মন্ত্রীর হুমকিই সার, ট্যাক্সির প্রত্যাখ্যানের ধারাবাহিকতা চলছেই। যার সাম্প্রতিকতম ‘বলি’ হৃদরোগে আক্রান্ত এক বৃদ্ধা।
অভিযোগ, কাছাকাছি হাসপাতালে বৃদ্ধাকে নিয়ে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না একবালপুরের একটি ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের চালকেরা। সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় পথেই মৃত্যু হয় আবেদা খাতুন নামে সত্তরোর্ধ্ব ওই বৃদ্ধার। ঘটনাচক্রে, যে ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে ঘটনাটি ঘটে, সেখানেই ঝোলানো বোর্ডে সভাপতি হিসেবে লেখা ছিল খোদ পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের নাম। বৃদ্ধার মৃত্যুর পরে বুধবার রাতে উত্তেজিত জনতা স্ট্যান্ডে ভাঙচুরের সময়ে ওই বোর্ডটিও ভেঙে দেয় বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।
স্থানীয় সূত্রে খবর, একবালপুরের ব্রাউনফিল্ড রো-এর বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব আবেদা খাতুন মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। বৃদ্ধার ছেলে আনোয়ার বুধবার জানান, মা-কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ির কাছে হুসেন শাহ পার্ক সংলগ্ন ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে যান তিনি। আনোয়ার বলেন, “ওরা জিজ্ঞাসা করল, কোথায় যাব। মা-র অসুস্থতার কথা বললাম। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনেও কোনও অনুরোধে কেউ কান দিল না।” পরে রিমাউন্ট রোড থেকে অন্য ট্যাক্সিতে বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, পথেই মৃত্যু হয়েছে আবেদার। বুধবার রাত পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করেননি পরিজনেরা। আনোয়ার বলেন, “যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। নালিশ করে আর কী হবে!”
লিখিত অভিযোগ না-পাওয়ায় বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বলেন, “ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ না-পেলে কোনও ট্যাক্সিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করার আইনি ক্ষমতা পুলিশের নেই। লিখিত ভাবে জানানো হলে তদন্ত হবে। অভিযুক্ত ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে মোটর ভেহিক্লস আইনে মামলাও রুজু হবে।”
মন্ত্রিত্বে আসার পর থেকেই ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যান রুখতে ‘কঠোর’ দাওয়াই দেওয়ার কথা বারবার বলে আসছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। এ দিনও তিনি জানান, একবালপুরের ওই পরিবারের অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি, ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের বোর্ডে তাঁর নাম থাকার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, “মন্ত্রী হওয়ার পরে কোথাও আমার নাম লেখা বোর্ড টাঙাতে নিষেধ করেছি। তবুও কয়েক জায়গায় তা রয়েছে বলে খবর পেয়েছি। বিরোধীরা সরকারকে কলঙ্কিত করতে এ সব চক্রান্ত করছে। সে সব সরিয়ে নেওয়া হবে।”
মাস তিনেক আগে আনোয়ারের মতোই অভিজ্ঞতা হয়েছিল ওই পাড়ারই আব্দুল ওয়াহিদের। ওই একই স্ট্যান্ডের চালকদের প্রত্যাখ্যানের জেরে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর বাবা আব্দুল মজিদের। ওই তরুণ বলেন, “বাবার শরীর হঠাৎ খারাপ হয়েছিল। অনেক অনুরোধেও ওদের মন গলল না। রিকশা করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় বাবার।” হাসপাতাল বা জরুরি প্রয়োজনে ওই স্ট্যান্ডে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে মহম্মদ ফিরোজ, শেখ রইস আহমেদ, গুলজারদেরও। স্থানীয় এক প্রৌঢ়া বলেন, “শরীর খারাপ হওয়ায় ট্যাক্সি নিতে গিয়েছিলাম। কেউ যেতে চাইল না। এক জন বলল, মরে গেলেও নিয়ে যাব না।”
আনোয়ারের মতো তাই ওই ট্যাক্সিচালকদের সহজে রেয়াত করতে রাজি নন ব্রাউনফিল্ড রো, হুসেন শাহ রোড, দলু সরকার লেন, দেবী চৌধুরী রোডের বাসিন্দারা। আজ, বৃহস্পতিবার স্থানীয় থানায় এ নিয়ে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার কথাও জানান তাঁরা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, হুসেন শাহ পার্কের সংলগ্ন ওই ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে চালকেরা বরাবরই কম দূরত্বে যেতে চান না। তাঁদের বিরুদ্ধে উঠেছে মদ খেয়ে ইভটিজিং-এর অভিযোগও। পুলিশের কাছে নালিশ জানিয়েও কোনও ফল মেলেনি। বুধবার সন্ধ্যায় ভেঙে দেওয়া ওই ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে এ নিয়ে জবাব দেওয়ার জন্য কারও খোঁজ মেলেনি।
পরিবহণমন্ত্রী এ দিন জানান, ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যান সংক্রান্ত অভিযোগ-সহ কোনও ঘটনা, দুর্ঘটনার খবর দিতে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল-রুম খোলা হচ্ছে।
|