সম্প্রতি একের পর এক শহরে বিস্ফোরণের জন্য তেহরানকেই কাঠগড়ায় তুলছে ইজরায়েল। আহমদিনেজাদের ইরান কিন্তু তা নিয়ে বিশেষ চিন্তিত বলে মনে হচ্ছে না। প্রবল আন্তর্জাতিক চাপ ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বুধবার দেশের পারমাণবিক চুল্লিতে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি জ্বালানি-পাত ব্যবহার শুরু করে দিল তারা। একই সঙ্গে, নয়াদিল্লির বিস্ফোরণে কারা ‘আসল’ দোষী তা ভারতই ভাল বিচার করবে বলে জানিয়ে দিয়ে সুকৌশলে ইজরায়েলের সঙ্গে ভারতের উপরেও পাল্টা চাপ তৈরি করে দিল তারা।
দেশের পরমাণু কর্মসূচি চালানো নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ, আমেরিকা-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ইরানের উপরে। কিন্তু সে সব গায়ে না মেখে, এ দিন সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ২০% ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ জ্বালানি পাত তাদের পারমাণবিক চুল্লিতে ব্যবহার শুরু করে দিল তেহরান। ব্যবহার শুরু হল দেশে তৈরি সেন্ট্রিফিউজ রডেরও। বুধবার হওয়া এই পরীক্ষা দেশের সরকারি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারও করা হয়। যেখানে প্রেসিডেন্ট আহমদিনেজাদ দাবি করেন, এর ফলে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে পরমাণু জ্বালানি তৈরি করার বিষয়ে দু’ধাপ এগিয়ে গেল তেহরান। যে প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানইয়াহু জানিয়েছেন, সন্ত্রাসকে মদত দিয়ে বিশ্বে শান্তি পরিস্থিতির সাম্য নষ্ট করছে তেহরান। নয়াদিল্লি ও ব্যাঙ্ককে বিস্ফোরণ তারই ফলশ্রুতি। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত। |
নেতানইয়াহু’র অভিযোগ অবশ্য নেহাতই ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে ভারতে ইরানের রাষ্ট্রদূত মেহদি নাবিজাদে বুধবার সাংবাদিকদের জানান, “ইজরায়েলের অভিযোগ আমরা স্বীকারও করছি না, অস্বীকারও করছি না। এত তাড়াতাড়ি কী ভাবে ঘটনার সঙ্গে তেহরানের যোগ সম্পর্কে ইজরায়েল নিশ্চিত হল, তা বোঝা যাচ্ছে না।” পাশাপাশি বিস্ফোরণে কারা ‘দোষী’, সেই বিচারের বিষয়টি তিনি নয়াদিল্লির বিবেচনার হাতে ছেড়ে দেওয়াই ভাল বলে মন্তব্য করে জানান, ঘটনাটি যে হেতু নয়াদিল্লিতে ঘটেছে, তাই বিষয়টি ভারতের বিবেচনাতেই ছেড়ে দেওয়া ভাল। বিস্ফোরণ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে নয়াদিল্লির ভূমিকার প্রশংসা করে নাবিজাদে বলেন, “ভারত-ইরান সম্পর্কের ভিত অত্যন্ত মজবুত। বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা বজায় রাখতে আগ্রহী দুই দেশই। কোনও তৃতীয় দেশ এর মধ্যে ঢুকে তা খারাপ করতে পারবে না।”
নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের তরফেও বুধবার জানানো হয়েছে, দোষী বা ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনও সূত্র এখনও মেলেনি। তাই ইজরায়েলের দাবি মেনে, এই মুহূর্তে ইরানের সঙ্গে বিস্ফোরণের যোগ থাকা নিয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানানো সম্ভব হচ্ছে না। নয়াদিল্লিতে বিস্ফোরণের জেরে ভারত-ইরান সম্পর্কে কোনও বিরূপ ছায়া পড়বে না বলে এ দিন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মাও। এ দিকে, নয়াদিল্লির বিস্ফোরণে কারা জড়িত তা নিয়ে চাপানউতোরে আটচল্লিশ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। তবু এর পিছনে কারা জড়িত সে সম্পর্কে দিল্লি পুলিশের হাতে জোরালো কোনও সূত্র আসেনি। তদন্তকারীরা একটি লাল মোটরবাইক পেলেও, সেটিই যে বিস্ফোরণ ঘটানোর সময় ব্যবহার করা হয়েছিল সে সম্পর্কে কোনও প্রমাণ পুলিশের হাতে আসেনি।
এ দিকে, তাইল্যান্ডে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত ইৎঝাক সোহম এ দিন দাবি করেছেন, তাইল্যান্ডে বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে ধৃত দুই ইরানির সঙ্গে নয়াদিল্লিতে বিস্ফোরণে জড়িতদের যোগাযোগ রয়েছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। তৃতীয় সন্দেহভাজনকেও এ দিন ধরা হয়েছে মালয়েশিয়া থেকে। পাশাপাশি, তাই বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, সেখানে বিস্ফোরণের পিছনে ইরান বা অন্য কোনও দেশ বা জঙ্গিগোষ্ঠীর জড়িত থাকার বিষয়ে পাকাপোক্ত কোনও প্রমাণ তাঁদের হাতে নেই। তবে, নয়াদিল্লিতে যে ধরনের ‘স্টিকি ম্যাগনেটিক বম্ব’ ব্যবহার করা হয়েছিল, তাইল্যান্ডেও সেই একই ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করেছিল দুষ্কৃতীরা।
এরই মধ্যে এ দিন নয়াদিল্লিতে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি দু’টি ও বিস্ফোরণস্থল ঘুরে দেখেন ইজরায়েল দূতাবাসের নয় সদস্যের একটি তদন্তকারী দল। যদিও কিছুটা আশ্চর্যজনক ভাবে ‘রাজনৈতিক কারণ’ দেখিয়ে তাঁদের বিস্ফোরণস্থল ও গাড়িদু’টি পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন এনএসজি’র ডিজি আর কে মেধেকার। তিনি আরও জানান, ভারতে ওই ‘স্টিকি ম্যাগনেটিক বম্বের’ ব্যবহার, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত ডিটোনেটর ও ট্রিগার, সবক’টি ক্ষেত্রেই আধুনিক প্রয়োগরীতির প্রয়োগ দেখিয়েছে দুষ্কৃতীরা। দিল্লি পুলিশের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, মনে করা হচ্ছে প্রায় ২৫০-৩০০ গ্রাম বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল ভারতে প্রথম ব্যবহৃত ওই ‘স্টিকি ম্যাগনেটিক বম্বে’। তদন্তে নয়াদিল্লিকে সাহায্য করার প্রস্তাব দিয়েছে আমেরিকাও। |