মান্ধাতার আমলের উৎপাদন ব্যবস্থা এবং বাড়তি কর্মীর বোঝা নিয়ে ঘোরালো সঙ্কটে রাজ্যের সেন্ট্রাল ডেয়ারি।
উৎপাদন ক্রমেই কমছে। সংস্থার হাজার খানেক কর্মীর অর্ধেকের কাজ নেই। সেন্ট্রাল ডেয়ারির এ অবস্থায় রীতিমতো শঙ্কিত রাজ্যের প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতর। মহাকরণে এ নিয়ে সম্প্রতি দফতরের কর্তারা বৈঠকে বসেও মুশকিল আসানের পথ পাননি। অপর দুগ্ধ-সংস্থা মাদার ডেয়ারি লোকসান কমিয়ে লাভের দিকে এগোলেও দিশা পাচ্ছে না ‘সেন্ট্রাল ডেয়ারি’।
১৯৬২ সালে বিধানচন্দ্র রায় তৈরি করান এই সেন্ট্রাল ডেয়ারি। হরিণঘাটা, বেলগাছিয়া, বর্ধমান, কৃষ্ণনগর ও দুর্গাপুরে তৈরি হয় উৎপাদন ও বিপণনকেন্দ্র। এক সময়ে দৈনিক উৎপাদন ছিল ৩.৫ লক্ষ লিটারের উপর। এখন
তা গড়ে ৪০ হাজার লিটার। দুধ বিক্রি বাবদ মাসে আসছে বড়জোর ২৪ কোটি টাকা। আর শুধু বেতন খাতেই বরাদ্দ মাসে ২৫ কোটির উপর।
কেন সংস্থার এই হাল?
বছরের পর বছর বিভিন্ন উৎপাদন কেন্দ্রের বয়লার ও অন্য যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। জোড়াতালি দিয়ে চালাতে গিয়ে দুর্গাপুরের একমাত্র বয়লার বছরখানেক আগে বসে গিয়েছে। হরিণঘাটার একটি বয়লারও বসে যাওয়ার মুখে। বেলগাছিয়ায় বসানো হয়েছিল তিনটি বয়লার। দু’টি খারাপ। তৃতীয়টি মাঝে মাঝেই খারাপ থাকায় বন্ধ থাকছে উৎপাদন। ২০০৪ থেকে বন্ধ বর্ধমান ডেয়ারির উৎপাদনও। ২০০৬-এ কৃষ্ণনগর ডেয়ারির দায়িত্ব দেওয়া হয় একটি সমবায় সংস্থার হাতে। আগে ঘি, চকোলেট তৈরি হত সেন্ট্রাল ডেয়ারিতে। এখন সে সব ইতিহাস। সংস্থার ইনটাক কর্মী সমিতির কার্যকরী সভাপতি কানাই দাস বলেন, “আমরা কিছু প্রস্তাব দিতে চাই। এ কারণে রাজ্যে নয়া সরকার আসার পর মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রাণীসম্পদমন্ত্রী, সচিব, বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়েছি। কোনও উত্তর মেলেনি।”
মন্ত্রী-আমলারা কি সংস্থার হাল ফেরাতে উদ্যোগী নন?
সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার তথা রাজ্যের অতিরিক্ত দুগ্ধ কমিশনার সোমদত্ত দলাই বলেন, “কর্মীরা দুধের দাম বাড়িয়ে সংস্থা বাঁচাতে বলছেন। সরকার তাতে রাজি নয়। ৩ বছর আগে গবেষণাগারে নয়া সরঞ্জাম কিনতে প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ হয়। অকেজো বয়লার মেরামতির জন্যও বরাদ্দ হয়েছে কিছু অর্থ। তবে তিনি স্বীকার করেন, “বয়লার চালু করে উৎপাদন বাড়ালেও লোকসান বাড়বে। কারণ, বাড়তি উৎপাদনে যা ব্যয়, ‘জনতা’ ও ‘ডাবল টোন্ড’ দুধ বিক্রি খাতে আয় হবে তার চেয়ে কম। অন্য ডেয়ারির দুধের দামও অনেকটা বেশি।
তা হলে কি এভাবেই চলবে? লস্যি বিক্রি করে ক্ষতি কমাতে হরিণঘাটায় বসছে যন্ত্রপাতি। চকোলেট তৈরি করে লাভ করতে সহায়তা চাওয়া হয়েছে ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের কাছে। মাদার ডেয়ারি পারলে আপনারা কেন লোকসান ঠেকাতে পারছেন না? সোমদত্তবাবু বলেন, “মাদার ডেয়ারির পরিচালনমণ্ডলী মহাকরণের অনুমতি ছাড়াই ছোটখাট সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্তের অনুমোদন নিতে হয়।” সেন্ট্রাল ডেয়ারির জন্য ৩ বছর আগে রাজ্য একটি উপদেষ্টা সংস্থা দিয়ে সমীক্ষা করায়। তারা জানায় অর্ধেক কর্মী ‘উদ্বৃত্ত’। তাই কর্মী কমানোর সুপারিশও করে তারা। সোমদত্তবাবু স্বীকার করেন, সুপারিশ কার্যকর হয়নি। কৃষ্ণনগরের উৎপাদন কেন্দ্র হস্তান্তরিত হলেও কর্মীদের বেতন দিচ্ছে সেন্ট্রাল ডেয়ারিই। |