ফের ‘কৌটো নাড়িয়ে’ তহবিল গড়ে তোলার রাস্তায় ফিরতে চাইছে সিপিএম! গত কয়েক বছরে পরের পর নির্বাচনী বিপর্যয়ের দলীয় কাটাছেঁড়ায় হারের যে সব কারণে উঠে এসেছে, তার মধ্যে অন্যতম হল জনসংযোগের অভাব। সেই জনসংযোগ গড়ে তোলার ‘অভ্যাস’ ফিরিয়ে আনতেই রাস্তায় নেমে অর্থ সংগ্রহের নির্দেশ এ বারের রাজ্য সম্মেলনে নতুন করে দিতে হচ্ছে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বকে।
রাস্তায় নেমে কৌটো নাড়িয়ে বা পতাকা পেতে অর্থ সংগ্রহের রেওয়াজ সিপিএমে নতুন নয়। সম্মেলন, ব্রিগেড সমাবেশের মতো বিভিন্ন কর্মসূচিতে অর্থ সংগ্রহের জন্য ‘কোটা’ নির্দিষ্ট করে দেয় দল। কোটা পূরণ করতে ছয়-সাত তো বটেই, এমনকী আট-নয়ের দশকেও সিপিএমের কর্মী-নেতা থেকে শুরু করে ছাত্র-যুবদের রাস্তায় নেমে অর্থ সংগ্রহ করতে দেখা যেত। বাড়ি বাড়ি গিয়েও অর্থ সংগ্রহের রেওয়াজ ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে ধীরে ধীরে এই অভ্যাসে মরচে ধরতে শুরু করে সিপিএমে। দেখা গিয়েছে, দলের শাখা বা আঞ্চলিক কমিটিকে দেওয়া ‘কোটা’ পূরণের জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ‘বিশেষ উৎসে’র উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে দলের একটি বড় অংশ। অভিযোগ ওঠে, কোনও ব্যবসায়ী বা প্রোমোটারের কাছ থেকে ‘চাঁদা’ নিয়ে কোটা পূরণ করে দেওয়া হচ্ছে। কমতে শুরু করে রাস্তায় নেমে দল বেঁধে তহবিল সংগ্রহ করার ঝোঁক।
এ বারের সম্মেলন-পর্বে আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তোলার পুরনো অভ্যাসে ফিরতে দেখা গিয়েছে সিপিএমকে। দলীয় কর্মীদের উৎসাহ দিতে রাজ্য নেতৃত্বও ইতিমধ্যে রাস্তায় নেমেছেন। ব্রিগেড সমাবেশ উপলক্ষে সম্প্রতি লাল শালু নিয়ে রাস্তায় অর্থ সংগ্রহে নেমেছিলেন বিমান বসু, রবীন দেবের মতো নেতারা। রাস্তায় নেমে গণসংগ্রহে বিমানবাবু অবশ্য বরাবরই উৎসাহী। এ বারে সেই উৎসাহই নিচু তলায় সঞ্চারিত করতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব। রবীনবাবুর কথায়, “কৌটো কালেকশন সব সময় চালু ছিল। এখন আবার বেশি হচ্ছে।” শুধু আলিমুদ্দিনের নেতারাই নন, সম্মেলনের টাকা তুলতে কলকাতা ও জেলায় এ বার অনেক বেশি সংখ্যায় কর্মী রাস্তায় নেমেছিলেন অর্থ সংগ্রহ করতে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতির কথা বুঝেই রাজ্য সম্মেলনের আলোচনাতেও বিমানবাবু জোর দিচ্ছেন গণসংগ্রহের উপরে। সিপিএম সূত্রের খবর, বুধবার রাজ্য সম্মেলনের প্রথম দিনে খসড়া রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করতে গিয়ে রাজ্য সম্পাদক বলেছেন, এই ‘কঠিন’ পরিস্থিতিতে দল চালানোর জন্য বেশি করে সর্বক্ষণের কর্মী দরকার। তাঁদের ভাতা দেওয়ার জন্যই গণসংগ্রহ করে দলীয় তহবিল বাড়াতে হবে। গণসংগ্রহের ক্ষেত্রে বাঁকুড়া, বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের অভিজ্ঞতা ‘শিক্ষণীয়’। পাশাপাশিই বিমানবাবু উল্লেখ করেছেন, ‘শত আক্রমণে’র মুখে দাঁড়িয়েই সর্বক্ষণের কর্মী রাখার ক্ষেত্রে সিপিএমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ‘এগিয়ে’ থেকেছে।
সংগঠনের মধ্যে গণসংগ্রহে ঢিলেমির কুঅভ্যাস’ যে রাজ্য নেতৃত্বের আগে চোখে পড়েনি, এমনটা নয়। ২০০৩ সালের দলের সাংগঠনিক নোট, ২০০৮ ও ২০১০ সালের পার্টি চিঠিতে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১০ সালের ১ নম্বর পার্টি চিঠিতে ‘গণসংগ্রহকে অভিযানের রূপ দিতে হবে’ শীর্ষক অংশে বলা হয়েছিল, ‘তহবিল সংগ্রহে নেতৃত্ব থেকে দরদিদের অংশগ্রহণ এবং শাখা থেকে জেলায় কত শতাংশ পরিবারের কাছে পৌঁছনো গেল, তার পর্যালোচনা করা দরকার। অবাঞ্ছিত ব্যক্তির কাছে বড় অঙ্কের সংগ্রহের ক্ষেত্র থাকলে তা বন্ধ হওয়া আবশ্যিক।’ ২০০৮ সালের ১ নম্বর পার্টি চিঠিতেও উল্লেখ করা হয়েছিল, অল্প কিছু ব্যক্তির কাছ থেকে বেশি অর্থ সংগ্রহের প্রবণতা বন্ধ করে প্রত্যেকটি বাড়িতে গিয়ে ক্ষুদ্র সংগ্রহই ‘প্রাণবন্ত পার্টি’র জনসংযোগ ও এগিয়ে চলার পথ।
কিন্তু বারংবার দলের অভ্যন্তরে এ কথা বলা সত্ত্বেও ভোটে জিতে ক্ষমতায় থাকার ব্যাপারে ‘আত্মবিশ্বাসী’ সিপিএমের নেতা-কর্মীরা ওই নির্দেশে কর্ণপাত করেননি। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা টাকা তোলার অভ্যাসও বদলায়নি। দলীয় সূত্রে খবর, সরকারি ‘ক্ষমতা’ হারানোর পরে ওই ‘উৎস’ এখন আর সে ভাবে সিপিএমকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না। পাশাপাশি, সিপিএমকে নতুন করে ভাবাচ্ছে ‘ভাবমূর্তি’ এবং জনসংযোগের প্রশ্নও। তাই ফিরে যেতে হচ্ছে পুরনো পথেই। দলের এক নেতার কথায়, “কম শ্রমে বেশি কালেকশন করার অভ্যাস তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমরা বলছি, এক জনের কাছ থেকে একশো টাকা জোগাড় করার থেকে ওই অর্থ অনেকের কাছ থেকে তোলা হোক। তাতে এক বার হলেও পাড়ার প্রত্যেকটি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হবে দলের কর্মীদের।” |
|
|
|
|
|