উত্তরবঙ্গ উৎসবে স্থানীয় লোকশিল্পীদের বিরাট অংশকে আমন্ত্রণ না-জানানোর অভিযোগ ছিলই। এ বার আমন্ত্রিত শিল্পীদের অনুষ্ঠানে ডেকে সরকারি নিয়ম মেনে সাম্মানিক দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠল। এমনকী লাটাগুড়ির উৎসব মঞ্চে অনুষ্ঠান পরিবেশনের পরে কর্তৃপক্ষ সহযোগী শিল্পীদের সাম্মানিক দিতে অস্বীকার করায় ক্ষুব্ধ এক বাউল শিল্পী প্রাপ্য সাম্মানিক প্রত্যাখ্যান করে ফিরে যান।
ওই ঘটনায় উদ্বিগ্ন উৎসবের লাটাগুড়ির আয়োজক কমিটির কর্তা গোবিন্দ দাস বলেন, “শিল্পীদের অভিমান বুঝি। কিন্তু সহযোগী শিল্পীদের জন্য কোনও সাম্মানিক বরাদ্দ করা হয়নি। সরকারি কর্তারা যে ভাবে বলেছেন সে ভাবেই কাজ চলছে। অনুষ্ঠানের জন্য সরকারি একটি টাকাও হাতে পাইনি। সবটা ধারদেনায় চলছে। শিল্পীদের অভিযোগ সরকারি কর্তাদের জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করব।”
গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার ১৯টি মঞ্চে শুরু হয়েছে ৭ দিনের উত্তরবঙ্গ উৎসব। ওই মঞ্চগুলির একটি রয়েছে লাটাগুড়িতে। শুরু থেকে ওই সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না-পেয়ে ক্ষুব্ধ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার লোকশিল্পীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের একাংশ উৎসবের নামে ‘ওঁরা-আমরা’ বিভাজন তৈরির অভিযোগ তোলেন। চাপের মুখে পড়ে অবশেষে তড়িঘড়ি শিল্পীদের চিঠি পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টায় নামে উৎসব কমিটি। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও ‘অসৌজন্য’ আচরণের অভিযোগ ওঠে। আমন্ত্রণপত্র শিল্পীর বাড়িতে পৌছে না দিয়ে লোক মারফৎ পান দোকানে রেখে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। যেমন, ময়নাগুড়ির সিঙ্গিমারি গ্রামের বাসিন্দা প্রসিদ্ধ ভাওয়াইয়া শিল্পী কামেশ্বর রায়। তিনি জানান, ৯ ফেব্রুয়ারি পরিচিত একজন ফোনে তাঁকে জানান উত্তরবঙ্গ উৎসবের চিঠি আছে কোথায় রাখবেন। তিনি বাড়িতে দিতে বলেন। ওই ব্যক্তি জানান চা দোকানে রেখে গেলাম সংগ্রহ করে নেবেন। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিল্পীর কথায়, “ভাবতে পারিনি সরকারি অনুষ্ঠানে এমনটা হতে পারে। তবু গিয়েছি। কিন্তু সেখানে গিয়ে আরও অপমানিত হয়েছি।”
তারিখ ছাড়া লেখা আমন্ত্রণ পত্রে কামেশ্বরবাবুকে গত শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠান পরিবেশন করতে বলা হয়। রাহা খরচ এবং গাড়ি ভাড়া দেওয়ার আশ্বাস ছিল চিঠিতে। শিল্পী ৪ জন সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি ভাড়া করে লাটাগুড়ি মঞ্চে হাজির হয়ে অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। কিন্তু ফিরে আসার সময় সাম্মানিক নিতে গেলে মাথায় হাত পড়ে। আয়োজকরা তাঁর হাতে ১ হাজার ৪০০ টাকা তুলে দেন।
কামেশ্বরবাবু বলেন, “সরকারি নিয়মে শিল্পীর ৫০০ টাকা এবং সহযোগীদের সাড়ে ৪০০ টাকা সাম্মানিক দেওয়ার কথা। এটা বলায় কর্তারা বিতর্ক শুরু করেন। জানান, শুধুমাত্র শিল্পীরা টাকা পাবেন। বললাম বাজনা ছাড়া গান হয়?” ওই শিল্পীকে পকেট থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ করে সহযোগী শিল্পীদের সাম্মানিক ও গাড়ি ভাড়া মেটাতে হয়েছে। অনুষ্ঠান পরিবেশনের পড়ে একই বিতর্কের মুখে পড়ে ময়নাগুড়ির পেটকাটি এলাকার বাসিন্দা বাউল শিল্পী কালীপদ সরকার সাম্মানিক না নিয়ে ফিরে চলে যান। ক্ষুব্ধ কালীপদবাবু বলেন, “আমরা কী ভিক্ষে চাইতে গিয়েছি? অপামান সহ্য হয়নি। তাই টাকা নিইনি।”
এই ব্যাপারে উৎসব কমিটির লাটাগুড়ি আয়োজক কমিটির কর্তা গোবিন্দবাবু বলেন, “আমাদের বলা হয়েছে গাড়ি ভাড়া ছাড়া দলগত শিল্পীদের ১ হাজার এবং একক শিল্পীদের ৫০০ টাকা দিতে। সেটাই দেওয়া হচ্ছে। সহযোগী শিল্পীদের সাম্মানিকের বিষয় নিয়ে সরকারি কর্তাদের আলোচনা করব।” |