|
|
|
|
বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট নাকচ |
নদীবাঁধ প্রকল্পে কেন্দ্রের সম্মতি, শঙ্কিত তাওয়াং |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
নদীবাঁধ প্রশ্নে ফের উত্তাল উজানি অসম ও অরুণাচল। গেরুকামুখের পর, এ বার বিতর্কের কেন্দ্রে নামনি ডিমৌ ও তাওয়াং।
২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অরুণাচল সরকার বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে মোট ১৩৩টি ছোট-মাঝারি-বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার ব্যাপারে চুক্তি করেছে। তার মধ্যে লোহিত নদীর উপরে, নামনি ডিমৌ এবং তাওয়াং জেলার নামজুং চু, মাগো চি ও নিকচারোং চু নদীর উপরে ১৫টি বাঁধ গড়ার প্রস্তাব রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মত অগ্রাহ্য করে গত কাল কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রী জয়ন্তী নটরাজন নামনি ডিমৌ প্রকল্পকে সবুজ সংকেত দেন। আর তা নিয়েই আপত্তি তুলেছেন পরিবেশপ্রেমীরা। তাঁদের বক্তব্য, ১৭৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্রকল্প চালু হলে এক দিকে পরশুরাম কুণ্ড ও অন্য দিকে, তিনসুকিয়ার ডিব্রু-শইখোয়া জাতীয় উদ্যানের ধ্বংস অনিবার্য। বাঁধের সম্ভাব্য প্রভাব খতিয়ে দেখতে গত বছর অক্টোবর মাসে মুম্বইয়ের ‘বম্বে ন্যাচরাল হিস্ট্রি সোসাইটি’-র সঞ্চালক আসাদ রেহমানির নেতৃত্বে একটি দল গঠিত হয়। অসম-অরুণাচল ঘুরে তাঁরা ডিসেম্বর মাসে দিল্লিতে একটি রিপোর্ট জমা দেন। রিপোর্টে রেহমানি-সহ সবাই পরিবেশ ও বন্যপ্রাণের উপরে বাঁধের কুফল বিষয়ে একমত ছিলেন। ব্যতিক্রম অরুণাচলের বনকর্তা প্রতাপ সিংহ। গত কাল জয়ন্তী নটরাজন বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট নাকচ করে নামনি ডিমৌ বাঁধ গড়ার বিষয়ে সম্মতি জানান।
ঘটনার প্রতিবাদে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির সম্পাদক অখিল গগৈ বলেন, “উন্নয়নের দোহাই দিয়ে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ধ্বংস করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুমতি দিয়ে দিলেন অথচ অসম সরকার চুপ করে বসে রয়েছে! কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিজে অসমের চরে পা দেননি। অথচ তিনিই দিল্লিতে বসে বলে দিলেন, বাঁধের ফলে চর এলাকার ক্ষতি হবে না।”
জয়ন্তী দেবী যুক্তি দিয়েছেন: সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রাণীরা নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলতে শিখে যাবে। কিন্তু কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির বক্তব্য, “রেহমানির মতো বিশেষজ্ঞরা প্রাণীজগৎ ধ্বংসের আশঙ্কা করলেও কেবলমাত্র বাণিজ্যিক স্বার্থে কেন্দ্র সেই আশঙ্কা নস্যাৎ করেছে। গত ডিসেম্বরে ‘ন্যাশনাল বোর্ড অফ ওয়াইল্ডলাইফ’-এর ২৪ তম বৈঠকেও বাঁধের কুফল যাচাই করতে স্বতন্ত্র কমিটি গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্র তাও মানেনি। এমনকী কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রক তাদের যুক্তিতে বন্যপ্রাণীর কথা উল্লেখ করলেও সেখানকার মনুষ্যবসতির কী হবে তা নিয়ে মাথাই ঘামায়নি।” অসম ও অরুণাচল সরকারকে কেন্দ্রের কাছে বাঁধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবার দাবি তুলেছেন বাঁধ-বিরোধীরা।
অন্য দিকে, তাওয়াং-এ যে বাঁধগুলি গড়ার কথা, তা গড়া হলে এই পাহাড়ি জনপদ, এমনকী বিশ্বখ্যাত তাওয়াং মঠেরও ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাওয়াংবাসী। মঠের সন্ন্যাসীদের অভিযোগ, বাঁধ-বিরোধী যে প্রচার তাঁরা চালাচ্ছিলেন সরকারের তরফে জোর করে তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এরপর ১২ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনের তরফেই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সুফল নিয়ে আলোচনা চালাতে সাধারণ বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে হাজির ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা পর্যটনমন্ত্রী পেমা খাণ্ডু, বিধায়ক সেওয়াং দোন্ডুপ ও জাম্বে তাশি। বৈঠকে এনএইচপিসি, ভিলওয়াড়া এনার্জি লিমিটেড, ইডিসিএল, সেউ এনার্জির মতো বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের আমলারাও হাজির ছিলেন। সরকারের তরফে বাঁধ-বিরোধী যুক্তি ও তাওয়াং মঠের ক্ষতির আশঙ্কা নস্যাৎ করে দেওয়া হলেও এত উঁচুতে অবস্থিত একটি জেলায় একসঙ্গে এতগুলি বিদ্যুৎপ্রকল্প গড়া নিয়ে মন্ত্রী-বিধায়করাও চিন্তিত।
তাওয়াং-এ ১২৫১ বর্গ কিলোমিটার অরণ্য এলাকা রয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, প্রকল্পের জন্য অনেকটাই বন ধ্বংস হতে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, “তাওয়াং চু-সহ বাকি প্রকল্পগুলি চালু হলে বিপন্ন প্রজাতির রেড পান্ডা ও ম্যাকাওয়ের উপরে কুপ্রভাব পড়তে বাধ্য।” তাঁদের আরও দাবি, তাওয়াং অবধি বাঁধ গড়ার জন্য ভালুকপুং থেকে তাওয়াং---এই পাহাড়ি পথে ভারি নির্মাণসামগ্রী আনা সম্ভব ছিল না। সরকার পাহাড় কেটে রাস্তা চওড়া করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তাতেও পাহাড়ের ভারসাম্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা। এই এলাকায় বহু ধ্বসপ্রবণ এলাকা রয়েছে। এমনকী, তাওয়াং মঠের পিছনের পাহাড়ও ফেটে, ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। রাস্তা বাড়ানো ও বাঁধ গড়ার ধাক্কায় পাহাড় ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা করছেন তাওয়াংবাসী। |
|
|
|
|
|