উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়
চার্জশিট জমা পড়েনি কেন, উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী
পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়েরের পরে দু’বছর হতে চলল। কিন্তু উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দুর্নীতির মামলার চার্জশিট জমা পড়েনি। এতে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে বিষয়টি জানতে পেরে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি।”
সরকারি সূত্রের খবর, সেই নির্দেশ পেয়েই মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে সংশ্লিষ্ট সব দফতরে যোগাযোগ করে কেন চার্জশিট পেশে সমস্যা হচ্ছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। চার্জশিট পেশে অস্বাভাবিক দেরির জন্য মামলাটি খারিজ হয়ে যাওয়ার যে আশঙ্কা রয়েছে তা মাথায় রেখে সচিবালয়কে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দফতরের এক শীর্ষ কর্তাকে জানিয়েছেন। উচ্চ শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও চার্জশিট পেশের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে তৎপর।
মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করায় মামলার চার্জশিট পেশের প্রক্রিয়া গতি পাবে বলে মনে করছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অরুণাভ বসুমজুমদার। উপাচার্য বলেন, “আশা করছি, মামলার অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে। দীর্ঘ দিন ধরে চাইছি, দ্রুত মামলার চার্জশিট দাখিল করে বিচার-পর্ব শুরু হোক।” পক্ষান্তরে, দুর্নীতির অভিযোগ যাঁদের বিরুদ্ধে রয়েছে, তাঁরাও দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি চান। কারণ, যাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের জন্য পুলিশ অনুমতি চেয়েছে, সেই প্রাক্তন উপাচার্য পীযূষকান্তি সাহা ও প্রাক্তন পরীক্ষা নিয়ামক তথা রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকার গোড়া থেকেই দাবি করেছেন, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। এমনকী, তাঁর বিরুদ্ধে এক টাকার দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে নিজে ইস্তফা দেবেন বলেও বারেবারেই জানিয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন পরীক্ষা নিয়ামক তথা রেজিস্ট্রার দিলীপবাবু।
বস্তুত, আর্থিক দুর্নীতির ওই অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার-শিক্ষক-কর্মীদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। সেই কারণে উপাচার্যের এফআইআর করার সিদ্ধান্ত বাম আমলের কর্মসমিতির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য অনুমোদন করেননি। সেই সময়ে আচার্য তথা রাজ্যপালের দফতরের মত গ্রহণের পরে উপাচার্য এফআইআর করেন। ঘটনাচক্রে, তার পরেই উপাচার্যের ইস্তফার দাবিতে সরব হয় দার্জিলিং জেলা সিপিএম।
ওই সময়েই উপাচার্যের পদক্ষেপ সমর্থন করে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। গত বিধানসভা ভোটেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা দুর্নীতির অভিযোগকে প্রচারে হাতিয়ার করে তৃণমূল জোট। মামলা না এগোনোয় পুলিশের উপরে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির অভিযোগ নিয়ে চাপান-উতোর চলে। তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেব ভোটের প্রচারে ঘোষণাও করেন, ক্ষমতায় এলে দুর্নীতিতে যাঁরা অভিযুক্ত প্রমাণিত হবেন, তাঁদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমানে গৌতমবাবু উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, “বাম আমলে যে-সব দুর্নীতি হয়েছে তাতে জড়িত প্রমাণ হলে কেউ ছাড় পাবেন না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে কথা বলে দিয়েছেন। এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, উপাচার্য অরুণাভবাবু বিশেষ ক্ষমতাবলে চার্জশিট পেশের অনুমতি দিলেও তা ‘আইনানুগ নয়’ বলে পুলিশ অগ্রাহ্য করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিধি অনুযায়ী, প্রাক্তন উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারের মতো পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির মামলার চার্জশিট পেশের অনুমতি দিতে পারে কর্মসমিতি। সেখানে যদি অনুমোদন না মেলে, তা হলে বিষয়টি আচার্য তথা রাজ্যপালের বিবেচনার জন্য পাঠানোই রীতি।
রাজ্যে তৃণমূল জোট দখলের পরে ৮ মাস পেরোতে চললেও এখনও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি গঠিত হয়নি। ফলে, ওই মামলার চার্জশিট পেশের জন্য অনুমতি মেলার প্রক্রিয়াও থমকে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টি আচার্যের কাছে জানিয়েছেন উপাচার্য, শিক্ষা দফতরের হস্তক্ষেপও চেয়েছেন।

একনজরে
২০০৮ ‘দুর্নীতি’, তদন্ত-রিপোর্ট।
মার্চ, ২০১০ উপাচার্যের এফআইআর।
জুন, ২০১১ চার্জশিটের অনুমতি চাইল পুলিশ।
জুলাই, ২০১১ উপাচার্যের দেওয়া অনুমতি অগ্রাহ্য।
সেপ্টেম্বর, ২০১১ অনুমতির জন্য আচার্যের কাছে ও শিক্ষা দফতরে আর্জি উপাচার্যের।
ফেব্রুয়ারি, ২০১২ চার্জশিট পেশ হয়নি। খোঁজ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.