এ রাজ্যে কংগ্রেসকে ‘গিলে নিতে’ চাইছে তৃণমূল। কিন্তু প্রদেশ নেতৃত্ব তা কোনও ভাবে ‘বরদাস্ত’ করবে না। সোমবার অশোকনগরের গুমা স্টেশন-সংলগ্ন মাঠে আইএনটিইউসি-র ডাকে এক সভায় এ ভাবেই জোটশরিক তৃণমূলের সমালোচনা করলেন আইএনটিইউসি সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচাযর্।
গত ২২ জানুয়ারি গুমার আইএনটিইউসি কর্মী দীপক আচার্যের দেহ মেলে। তাঁকে খুনের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে দীপকেরই দুই বন্ধুকে। জমির দালালির টাকা নিয়ে বিবাদের জেরেই এই খুন বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে জানায় পুলিশ। সংগঠনের সদস্যের খুনের প্রতিবাদের পাশাপাশি রাজ্যে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাবলীর প্রতিবাদও করা হয় এ দিনের সভা থেকে। কৃষকের আত্মহত্যা, রাজনৈতিক হিংসা, শিশুমৃত্যু, শিক্ষাক্ষেত্রে অরাজকতা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে সরব হন কংগ্রেস ও আইএনটিইউসি নেতৃত্ব। প্রদীপবাবু ছাড়াও সভায় ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেস সভাপতি দেবী ঘোষাল, প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য বিশ্বজিৎ সমাদ্দার, আইএনটিইউসি জেলা সভাপতি মাস্টার নিজাম-সহ অনেকে। দীপকবাবুর স্ত্রীকে আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন প্রদীপবাবু। দলীয় তহবিল থেকে দীপকের মেয়ের পড়ার খরচ দেওয়ার কথাও বলা হয়। |
এ দিন আগাগোড়াই তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘আক্রমণ’ শানিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা। প্রদীপবাবু জানান, কিছু দিন ধরে জেলায় জেলায় ঘুরে কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁর মনে হয়েছে, কংগ্রেস যেন জোটেই নেই। প্রদেশ সভাপতির কথায়, “মনে হচ্ছে যেন বাম জমানাতেই আছি। ভোটের আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে জোড়া ফুলে ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলাম মানুষকে, তা পালনে ধাক্কা খেতে হচ্ছে। যন্ত্রণা তৈরি হচ্ছে।” প্রদীপবাবুর অভিযোগ, ‘প্রলোভন’ দিয়ে কংগ্রেসকে ভাঙানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। তাঁর কথায়, “উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী যেমন অন্য দলকে গ্রাস করতে গেলে কংগ্রেস বিরোধিতা করে, এ রাজ্যেও কংগ্রেস তেমন ভূমিকাই পালন করবে।”
পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি কংগ্রেস এখন থেকেই শুরু করে দিতে চায় বলে মন্তব্য করেন প্রদেশ সভাপতি। তবে সে ক্ষেত্রে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস জোট করবে কিনা, তা দলের স্থানীয় কর্মীরাই ঠিক করবেন বলে মন্তব্য করেন প্রদীপবাবু। প্রদেশ নেতৃত্ব এমন কোনও সিদ্ধান্ত ‘চাপিয়ে দেবে না’ বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। তবে একই তিনি মনে করিয়ে দেন, “আমি জোট গড়ার লোক। জোট ভাঙতে আসিনি।”
জোটসঙ্গী তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ দিন আগাগোড়াই সরব ছিলেন প্রদীপবাবু। ‘সিপিএমের বি-টিম’ হিসাবে যে সমালোচনার লক্ষ্য কংগ্রেস, সে বিষয়ে প্রদীপবাবুর পাল্টা দাবি, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, নদিয়া ও দক্ষিণ দিনাজপুরে সিপিএমের সঙ্গে ‘গোপন আঁতাত’ করছে তৃণমূলই। নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর আন্দোলন পর্বে কংগ্রেস ‘দুর্ভাগ্যজনক ভাবে’ ‘প্রচারের আলোয়’ আসেনি বলে মন্তব্য করেন প্রদেশ সভাপতি। ‘প্রচারের আলো’ সে সময়ে তৃণমূলের উপরেই পড়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাম দল ছেড়ে আসা দুষ্কৃতীরা এখন তৃণমূলের ‘ছাতার তলায়’ আশ্রয় নিয়েছে বলে সমালোচনা করেন একাধিক কংগ্রেস নেতা। তাঁদের মতে, রাজ্যে সর্বত্র এক দিকে যেমন তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছে। তেমনই আক্রান্ত হচ্ছেন কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরাও। দেবীবাবু বলেন, “শাসকদলে (তৃণমূল) সমাজবিরোধীদের সংখ্যা বেশি। সিপিএমের থেকেও বেশি সন্ত্রাস করছে ওরা।” |