|
|
|
|
দিল্লি বিস্ফোরণে ‘স্টিকি ম্যাগনেটিক বম্ব’ |
বিস্ফোরণ ব্যাঙ্ককেও, ধৃত ‘ইরানি’ ভাড়াটে |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ফের বিস্ফোরণ! এ বার ব্যাঙ্ককে।
ভারত ও জর্জিয়ায় জোড়া বিস্ফোরণের ঘোর কাটতে না কাটতেই কেঁপে উঠল তাইল্যান্ডের রাজধানী। আর সেই ঘটনাতেও জড়িয়ে গেল ইরানের নাম।
সোমবারই নয়াদিল্লি-তিবলিসিতে ইজরায়েল দূতাবাস কর্মীদের নিশানা করে সন্ত্রাসবাদীরা। দুটি ঘটনাতেই ইজরায়েল সরাসরি ইরানের দিকে সন্ত্রাসের অভিযোগ আনলেও তদন্তে এখনও কিছু স্পষ্ট হয়নি। তার মধ্যেই মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ ব্যাঙ্কক শহরে একামাই-সহ দুটি এলাকায় পাঁচটি বিস্ফোরণ হয়। ঘটনাস্থলের ক্যামেরা ফুটেজ দেখে এবং পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মূল অভিযুক্ত নিজেই নিজের ছোড়া গ্রেনেডের আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছে। অল্পবিস্তর জখম আরও চার জন। এ ছাড়াও বিস্ফোরণে একটি বাড়ি ও একটি ট্যাক্সি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাইল্যান্ড প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, মূল অভিযুক্ত এখন হাসপাতালে ভর্তি এবং প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, সৈয়দ মোরাবি নামের ওই ব্যক্তি ইরানের নাগরিক। তবে বিস্ফোরণে ইরান-যোগের কথা সরকারি ভাবে জানানো হয়নি।
মঙ্গলবারও ইরানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে ইজরায়েল। তবে ভারত এখনই সরাসরি কারও দিকে আঙুল তুলতে নারাজ। তবে দেশে প্লাস্টিক ‘স্টিকি ম্যাগনেটিক বম্ব’-এর প্রথম বার ব্যবহারের পর দুশ্চিন্তা বেড়েছে নয়াদিল্লির। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব আর কে সিংহ মঙ্গলবার জানিয়েছেন, নয়াদিল্লির হাতে এই মুহূর্তে এমন কোনও প্রমাণ নেই যা দিয়ে নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলা যায়। যা সূত্র মিলেছে, তার ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। তবে বিস্ফোরণের পিছনে কোনও জঙ্গিগোষ্ঠী বা দেশের হাত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়েও দেওয়া হচ্ছে না। নয়াদিল্লিতে ইজরায়েলি ও তাইল্যান্ড দূতাবাস, দূতাবাস কর্মীদের বাসভবন, চাবাড হাউসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, আমেরিকা, চিন-সহ অন্য দূতাবাসেও। তাইল্যান্ডে ভারতের রাষ্ট্রদূত অনিল ওয়াধাও জানান, নয়াদিল্লির সঙ্গে ব্যাঙ্ককের ঘটনার যোগ রয়েছে কি না, এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে সেখানকার ভারতীয়দের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। |
|
নিজের ছোড়া গ্রেনেডে জখম সন্দেহভাজন জঙ্গি। মঙ্গলবার ব্যাঙ্ককে এপি-র ছবি। |
ব্যাঙ্ককে প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ। শহরের কেন্দ্রস্থলে একামাই এলাকায় আচমকা বিস্ফোরণে একটি বাড়ির ছাদ উড়ে যায়। জ্বলতে থাকে বাড়িটি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের পরেই ওই বাড়ি থেকে তিন জন দৌড়ে বের হয়। তার মধ্যে এক ব্যক্তির শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। বাকি দু’জন পালিয়ে গেলেও জখম ব্যক্তি ওই অবস্থাতেই একটি ট্যাক্সিকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে। ট্যাক্সিটি না দাঁড়ালে সেটির দিকে একটি বোমা ছোড়ে সে। বিস্ফোরণে ট্যাক্সিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অল্প জখম হন চালকও। খবর পেয়ে পুলিশ এলে তাদের লক্ষ্য করেও একটি গ্রেনেড ছোড়ে ওই ব্যক্তি। কিন্তু সেটি পুলিশের গায়ে লাগেনি। বরং গাছে ধাক্কা লেগে সেটি ফেটে যায় আক্রমণকারীর সামনেই। বিস্ফোরণে দুটি পা উড়ে যায় তার।
পরে পুলিশ জানায়, জখমের নাম সৈয়দ মোরাবি। তার পকেট থেকে তাইল্যান্ডেরই চোনবুরি শহরের একটি হোটেলের রসিদ মিলেছে। পুলিশের দাবি, সেখানে থাকার সময় নিজেকে ইরানি বলে পরিচয় দিয়েছিল মোরাবি। তার ব্যাগে ইরানের মুদ্রাও মিলেছে। পুলিশ জানিয়েছে, যে বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়, সেখানেই আরও দুই বিদেশির সঙ্গে ভাড়া থাকত মোরাবি। সন্দেহ করা হচ্ছে, ওই বাড়িতেই বোমা মজুত করছিল সে। ঘটনার পরেই স্থানীয় সময় দুপুর ২টো নাগাদ শহরের জনবহুল সোই সুকুম্ভিত এলাকায় একটি স্কুলের সামনে দুটি বিস্ফোরণ হয়। তাতে আহত হন চার নাগরিক। তবে কারও জখমই গুরুতর নয়। পরে তাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইংলুক সিনাবাত্রা জানান, নাগরিকদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। মূল আক্রমণকারী পুলিশের জালে, পলাতকদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।
মাসখানেক আগেই দক্ষিণ-পশ্চিম ব্যাঙ্ককে একটি গুদাম থেকে কয়েক হাজার কিলো বিস্ফোরক উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সেই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় লেবাননের এক নাগরিককে। ওই ব্যক্তি জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লার সদস্য বলেও জানা যায়। এর পরেই ইজরায়েল ও মার্কিন প্রশাসনের তরফে আশঙ্কা প্রকাশ করে জানানো হয়, ব্যাঙ্ককে বসবাসকারী ইজরায়েলি ও মার্কিন নাগরিকদের নিশানা করতে পারে জঙ্গিরা। শুক্রবার এই মর্মে তাইল্যান্ডের মার্কিন দূতাবাসের পক্ষে একটি সতর্কবার্তাও প্রকাশ করা হয়। তাইল্যান্ড প্রশাসন অবশ্য জানায়, ব্যাঙ্কক সন্ত্রাসবাদীদের লক্ষ্য নয়। তাই কারও সুরক্ষা নিয়ে সমস্যা হবে না। মঙ্গলবারের ঘটনা সেই সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে।
নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও। ফের ভিভিআইপি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজার কথা ভাবা হচ্ছে। এত দিন শুধু ‘জেড’ ও ‘জেড প্লাস’ নিরাপত্তা বলয়ে থাকা ভিআইপি-রাই যাতায়াতের সময় কনভয়ে এসকর্ট গাড়ি পেতেন। নতুন ব্যবস্থায় ‘ওয়াই’ ক্যাটেগরিতে থাকা ভিআইপি-দের জন্যেও গাড়ির পিছনে এসকর্ট গাড়ির কথা ভাবা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে, সব বিদেশি দূতাবাসের গাড়ি যেন তাদের চত্বরের মধ্যেই রাখা হয় তা সুনিশ্চিত করতে হবে। পুলিশকে দিল্লির সব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে সিসিটিভি লাগানোর কথাও বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
রাজধানীতে বিস্ফোরণস্থল থেকে ব্যাটারি বা সার্কিট বোর্ড মেলেনি। বিস্ফোরণে আরডিএক্সের ব্যবহারও করা হয়নি। অ্যালুমিনিয়াম মিশ্রিত কোনও বিস্ফোরক থাকার নমুনা মিলেছে। সিএফএসএলের বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করছেন। এনআইএ ও এনএসজি-র বিশেষ দল ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছে। সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, তদন্তের কাজে সাহায্য করতে ইজরায়েল থেকে ফরেন্সিক ও গোয়েন্দাদল দিল্লি পৌঁছেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা জানান, এখনই নির্দিষ্ট করে কোনও গোষ্ঠী বা দেশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অভিযোগ করা হচ্ছে না। বিদেশি যে কোনও সংস্থা তদন্তের সুবিধার্থে তথ্য দিতেই পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে পাকাপোক্ত কোনও সূত্র ভারতের হাতে নেই। |
|
|
|
|
|