এক জন ৮৬, অন্য জন ৭৬। তিপান্ন বছর ধরে পরস্পরের হাত ধরে আছেন তাঁরা।
বহরমপুরের ক্যান্টনমেন্ট রোড থেকে হেড পোস্ট অফিসের খোলা বারান্দায় রোজ দুপুরে এই প্রবীণ দম্পতির হাত ধরে হেঁটে যাওয়া দেখছেন মানুষ। ডাক কর্মীরা জানাচ্ছেন, গত চল্লিশ বছর ধরে এ ভাবেই ওঁরা পরস্পরের হাত ধরে আছেন। রোজ আসেন ডাকঘরে। উমাদেবী মৃদু হাসেন, “প্রথম প্রথম মনে মনেই ওঁকে আঁকড়ে ছিলাম। এখন আমার হাত না ধরলে উনি পড়ে যাবেন যে!” আর জড়ানো গলায় অশীতিপর অনিল আঢ্য বলেন, “আমরা এ-ওর হাত না ধরলে চলবে কী করে!”
আজকের মতো প্রতিদিনই তাঁদের ভ্যালেন্টাইন’স ডে। |
অনিলবাবুর বাড়ি বহরমপুরের সোনাপট্টি এলাকায়। উমারানির সঙ্গে বিয়ে হয় ৫৩ বছর আগে। কয়েক বছর ঠিকাদারি করেছিলেন। তার পর ওই দম্পতি ডাকবিভাগের সঞ্চয় প্রকল্পের এজেন্টের কাজ নেন। সেই থেকে তাঁরা দু’জনে প্রতিদিন সোনাপট্টি থেকে রিকশায় চেপে ওই ডাকঘরে যান। উমাদেবী বলেন, “আমরা পুরনো কালের মানুষ। ভ্যালেন্টাইন’স ডে বুঝি না। কিন্তু যে অভয় হাত সারা জীবন আগলে রেখেছে, সেই হাত বয়সের ভারে কাঁপতে থাকলে আমাকেই তো শক্ত করে ধরে রাখতে হবে।” তিন কন্যার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাঁদের দাম্পত্যের মতোই তাঁদের কাছে ওই ডাকঘরের টানও দুর্নিবার। ডাকঘরের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার স্বপন চৌধুরী বলেন, “যাতায়াতের রিক্সাভাড়া ৪০ টাকা। কিন্তু কোনও কোনও দিন তাঁদের আয় হয় ১০ টাকা। তবুও প্রতিদিন স্বামী-স্ত্রীতে হাত ধরাধরি করে ডাকঘরে আসবেনই। দাম্পত্যই বলুন, ভ্যালেনটাইন বলনু আর কমর্র্ ক্ষেত্রের প্রতি টানই বলুন-- শিখতে হবে আঢ্য দম্পতির কাছ থেকে!” |