সরকারি উদ্যোগে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার ক্ষেত্রে একাধিক অনিয়ম ও ঢিলেমির অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামল রায়গঞ্জ লোকসভা যুব কংগ্রেস কমিটি। সোমবার দুপুর ১২ টা থেকে দলের কয়েকশো কর্মী সমর্থক রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় উত্তর দিনাজপুর জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতর ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। লাঙল নিয়ে ওই আন্দোলনে সামিল হন জেলার বিভিন্ন ব্লকের চাষিরা। সংগঠনের তরফে জেলার সহকারী খাদ্য ও সরবরাহ আধিকারিককে ঘেরাও করে স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়। প্রায় তিন ঘন্টা ওই আন্দোলন চলার পরে প্রশাসনিক আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। যুব কংগ্রেসের অভিযোগ, নিয়ম মেনে রাজ্য সরকার জেলার ৯টি ব্লকের সর্বত্র চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি কুইন্টাল প্রতি ১ হাজার ৮০ টাকা সহায়ক দরে ধান কিনছে না। ধান কেনার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে। এমনকী, জেলার চোপড়া, গোয়ালপোখর-১ ও ২ ব্লকে এখনও পর্যন্ত ধান কেনার কাজ শুরু হয়নি। |
হেমতাবাদ ব্লকে ধানের দাম বাবদ বিলি করা একাধিক চেক বাউন্স হয়ে গিয়েছে। বহু চাষি ফড়েদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে, জেলার প্রায় লক্ষাধিক চাষি চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সংগঠনের সভাপতি মানসকুমার ঘোষ বলেন, “বহু চাষি জমি বন্ধক দিয়ে ও চড়া সুদে মহাজন এবং বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বেশি দামে সার ও কীটনাশক কিনে ধান চাষে নেমেছিলেন। বিগত বছরগুলির তুলনায় এ বছর ধানের ফলন বেড়েছে। ধান ওঠার পর ঋণদাতারা তাগাদা শুরু করায় চাষিরা বিভিন্ন হাটে ফড়েদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ওই টাকায় ঋণ শোধ তো দূরের কথা, চাষের খরচও উঠছে না। ফলে, চাষিরা হতাশা ও মানসিক অবসাদে ভুগছেন।” সহকারী খাদ্য ও সরবরাহ আধিকারিক ক্ষিতীশ মণ্ডল জানান, যুব কংগ্রেসের অভিযোগ খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত নভেম্বর মাস থেকে জেলার প্রতিটি ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ বছর জেলার প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ১৪ লক্ষ কুইন্টাল আমন ধানের চাষ হয়েছে। চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ৩০ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও গত নভেম্বর মাস থেকে এখনও পর্যন্ত ৭টি ব্লকে ১৯টি শিবির করে সাড়ে ৯ হাজার মেট্রিক টনের বেশি ধান কেনা হয়নি। গোয়ালপোখর-১ ও ২ ব্লকে এখনও ধান কেনার কাজ শুরু হয়নি। বর্তমানে জেলা জুড়ে ধান কেনার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজ্য সরকার ইটাহার ব্লককে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সেখানে ধান কেনার ৫টি শিবির হয়েছে। সরকরি দর নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ায় বহু চাষি ব্লকের বিভিন্ন হাটে ফড়েদের কাছে কুইন্টাল প্রতি ৮০০ টাকা দরে ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিন কমিটির তরফে প্রশাসনের কাছে জেলার সর্বত্র চেকের বদলে নগদ টাকার বিনিময়ে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার দাবি জানানো হয়। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন চালকল কর্তৃপক্ষকে ধান কেনার কাজে সামিল করারও আর্জি জানানো হয়েছে। |