একদা ‘লালদুর্গ’ বর্ধমানে এর আগে অন্তত ৩১টি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সেই তালিকায় যুক্ত হল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ও। এখনও রাজ্যের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নির্বাচন বাকি। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রথম টিএমসিপি-র দখলে গেল।
মঙ্গলবার মনোনয়ন জমা ও প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে দেখা যায়, ১৯৬টি আসনের একটিতেও প্রার্থী দেয়নি এসএফআই। আর গত বছর যারা এক জনকেও দাঁড় করাতে পারেনি, সেই টিএমসিপি ১৬১টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ায় বাকি ৩৫টি আসনে মনোনয়ন জমা নেওয়া হয়নি বলে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ষোড়শীমোহন দাঁ জানিয়েছেন।
কেন এই পরিস্থিতি?
এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্রের ব্যাখ্যা, “ওখানে অনেক দিন ধরেই ছাত্র রাজনীতির উপযুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। এর আগে সাধারণ সম্পাদককে মারধর করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষাকর্মীরা মার খেয়েছেন। এমনকী তাঁরা যাতে আশপাশের হাসপাতাল-নার্সিংহোমে ভর্তি হতে না পারেন, সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এই অবস্থায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গেলে ব্যাপক সন্ত্রাসের মুখে পড়তে হত।”
রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে বর্ধমান জেলার যে ৪১টি কলেজে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে এক মাত্র রানিগঞ্জ গার্লস কলেজ ছাড়া সব ক’টিতেই জয়ী হয়েছে টিএমসিপি। এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি সিদ্ধার্থ বসুর অভিযোগ, “আমাদের প্রার্থীদের ভীতি প্রদর্শন ও মারধর করা হচ্ছিল। অনেককে ক্লাস করতে বা পরীক্ষা দিতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। তাই প্রার্থী দেওয়া যায়নি। জেলার প্রায় সব কলেজেই এই পরিস্থিতি।”
টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পন্ডা অবশ্য পাল্টা বলেন, “এত দিন তো আমরাই এই অভিযোগ করে এসেছি। মেরে-ধরে, ভয় দেখিয়ে এসএফআই আমাদের কোথাও দাঁড়াতে দিত না। এখন রাজ্য রাজনীতিতে পরিত্যক্ত হয়ে ওরা প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না।” তবে সময়াভাবে ৩৫টি আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়নি, এমন কথা তিনি মানতে চাননি। শঙ্কুবাবুর অভিযোগ, “কলা বিভাগের ডিন শ্যামাপ্রসাদ দে ও দর্শনের শিক্ষিকা মৃদুলা ভট্টাচার্য আমাদের প্রার্থীদের হুমকি দিয়েছেন। জিজ্ঞাসা করেছেন, কেন তোমরা এসএফআইয়ের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছ না। আমরা বর্ধমান থানায় দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি।” এই ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি নেওয়া হয়েছে বলে থানা জানিয়েছে। তবে দুই আধিকারিক অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ষোড়শীবাবুও বলেন, “বর্ধমান থানায় দু’জনের নামে অভিযোগের কথা আমি শুনিনি। বেলা ২টোর মধ্যে না আসায় বাকি ৩৫টি আসনে মনোনয়ন জমা নেওয়া হয়নি। সেগুলি শূন্যই পড়ে থাকবে। ১৬১টি আসনের ভিত্তিতেই ছাত্র সংসদকে কাজ করতে হবে।” |