বন্ধ বাড়ি থেকে মা ও মেয়েকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করল পুলিশ। তবে খোঁজ মেলেনি বাবার। বাড়ি থেকে মিলেছে একটি ‘সুইসাইড নোট’। পুলিশ জানিয়েছে, ওই নোটে উল্লেখ করা হয়েছে ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ওই দম্পতি। ঘটনাটি পুরুলিয়ার পাড়া থানার শ্যামপুরের।
মঙ্গলবার রাতে মা-মেয়েকে উদ্ধার করে পুলিশ ভর্তি করায় রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালে। সেখান থেকে তাঁদের রেফার করা হয়েছে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পাড়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, ওই দম্পতির নাম অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের মেয়ে অভিষিক্তা আনাড়া গার্লস হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। অনিন্দ্যবাবু আনাড়া রেল হাইস্কুলের পার্শ্বশিক্ষক। আদতে বাঁকুড়ার সোনামুখীর রথতলা এলাকার ব্যানার্জীপাড়ার বাসিন্দা অনিন্দ্যবাবু শ্যামপুরে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার থেকে বাড়ির দরজা বন্ধ থাকায় পড়শিদের সন্দেহ হয়। তাঁরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে সোমাদেবী ও অভিষিক্তাকে উদ্ধার করে। বাঁকুড়া হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মা ও মেয়ের অবস্থা স্থিতিশীল। অনিন্দ্যবাবুর হদিস এখনও মেলেনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, সোমাদেবীর হাতের শিরা কাটা ছিল। রক্তাক্ত ও সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে ছিলেন ওই বধু। পাশেই অচৈতন্য হয়ে পড়েছিল অভিষিক্তা। রঘুনাথপুরের এসডিপিও দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন “সুইসাইড নোটে ওই দম্পতি উল্লেখ করেছেন, ঋণের দায়ে জর্জরিত হয়েই তাঁরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। মেয়েটিকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল। তবে সময়মতো উদ্ধার করায় তাঁরা প্রাণে বেচেঁছেন। অনিন্দ্যবাবুর খোঁজ চলছে। আপাতত আত্মহত্যার চেষ্টা করার মামলা শুরু করা হয়েছে।”
অন্য দিকে, এই ঘটনায় শ্যামপুর এলাকায় আলোড়ন পড়েছে। শ্যামপুরে অনিন্দ্যবাবুর প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, আর্থিক ভাবে বেশ স্বচ্ছল অবস্থা ওই দম্পতির। কী ভাবে ঋ
ণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ওই দম্পতি, বুঝতে পারছেন না তাঁরা। অনিন্দ্যবাবু স্কুলে পার্শ্বশিক্ষকতা করার পাশাপাশি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ান এবং গৃহশিক্ষকতাও করেন। বিয়ের আগে সোনামুখীতেও টিউশনি করতেন অনিন্দ্যবাবু বলে জানা গিয়েছে। এ দিন তাঁর বাবা, সোনামুখীর একটি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।
মঙ্গলবার রাতেই খবর পেয়ে রঘুনাথপুর হাসপাতালে চলে আসেন সোমাদেবীর আত্মীয়েরা। বুধবার তাঁর এক আত্মীয় জানান, সোমাদেবীর বাপের বাড়ি বাঁকুড়ার রামপুরে। অনিন্দ্যবাবুর সঙ্গে সাথে বিয়ে হওয়ার পরে কিছুদিন সোনামুখীতে থেকে তাঁরা শ্যামপুরে চলে যান। ওই আত্মীয় বলেন, “কেন এমন হল, কিছুই বুঝতে পারছি না।” একই কথা বলছেন অনিন্দ্যবাবুরর সহকর্মীরা। আনাড়া রেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুণ কুমার বলেন, “গত ১৭-১৮ দিন ধরে স্কুলে আসেননি অনিন্দ্য। মঙ্গলবার আমার মোবাইলে জানিয়েছিলেন, বাবা অসুস্থ থাকায় আসতে পারছেন না। শুক্রবার কাজে যোগ দেবেন।” |