খোকাবাবু’র আসর ঘিরে নীরব ক্ষোভ এস আর এফ টি আই-এ (২০-১) খবরটির সঙ্গে ছাপা ছবিতে দেখেছি ‘উই কনডেম’ লেখা চত্বরে হাঁটছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবাদে প্রকাশ, ‘এসআরএফটিআই’-কে টালিগঞ্জের সঙ্গে সেতুবন্ধনের কাজে লাগালে তাকে একটি আঞ্চলিকতায় বেঁধে ফেলা হয়। সেটা বাঞ্ছনীয় নয়, এই অভিমত ওই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকদের। প্রসঙ্গত উল্লেখ করি, ‘রূপকলা কেন্দ্র’ নামে পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরই একটি সমাজ-সংযোগ-চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান আজ দশ বছর হল ‘বেঁচে’ আছে। নবীন ছাত্রছাত্রীরা বিশ্বমানের কৃৎকৌশলের সঙ্গে গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা, লোকসংস্কৃতি, ইতিহাসের জ্ঞানের মেলবন্ধন ঘটিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ শিখবেন। সত্যজিৎ রায়ের এই আগ্রহ থেকেই ভারত সরকার ও ইতালি চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে। এই চুক্তির রূপায়ণে এগিয়ে আসে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এক কথায়, চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রশিক্ষণ এবং অ্যানিমেশন নির্মাণের প্রশিক্ষণের জন্য পরিকাঠামো আছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান কেবল পশ্চিমবঙ্গে নয়, ভারতেও আর নেই। রূপকলা কেন্দ্র এক অর্থে যেমন আঞ্চলিক, তেমনই সর্বভারতীয় এবং আন্তর্জাতিকও। কাজেই টালিগঞ্জের সঙ্গে সেতুবন্ধনের জন্য মিটিং এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনায়াসেই রূপকলা কেন্দ্রের পরিকাঠামো ব্যবহার করতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটি তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের নিজস্ব, কাজেই অনুমতির জন্যও চিঠিপত্র লিখতে হবে না। গত বেশ কয়েক বছর ধরে রূপকলা কেন্দ্রের অসম্পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র দেখানোর উদ্দেশ্যে প্রোজেকশনের ব্যবস্থা করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে অনুরোধ গেছে। রূপকলা কেন্দ্রের কয়েকটি প্রশিক্ষণের ধারায় সামান্য অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ করে ভিডিয়ো টেকনোলজির সঙ্গে ফিল্ম মাধ্যমও শেখানোর ব্যবস্থা করা একেবারেই কঠিন নয়। অথচ রূপকলা কেন্দ্রর ছাত্রছাত্রীরা এখানে কৃৎকৗশল এবং মনোভঙ্গির প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করছেন মুম্বই চলচ্চিত্র শিল্পে, টালিগঞ্জে, হায়দরাবাদে, বিদেশে অ্যানিমেশন প্রজেক্টে এবং ফিল্মের মাধ্যমও তাঁরা আয়ত্ত করে সুনাম অর্জন করেছেন। অনিচ্ছুক এসআরএফটিআই-এর বদলে আগ্রহী রূপকলা কেন্দ্রর দিকে এ বার চলচ্চিত্র শিল্প ও কলাকুশলীদের দৃষ্টি পড়ুক। এতে মেলবন্ধন ঘটবে টেলিভিশন ও সিনেমার, রেডিয়ো-স্যাটেলাইট সঞ্চার ও মুদ্রিত কাহিনির, আঞ্চলিকতার ও আন্তর্জাতিকতার।
|
যোগসূত্র। ‘এসআরএফটিআই’-তে ‘খোকাবাবু’ ছবির প্রদর্শনে
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ছবির নায়ক দেব। |
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, হরনাথ চক্রবর্তীদের অভিনিবেশ পেলে আরও সম্প্রসারিত হবে সমাজ-সংযোগ তথ্যচিত্র নির্মাণের দিগন্তটিও। মা-মাটি-মানুষের সঙ্গে সংযোগ নির্মাণের এর চেয়ে উন্নততর ব্যবস্থা আর কী হতে পারে? গুজরাতের সাম্প্রদায়িক বর্বরতা, উত্তরবঙ্গের বন্ধ চা-বাগান, পশ্চিম মেদিনীপুরের জনজীবনের ছবিও রূপকলা কেন্দ্রর অতিথি নির্দেশক ও ছাত্রছাত্রীরাই তুলে এনে এখানে সম্পাদনা করেছিলেন। এখানকার অত্যাধুনিক স্টুডিয়োতে তোলা হয়েছিল ‘নেমসেক’ ছবির দৃশ্য। কয়েকশো সমাজ-সংযোগ শিক্ষকও যাদবপুর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে এখানে স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। রূপকলা কেন্দ্রর সমাজ সংযোগ চলচ্চিত্র উৎসব দশ বছরে পা দিয়ে বন্ধ হয়ে গেল, এমন একটি খবর মনখারাপকে গাঢ়তর করে তোলে। ছাত্র-শিক্ষক-কর্মীদের সম্মিলিত শ্রম ও অভিনিবেশে পরিবেশিত এই চলচ্চিত্র সম্মেলন সারা দেশে কোথাও নেই।
অনিতা অগ্নিহোত্রী। নয়াদিল্লি-২২
|
ত্রিবেণী তীর্থ থেকে সাঁকরাইল অবধি প্রবাহিত গঙ্গার শাখানদী সরস্বতী বহু ইতিহাসের সাক্ষী। সংস্কারের অভাবে ও দখলদারিতে নালায় রূপান্তরিত হয়ে অতীতের গৌরব হারিয়ে কালের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে আজকের এই মৃতপ্রায় সরস্বতী নদী। |
মাতৃস্বরূপা সরস্বতী নদীর প্রতি অবহেলা মনকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। এই নদীর তীরবর্তী কৃষিকার্যে-সমৃদ্ধ অঞ্চলের মাটি আজ উর্বরতা হারিয়েছে। সরস্বতী নদীকে কেন্দ্র করে জেলে, কুমোর, মাঝি প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষজন এক সময়ে যে ভাবে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তাঁদের সেই পথও প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে ‘মা-মাটি-মানুষে’র মর্যাদার কথা ভেবেই পরিবর্তিত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, আপনার সংবাদপত্রের মাধ্যমে সরস্বতী নদীর আশু সংস্কারের আবেদন রাখছি।
বীরেশ রায়। দেবীপুর, চন্দননগর, হুগলি |