সুকনায় সামরিক ছাউনি এলাকায় ঘুরে বেড়ানো জখম স্ত্রী হাতিটির মৃত্যুর পিছনে বন অফিসারদের একাংশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠল। রবিবার গভীর রাতে হাতিটির মৃত্যু হয়। সোমবার সকালে সুকনা আর্মি স্কুলের পাশে হাতিটির দেহ পড়ে থাকতে দেখে সামরিক বাহিনীর অফিসাররা বন দফতরে খবর পাঠান। সুকনা থেকে এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের রেঞ্জ অফিসারের সঙ্গে ওই এলাকায় যান পশু চিকিৎসক মলয় মাইতি এবং উমাশঙ্কর সেন। দুপুরে সামরিক বাহিনীর সাহায্যে হাতিটির দেহ লাগোয়া জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ময়নাতদন্তের পরে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মাসখানেক ধরে বছর ত্রিশের ওই স্ত্রী হাতিটি ওই এলাকায় একটি সেনা ক্যান্টিনের পাশে ঘোরাঘুরি করত। ওই ক্যান্টিনের ফেলে দেওয়া খাবার খেত। উত্তরবঙ্গ উৎসবের উদ্বোধনের দু’দিন আগে সেটি জওয়ানদের যাতায়াতের একটি রাস্তার সামনে চলে গেলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনও বনকর্তাদের পরামর্শ দেন হাতিটিকে ওই এলাকায় থেকে জলদাপাড়ায় সরিয়ে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করার। |
এ দিন ক্ষুব্ধমন্ত্রী বলেন, “কেন হাতিটিকে জলদাপাড়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা হল না, সেটা আমার কাছেও স্পষ্ট নয়। আধিকারিকদের কেউ বলেছিলেন, সরানোর চেষ্টা হলে হাতিটি মারা যেতে পারে। সেই মারাই গেল। চিকিৎসার চেষ্টা করতে অসুবিধা কোথায় ছিল? আমি বনকর্তাদের কাছে ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছি। কেন চিকিৎসার ব্যবস্থা হল না, তাও জানতে চেয়েছি।” পরিবেশপ্রেমীরা বহুবার দাবি জানানোর পরেও উত্তরবঙ্গে বন্যপ্রাণ চিকিৎসার বিশেষজ্ঞ দল কিংবা চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরি হয়নি। হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ) মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “হাতিটি যেভাবে মরল তাতে ফের একবার প্রমাণিত হল বন্যপ্রাণ চিকিৎসার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল কিংবা চিকিৎসা কেন্দ্রের কেন প্রয়োজন। তবে সেই ব্যবস্থার অপেক্ষায় না-থেকে এই হাতিটির জন্য প্রাথমিক কিছু ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।” গত অগস্ট মাসে নেপালে গিয়ে হাতিটি গুলিতে জখম হয়। গুলিতে হাতিটির সামনের বাঁ-পায়ের হাড় ভেঙে যায়। একপাল বুনো হাতির সঙ্গে এই হাতিটি নেপালে ফসল খেতে গিয়েছিল। দলের সঙ্গে ফেরে। জখম অবস্থাতেও দলের মধ্যে ঢুকে থাকায় সেটিকে শনাক্ত করতে সেপ্টেম্বর গড়িয়ে যায়। ওই সময়ে কার্শিয়াং বন বিভাগের মেরিয়নবাড়ি চা বাগান লাগোয়া জঙ্গলে সেটিকে একটি শাবকের সঙ্গে দেখা যায়। কয়েকদিন পরে শাবকটিও স্ত্রী হাতিটিকে ছেড়ে চলে গেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সুকনা এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের পক্ষ থেকে সেই সময়ে হাতিটির প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। চিকিৎসায় সেটি সুস্থও হয়। এর পরে ডিসেম্বরে ফের হাতিটি দেখতে পাওয়া যায় সুকনা আর্মি স্কুলের পিছনের একটি জঙ্গলে। এ বারেও এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের পক্ষ থেকে স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। ক্ষতস্থান গুঁড়ো হলুদ দিয়ে লেপে দেওয়া হয়। এ বারেও হাতিটি সুস্থ হয়ে গেলেও পায়ের হাড় ভেঙে যাওয়ায় হাঁটতে পারছিল না। তবে জঙ্গল থেকেও খাবার সংগ্রহ করে বেঁচে ছিল। এ বার অসুস্থ হয়ে সেনাদের ওই ক্যান্টিনের পাশে ঘাঁটি গাড়ে। সেনা ক্যান্টিনের এক কর্মী বলেন, “রবিবার সন্ধ্যায়ও কলা, বাঁধাকপি-সহ কিছু খাবার দিয়েছিলাম। গামলায় জলও দেওয়া হত। যে ভাবে কষ্ট পেয়ে মারা গেল, চোখে দেখা যায় না।” |