অরুণ মুখোপাধ্যায় • শান্তিনিকেতন |
দর্শকদের মতে, এই নাটকে শিল্পের মেল বন্ধনের পাশাপশি পরিবেশ তথা জমি অধিগ্রহণের প্রেক্ষাপট তুলে আনা হয়েছে। আবার বিনোদনের ক্ষেত্রে নাটকটি পেয়েছে এক অন্য মাত্রাও। তাই তো সলিল সরকার এর ‘ভাত জ্যোৎস্না’ নাটক দেখার জন্য গত ১২ ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যায় বিশ্বভারতীর কলাভবন চত্বরের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে উপচে পড়ল দর্শক ।
নাট্যকার ও নির্দেশক সলিল সরকার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র এবং বর্তমানে বিশ্বভারতীর সঙ্গীত ভবনের নাটক বিভাগের অতিথি অধ্যাপক। নিজেকে বামপন্থী মতাদর্শের বলে দাবি করে সত্তরের দশক থেকে নাটক করা মানুষটি জানান নন্দীগ্রামের ঘটনায় যথেষ্ট বিচলিত হয়েই তাঁর এই নাটক ভাবনা।
নন্দীগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে রচিত তাঁর ‘ভাত জ্যোৎস্না’ নাটকের মূল চরিত্র ভাত। |
‘ভাত জ্যোৎস্না’ নাটকের একটি দৃশ্য। ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। |
নাটকের অন্যতম প্রধান চরিত্র জমিন ভাত খেয়েই তৃপ্ত হয়। সে তার স্ত্রী, গাছ, নদী, মাটি সব কিছুকেই ভাত ভাবে। হঠ্যৎ এক বিদেশিনি জমিনকে কোক, পটাটো চিপস এর মাধ্যমে ভাত খাওয়া ভোলানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও ভোলে না সে। এরপরই কী করে যেন জমিনের মৃত্যু হয়। হঠাৎই পে লোডার গাড়ি ঢুকে পড়ে চারদিক দখল করে নেয়। জমিনের মৃতদেহে ছড়িয়ে পড়ে প্রচুর সাদা খই। নাটকের শুরুতেই চোখে পড়ে দুটি জ্বলন্ত উনুন, যার একটিতে ফুটছে ধান এবং অন্যটায় ভাত। নাট্যকার জানান, দুই মহিলার মুখের আদলে উনুন দু’টিকে তৈরি করা হয়েছে। নাটকে ব্যবহৃত লোকসঙ্গীত ফুটিয়ে তুলেছে নাটকের গ্রামীণ মেজাজও। থার্ড থিয়েটারের আঙ্গিকের এই নাটকে রয়েছে প্রতীকী ব্যঞ্জনা, নেই কোন নির্দিষ্ট মঞ্চ। তাই কলাভবনের চিত্রকলা ভবনের প্রধান সঞ্চয়ন ঘোষের পরিকল্পনায় কলাভবন প্রাঙ্গণের প্রায় ৫০০ মিটার এলাকায় রামকিঙ্কর বেজের সাঁওতাল পরিবার থেকে কলের বাঁশি ও ধান ঝাড়াই এর ভাস্কর্য মূর্তিগুলিও কখন যেন নাটকটার চরিত্র হয়ে যায়।
চিত্রকর যোগেন চৌধুরী নাটকটিকে ‘দুঃসাহসিক’ বলে উল্লেখ করে বলেন, “নিপুণভাবে পরিবেশ ও নান্দনিক বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। পরিবেশ, চাষের জমি অন্য কাজে ব্যবহার উঠে এসেছে এই নাটকে।” |