শহরের রাজপথ এবং ফুটপাথ আটকে রাজনৈতিক দলের মিছিল-জনসভায় নিয়ন্ত্রণ আনতে আদালত তৎপর হলেও রাজনৈতিক দলগুলো ততটা নয়। প্রায় এক বছর আগে আদালত সবক’টি রাজনৈতিক দলকে হলফনামা দিয়ে এ ব্যাপারে মতামত জানাতে বলে। কিন্তু দু’টি দল ছাড়া কেউই এখনও তাদের মতামত জানায়নি। যারা জানিয়েছে, তারাও মিটিং-মিছিলে নিয়ন্ত্রণের বিরোধী। অথচ, বুধবারও ফের একটি রাজনৈতিক সভা ঘিরে যানজটে আটকে পড়ে ধর্মতলা চত্বর। দুপুরবেলার ওই যানজটে ভোগান্তি হয় মানুষের।
এ দিনই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ এবং বিচারপতি মৃণালকান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ এই সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে নির্দেশ দেয়, এক মাসের মধ্যে সবক’টি দলকে মিটিং-মিছিল নিয়ে তাদের বক্তব্য হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। তার পরে হাইকোর্ট একটি সর্বদলীয় কমিটি গড়ে দেবে। সেই কমিটির পরামর্শ ও সুপারিশ মতো সাধারণ মানুষের অসুবিধা করে রাস্তা আটকে সভা-মিছিল নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আদেশ দেবে আদালত। |
ভরদুপুরে রাস্তা জুড়ে মানব-বন্ধন। বুধবার, চৌরঙ্গির ডোরিনা ক্রসিংয়ে। ছবি: সুদীপ আচার্য |
পথ আটকে মিটিং-মিছিল নিয়ে এই মামলাটি করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। শহরের কেন্দ্রে সভা এবং মিছিলের জেরে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বন্ধ করতে আদালতের কাছে নিয়ন্ত্রণ আরোপের আর্জি জানান সুভাষবাবু। তিনি চান, মিছিল এমন ভাবে হোক যাতে যানবাহন বন্ধ না হয় কিংবা সাধারণ মানুষ ভোগান্তির মধ্যে না পড়েন। কারণ, এমনিতেই শহরের ফুটপাথ দখল করে রেখেছে হকারেরা।
এ দিকে, এ দিনই দুপুরে ফের শহরের কেন্দ্রে জমিয়ত-ই-উলেমায়ে-হিন্দ নেতা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর সভা ঘিরে প্রচণ্ড যানজট হয় ধর্মতলা চত্বরে। ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, ওই সভার কারণে সকাল থেকেই যান চলাচলে সমস্যা শুরু হয়েছিল রবীন্দ্র সরণি, জওহরলাল নেহরু রোডে। এর পরেই দুপুর ১টা নাগাদ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ধর্মতলা। জওহরলাল নেহরু রোড, গভর্নমেন্ট প্লেস (ইস্ট), এস এন ব্যানার্জি রোড-সহ বিভিন্ন রাস্তায় বহুক্ষণ আটকে থাকে গাড়ি। ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ।
আদালতে এ দিন এসইউসি-র তরফে তাঁদের আইনজীবী হলফনামা পেশ করে জানান, রাস্তা এবং ফুটপাথ আটকে মিছিল বা সভা করা নিয়ে তাঁরা কোনও নিয়ন্ত্রণ চান না। বিজেপি-র পক্ষ থেকেও আগে জানানো হয়েছিল, তাঁরা মিছিল বা সভা করায় যে কোনও নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে। তাঁদের যুক্তি, সভা বা মিছিল মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। তা নিয়ন্ত্রণ করা সংবিধান বিরোধী।
সিপিএমের আইনজীবী এ দিন জানান, তাঁদের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য হলফনামা তৈরি করে রেখেছেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তিনি আদালতে হাজির হতে পারছেন না বলে হলফনামা জমা দেওয়া যাচ্ছে না। গত অগস্ট মাসেও ওই আইনজীবী একই যুক্তিতে সিপিএমের হলফনামা আদালতে জমা দেননি।
অন্য দিকে, এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ আর একটি নির্দেশে রাজ্য সরকারকে হকার নীতি তৈরি করে আদালতকে জানাতে বলেছে। সরকার পক্ষের আইনজীবী এবং কলকাতা পুরসভার আইনজীবীকে এ দিন জানিয়ে দেওয়া হয়, জাতীয় হকার নীতি মেনে চার সপ্তাহের মধ্যে ওই হকারনীতি তৈরি করতে হবে।
|