সরকারি কর্মীদের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন রুখতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর সরকারের নীতির বিরুদ্ধে মাঠে নামছে তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের অনুগামী দমকলকর্মী সংগঠন।
দমকলের সদর দফতর থেকে শুরু করে রাজ্যের ১০৯টি দমকল কেন্দ্রে ঢালাও পোস্টার সেঁটে সরকারি নীতির বিরুদ্ধে গণ-অবস্থান ও বিক্ষোভের কথা ইতিমধ্যে ঘোষণাও করেছেন আন্দোলনকারীরা। আইএনটিটিইউসি-র অনুগামী দমকলকর্মীদের পাঁচটি ইউনিয়নের সম্মিলিত মঞ্চ ‘দমকল কর্মচারী সমন্বয় সমিতি’র তরফে পোস্টার দিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি এই অবস্থানের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে।
অর্থসঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সরকারি দফতরে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছে রাজ্যের নতুন সরকার। দমকলে নিচু তলা থেকে শীর্ষ স্তর পর্যন্ত প্রায় ৪০০০ শূন্য পদ পূরণ করতেও এটাই দাওয়াই কর্তৃপক্ষের।
ঢাকুরিয়ায় আমরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডের সময় দেখা গিয়েছে, কয়েক জন তরুণ দমকলকর্মী ছাড়া বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্যেরই মই বেয়ে উঠে হাসপাতালের জানলা ভেঙে ঢুকে রোগীদের উদ্ধারের শারীরিক দক্ষতা নেই। প্রাণপণ চেষ্টা করে ধোঁয়ার মধ্যে ঢুকে অসুস্থও হয়ে পড়েন কিছু প্রবীণ দমকলকর্মী। বড় ধরনের বিপর্যয়ে এই প্রবীণের দলই এখনও দমকলের ভরসা। দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারেনিয়া অবশ্য মনে করেন, “সিভিল ডিফেন্স বা অসামরিক প্রতিরক্ষার তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ করেই সমস্যার কিছুটা মোকাবিলা করা সম্ভব। নতুন দমকলকর্মী নিয়োগ তুলনায় ঢের ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ। তরুণ রক্ত আমদানি করলে আখেরে দমকলের ভালই হবে।” কন্ট্রোল রুমে ৬০-৬৪ বছরের কিছু অবসরপ্রাপ্ত দমকলকর্মীকে বসাতে চায় রাজ্য। |
দমকলকর্মীদের তৃণমূল অনুগামী ইউনিয়নগুলির বেশির ভাগই কিন্তু এই সরকারি নীতি মানতে রাজি নয়।
দমকলকর্মীদের আন্দোলনের বিষয়টি তাঁরা জানা নেই বলে দাবি আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেনের। যাদের নামে আন্দোলনের পোস্টার সাঁটা হয়েছে, সেই দমকল কর্মচারী সমন্বয় সমিতির সভাপতি তথা ফলতার তৃণমূল বিধায়ক তমোনাশ ঘোষও অস্বস্তিতে। তাঁর কথায়, “সরকারি কর্মী নিয়োগ নীতি নিয়ে কিছু বলছি না। কিন্তু বাম জমানার ৩৪ বছরে কর্মরত অবস্থায় মৃত দমকলকর্মীদের সন্তানেরা সরকারি নীতি অনুযায়ী চাকরি পাননি। আমরা চাই ওঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।”
তা হলে সমন্বয় সমিতির পোস্টারে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগের নীতির বিরোধিতা করা হল কেন? তমোনাশবাবু ‘আমি ওই পোস্টার দেখিনি’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিরোধী শিবির রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির অনুগামীদের সুরে সুর মিলিয়ে তৃণমূল অনুগামী সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রসাদ দত্ত বলেন, “চুক্তির ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ মানছি না। সরকারি নীতি মেনেই নতুন কর্মী নিয়োগ করতে হবে।” সোমবার সরকারি ফরমানের বিরুদ্ধে দমকলের সদর দফতরে বিক্ষোভ-অবস্থানে নামে কো-অর্ডিনেশন কমিটির অনুগামী ফায়ার সার্ভিস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। এ দিনই দমকলমন্ত্রী জাভেদ খানের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছে তৃণমূল অনুগামী দমকলকর্মীদের সমন্বয় সমিতি।
দেবপ্রসাদবাবুদের বক্তব্য, অস্থায়ী কর্মীদের পর্যাপ্ত তালিম ছাড়াই আগুন নেভানোর কাজে নামালে অনর্থ ঘটবে। তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন নেত্রী দোলাদেবীর দাবি, “দমকলকর্মীদের ক্ষোভের বিষয়ে আমার সঙ্গে কেউ আলোচনাই করেননি। সরকার কেন এই নীতি গ্রহণ করেছে, সেটা জেনে দমকলকর্মীদের তা বোঝাব আমি।” |