কারাগারে আগুন লেগে অন্তত সাড়ে তিনশো বন্দির মৃত্যু হল হন্ডুরাসে। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটে রাজধানী তেগুসিগাল্পা থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে কোমায়াগুয়ায়। দফতর জানিয়েছে অন্তত ৩৫৭ জন এই ঘটনায় মারা গিয়েছেন। এর মধ্যে এক জন ছাড়া সকলেই কয়েদি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি অন্তত ৩৫ জন।
এ যেন সত্যিই হন্ডুরাসে হাহাকার।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত এগারোটায় আগুন লাগে কারাগারটিতে। কোমায়াগুয়ার দমকল বিভাগের মুখপাত্র জানিয়েছেন, কারাগারের আগুন লাগার পরেই তা পাঁচটি বিভাগে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ছিলেন ৮০০-রও বেশি কয়েদি। কারাগারের ছাদ ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারেন কয়েক জন। কিন্তু অধিকাংশই সে সুযোগ পাননি। দমকলের দাবি, অগ্নিকাণ্ডের সময় কারারক্ষীরা পালিয়ে যান। ফলে তালা খুলে বন্দিদের বার করে আনা যায়নি। বদ্ধ কারাগারে আগুনে পুড়ে এবং ধোঁয়ায় দম আটকে মারা যান বহু কয়েদি। এক দমকল কর্মীর কথায়, “জেলের ভিতরে তাকানো যাচ্ছে না। কয়েকটা দেহ এমন ভাবে পুড়েছে, শনাক্ত করাই অসম্ভব।” এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে দমকল। আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়তেই কারাগারের বাইরে ভিড় জমাতে থাকেন বন্দিদের আত্মীয়রা। তবে আগুনের দাপটে ভিতরে ঢুকতে পারেননি কেউই। রাতভর উদ্বেগ আর আশঙ্কা নিয়েই কেটেছে তাঁদের। |
কিন্তু এত বড় আগুন লাগল কী ভাবে? তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে কারাগার এবং দমকল কর্তৃপক্ষ। কোনও বন্দির হাত থাকার ঘটনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারা বিভাগের প্রধান দানিয়েল ওরেল্লানার কথায়, “শর্ট সার্কিট হতে পারে। অথবা কোনও কয়েদি তোশক জ্বালিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়ে থাকতে পারে।”
দমকল কর্মীদের দাবি, আগুন যখন জ্বলছিল, কারাগারের ভিতরে গুলিও চলছিল। তাই ভিতরে ঢুকতে সমস্যা হয় তাঁদের। হন্ডুরাসের সংবাদমাধ্যমও জানিয়েছে, আগুন লাগার আগে কারাগারের ভিতরে কয়েদিদের মধ্যে গণ্ডগোল চলছিল। দাঙ্গাও লেগে থাকতে পারে। ওরেনাল্লা অবশ্য বলেন, সেই সময়ে ঠিক কী ঘটেছিল তা তদন্ত হলেই জানা যাবে। তবে গুলি চলার খবর ঠিক নয়।
তবে, এই দাবি-পাল্টা দাবির মধ্যেই ফের সামনে আসছে হন্ডুরাসের কারাগারগুলির দুর্দশার চিত্র। দেশে বন্দির সংখ্যা প্রায় বারো হাজার। এর মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু কুখ্যাত অপরাধীও। জেলে দাঙ্গাও প্রায়ই ঘটে। মার্কিন বিদেশ দফতরের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, কারাগারগুলিতে বন্দি সংখ্যা অস্বাভাবিক বেশি। জীবনযাপনের ন্যুনতম পরিবেশও সেখানে নেই। মঙ্গলবার রাতের অগ্নিকাণ্ড এই বেহাল কারাব্যবস্থারই ফলশ্রুতি কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। |