‘শ্রী’ পদ্ধতিতে চাষ বাড়াতে যন্ত্র দেবে প্রশাসন
দিনে দিনে চাষের খরচ বাড়ছে। সার, সেচ, কীটনাশকের পিছনে খরচের ঠেলায় লাভের গুড় পিঁপড়েয় খেয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় ধান চাষে অপেক্ষাকৃত কম খরচসাপেক্ষ অথচ অধিক ফলনশীল ‘শ্রী’ (এসআরআই বা সিস্টেম ফর রাইস ইনটেফিকেশন) পদ্ধতির চল বাড়াতে চাষিদের উইডার যন্ত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। প্রয়োজনীয় এই যন্ত্র কিনতে সাড়ে ২২ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। যার মধ্যে ২০ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দেবে প্রশাসন। আর বাকি দশ শতাংশ অর্থ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট চাষিকে। জেলা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন আধিকারিক প্রণব ঘোষ বলেন, “কৃষি দফতরের মাধ্যমে ওই টাকা দেওয়া হবে।” কৃষি দফতরের তথ্য আধিকারিক দুলাল দাস অধিকারী বলেন, “টাকা পেলেই আমরা কৃষকদের যন্ত্র কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। এসআরআই পদ্ধতিতে যেহেতু চাষের খরচ কম ও ফলন বেশি হয় সে জন্য এই পদ্ধতিকে কৃষকদের কাছে আকর্ষণীয় করতেই এই উদ্যোগ।”
শ্রী-পদ্ধতিতে ধান চাষে চাষিদের উৎসাহিত করার কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৮-০৯ সালেই। কৃষি দফতর জানিয়েছে, প্রতিটি ব্লকের কয়েক জন ইচ্ছুক চাষিকে পরীক্ষামূলক ভাবে এই চাষ-পদ্ধতিতে উৎসাহিত করা হয়। তাতে অবশ্য জেলায় সামগ্রিক ভাবে এই পদ্ধতি মানুষের মধ্যে খুব আকর্ষণীয় হয়েছে, তা বলা যায় না। কারণ, এখনও হাতে গোনা কিছু চাষি ছাড়া জেলার বেশিরভাগ মানুষই ওই পদ্ধতিতে চাষ করতে রাজি হননি। ব্যতিক্রম কেবলমাত্র ডেবরা ও গোপীবল্লভপুর-১ ব্লক। ওই দুই ব্লকের অনেক চাষিই এই পদ্ধতির চাষে উদ্যোগী হয়েছেন। কৃষি দফতর জানিয়েছে, সাধারণ পদ্ধতিতে ধান চাষ করলে যেখানে একর-প্রতি সাড়ে ৪ থেকে ৫ টন ধান উৎপাদন হয় সেখানে এই পদ্ধতিতে একর প্রতি ন্যূনতম ৫ টন থেকে ৫.২ টন ধান হবেই। অন্য দিকে, বীজের খরচও কম। সেই সঙ্গে ধান চারার মধ্যে দূরত্ব থাকায় রোগপোকার আক্রমণ কম হয়। ফলে কীটনাশকের খরচ কমে। সারের খরচও প্রায় ২০ শতাংশ কম। এই পদ্ধতির চাষে যেহেতু জমিতে জল রাখা যাবে না, তাই সেচের খরচও ৩০-৪০ শতাংশ কমে যায়। পরীক্ষামূলক চাষে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এ রকমই দেখা গিয়েছে বলে দাবি কৃষি দফতরের।
শ্রী-পদ্ধতির চাষে উৎসাহিত করার জন্য কৃষি দফতর বিভিন্ন এলাকায় আলোচনাসভাও করেছিল। সেই সঙ্গে কৃষকদের সাহায্যও দিয়েছে। চাষি-পিছু ওই সাহায্যের পরিমাণ ২৩২৫ টাকা। যার মাধ্যমে জমির ঘাস তুলে জমিতেই পুঁতে দেওয়ার জন্য উইডার যন্ত্রও দেওয়া হয়েছে। যে যন্ত্রের দাম প্রায় দেড় হাজার টাকা। আর বাকি টাকায় বীজ, সার দেওয়া হয়। এ ভাবেই চাষিদের উৎসাহিত করা হয়। এই পদ্ধতিতে চাষ করলে যেহেতু উইডার যন্ত্রটি অতি গুরুত্বপূর্ণ, সে জন্য যন্ত্রটি চাষিদের দিতেই হবে বলে কৃষি দফতরের অনুমান। নতুবা তাঁরা উৎসাহিত হবেন না। কারণ, ওই যন্ত্রের মাধ্যমে জমির ঘাস জমিতেই পুঁতে দেওয়া হয়। তাতে জমিতে আগাছা থাকে না, উল্টে ঘাস পচে সারের কাজ করে। তবে যন্ত্রটি হাতে করে ঠেলে চালাতে হয় বলে চাষিদের মধ্যে কিছুটা উৎসাহের অভাব রয়েছে বলেও কৃষি দফতরের পর্যবেক্ষণ। যন্ত্রটির সঙ্গে ইঞ্জিন থাকলে চাষিরা বেশি উৎসাহিত হতেন বলেই কৃষি দফতরের ধারণা। কিন্তু তা এখনও এখানে মেলে না।
তাই আপাতত, চাষিদের উৎসাহ দিতে হস্ত-চালিত এই যন্ত্রই অন্তত দেড় হাজার চাষিকে দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছিল কৃষি দফতর। জেলা প্রশাসন এ বারের ইনোভেশন তহবিল থেকে সেই অর্থ মঞ্জুরও করেছে। এক দিকে এই পদ্ধতিতে চাষে লাভ বেশি, সেই সঙ্গে যন্ত্রের দামের মাত্র দশ শতাংশ টাকা দিলেই যেহেতু যন্ত্রটি পাওয়া যাবে, তাই চাষিরা উৎসাহিত হবেন বলেই কৃষি দফতরের ধারণা। আলাদা ভাবে কেউ এই যন্ত্র কিনতে চাইলে ৫০ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থাও রয়েছে। দুলালবাবুর কথায়, “আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবিরে সফল চাষিদের ছবি দেখিয়ে অন্যদের উৎসাহ দিই। যাতে তাঁরা সেই সব চাষির সঙ্গে কথাও বলতে পারেন। তাতে তাঁরাই লাভবান হবেন। এ বার বেশি চাষিকে যন্ত্র দিলে এই পদ্ধতিতে চাষে উৎসাহ বাড়বে বলেই আমাদের অনুমান।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.