দায় এড়াচ্ছে সব পক্ষই
ট্যাক্সির মিটারে অনিয়মই যেন চালকের ‘অধিকার’
নিয়ম আছে, কিন্তু দেখে কে? কার্যত এই প্রশ্নের ফাঁক গলে চলছে ট্যাক্সির ‘যথেচ্ছাচার’।
ডিজেলের দাম বেড়েছে। দাম বেড়েছে যন্ত্রাংশেরও। কিন্তু সরকার ট্যাক্সির ভাড়া বাড়াতে রাজি হয়নি। যাত্রীদের অভিযোগ, তাই মিটারে কারচুপি করে ঘুরপথে বাড়তি টাকা আদায় করছেন ট্যাক্সিচালকদের একাংশ। ট্যাক্সিমালিকদের সংগঠনগুলির বক্তব্য, ভাড়া না বাড়লে এমন হবেই। মিটারে কারচুপি ধরার দায়িত্ব পুলিশের। ট্যাক্সিচালকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেবে তারাই। পুলিশ অবশ্য পাল্টা বলছে, ট্যাক্সির নথিপত্র পরীক্ষার দায়িত্ব তাদের হলেও মিটারে কারচুপি রোখার ভার তাদের নয়। আর এই দুইয়ের ফাঁক গলেই রমরমিয়ে চলছে ‘ট্যাক্সি-রাজ’।
ফুলবাগানের বাসিন্দা গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “কয়েক মাস আগে অফিস যেতে ৬০ টাকার মতো ভাড়া লাগত। এখন একই দূরত্বে মিটারে ৭০ টাকা উঠছে। মিটারের কারচুপি নিয়ে কিছু বলতে গেলে চালকরা স্পষ্ট বলছেন, এ ছাড়া কোনও উপায় নেই।” আর এক নিত্যযাত্রী, নাকতলার বাসিন্দা দেবাংশু মিত্র বলেন, “মিটারে কারচুপি ছাড়াও ভাড়ার উপরে অনেক সময়েই বাড়তি টাকা দাবি করছেন ট্যাক্সিচালকেরা। না দিলে ট্যাক্সি মিলছে না।”
মিটারে কারচুপির কথা জানে ট্যাক্সিমালিকদের সংগঠনগুলিও। তাদেরও বক্তব্য, গত কয়েক বছরে সাত-আট বার ডিজেলের দাম বেড়েছে। দাম বেড়েছে যন্ত্রাংশেরও। কিন্তু ট্যাক্সি-ভাড়া বাড়েনি। তাই লাভ ক্রমশ কমেছে চালকদের। অবস্থা এমন যে, সংসার চালাতে তাঁদের নাভিশ্বাস উঠছে। এই অবস্থায় অনেকেই কারচুপির আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে সংগঠনগুলি জানায়। তাদের বক্তব্য, ভাড়া না বাড়ালে এই সমস্যা আরও বাড়বে। আখেরে ক্ষতি হবে যাত্রীদেরই।
রাজ্য অবশ্য ট্যাক্সির ভাড়া না বাড়ানোর কথা ট্যাক্সিমালিক সংগঠনগুলিকে জানিয়ে দিয়েছে। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র জানান, ট্যাক্সি-ভাড়া এখনই বাড়ছে না। উল্টে শহরে ট্যাক্সিচালকদের অরাজকতা রুখতে নির্দেশিকা তৈরি করেছে পরিবহণ দফতর। মিটারের কারচুপি রুখতে সব ট্যাক্সিতে প্রিন্টেড মিটার লাগাতে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন-এর তরফে জানানো হয়েছে কলকাতায় ট্যাক্সি চলে প্রায় ৩৩ হাজার। তার মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার ট্যাক্সিতে প্রিন্টেড মিটার রয়েছে। অথচ যাত্রীদের অভিজ্ঞতা, কলকাতার প্রতি ৩০টি ট্যাক্সির একটিতেও প্রিন্টেড মিটারের সুবিধা মেলে না। আবার কোনও কোনও ট্যাক্সিতে মিটারের প্রিন্টেড স্লিপ পাওয়া গেলেও তাতে কিলোমিটারের উল্লেখ প্রায়শই থাকে না।
বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিমল গুহ বলেন, “কলকাতার অধিকাংশ যাত্রীই ট্যাক্সির ভাড়া দিয়ে প্রিন্টেড স্লিপ নেন না চালকদের থেকে। ফলে চালকদের একাংশের প্রিন্টেড স্লিপ না দিয়ে মিটারে দুর্নীতি করাটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।” তাঁর কথায়, “মিটারে কারচুপি হচ্ছে কি না অর্থাৎ প্রিন্টেড স্লিপ বেরোচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব পুলিশেরই। পুলিশ চালকদের কাছ থেকে ঘুষ নেবে, অথচ যাত্রী পরিষেবার বিষয়টি দেখবে না, তা হয় না।” অন্য দিকে, ট্যাক্সিমালিক সংগঠনগুলির বামপন্থী শাখার সম্পাদক প্রমোদ ঝা জানান, ট্যাক্সিচালকদের দুর্নীতি রোধের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার তাঁদের নেই। তা করতে পারে একমাত্র পুলিশ প্রশাসনই। সংগঠনের কাছে কোনও চালক সম্পর্কে দুর্নীতির অভিযোগ এলে সেই চালককে গাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে বয়কট করা হয় বলেও তিনি জানান।
ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ট্যাক্সির ভাড়া বাড়াতে বলছে ডান-বাম সব ট্যাক্সিমালিক সংগঠনই। কিন্তু মিটারে কারচুপির বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপের প্রশ্নে দায় এড়াচ্ছেন সবাই। ফলে দুর্ভোগে যাত্রীরা। কলকাতা পুলিশ জানায়, যে কোনও গাড়ির লাইসেন্স ও পরিবেশ দূষণ রোধ সম্পর্কিত নথি দেখার ভার পুলিশের। কিন্তু ট্যাক্সির মিটারে কারচুপি চলছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব পুলিশের নয়। ট্রাফিক আইনে এমন কিছু লেখা নেই। তবে যাত্রী পুলিশের কাছে নির্দিষ্ট ট্যাক্সির নম্বর দিয়ে চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি খতিয়ে দেখার চেষ্টা করে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “কলকাতার ট্যাক্সি পরিষেবার বদনাম ঘোচাতে তৎপর রাজ্য। তাই দ্রুত নির্দেশিকা কার্যকরী করতে চায় সরকার।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.