নেপালে মৃত্যু বাবা-মা-দাদার
দুর্ঘটনায় বেঁচে গেল শুধু ৩ মাসের শিশুকন্যা
সেতু থেকে প্রায় ৫০ মিটার নীচে নদীতে পড়ল গাড়িটি। বাবা, মা, দাদা সবাই মারা গেলেন। বেঁচে রইল শুধু তিন মাসের মেয়েটি।
রবিবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটে নেপালের কুলেখানির কাছে। গাড়িটিতে মোট ১২ জন ছিলেন। পাঁচ জন মারা গিয়েছেন। জীবিত সাত জনের মধ্যে তিন মাসের মেয়ে সিথুও আছে। সে বুঝতেও পারছে না, বাবা সুনীল রায় (২৬), মা টুম্পা রায় (২৪) ও দাদা শঙ্কু রায় (৩)-এর সঙ্গে তার আর দেখা হবে না। সুনীলবাবুরা হাওড়ার বাগনানের বাসিন্দা। মৃতদের মধ্যে দু’জনের বাড়ি নেপালে।
নেপালে বসবাসকারী আত্মীয়দের কাছ থেকে ওই দিন সন্ধ্যায় দুঃসংবাদ পেয়েছিলেন সুনীলের বাবা প্রফুল্লবাবু। সোমবার সকাল থেকে নিজের বাড়িতে বসে ছিলেন টেলিভিশনের সামনে। টেলিভিশনের পর্দায় হঠাৎ তিনটি নাম দেখতে পেয়ে ৫০ বছরের প্রৌঢ় স্বগতোক্তি করে উঠলেন, “ওই তো নামগুলি দেখাচ্ছে। আর কোনও আশা নেই।”
পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটিতে মোট ১২ জন আরোহী হেতাউদা থেকে কাঠমান্ডু যাচ্ছিলেন। কুলেখানির কাছে সিমখোলা নদীর সেতু থেকে গাড়িটি প্রায় ৫০ মিটার নীচে পড়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, একটি পাথরে ধাক্কা মেরেই চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। আহতদের প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ফার্পিং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখান থেকে দু’জনকে কাঠমান্ডু হাসপাতালে রেফার করা হয়। বাকিদের ফার্পিং থেকেই প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সুনীল রায় টুম্পা রায় শঙ্কু রায়
সুনীল ১৬ বছর ধরে থাকতেন কাঠমান্ডুর কাছে ভক্তপুরে। সেখানে তিনি সোনার কাজ করতেন। মাঝে মাঝে বাড়িতে আসতেন। সপ্তাহখানেক আগে স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নেপালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি বাগনানের হাটুরিয়ায় এসেছিলেন।
শনিবার বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ হাওড়া থেকে মিথিলা এক্সপ্রেস ধরে তাঁরা রওনা দেন রক্সৌলের উদ্দেশে। সেখানে পৌঁছে রবিবার সকালে আরও আট জনের সঙ্গে একটি গাড়ি ভাড়া করে তাঁরা রওনা দেন কাঠমান্ডুর দিকে।
সুনীল প্রফুল্লবাবুর একমাত্র পুত্র সন্তান। এ ছাড়াও রয়েছেন তাঁর দুই মেয়ে। দু’জনেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। প্রফুল্লবাবু বললেন, “ছোট মেয়ের মামাশ্বশুর ভক্তপুরে সোনার কাজ করেন। ছোটবেলায় তাঁর কাছে ছেলেকে পাঠিয়ে দিয়েছি। বছরে দু’তিন বার আসত।”
প্রফুল্লবাবু বলেন, “ওখানে ছেলের যে-সব বন্ধু রয়েছে, তারাই ফোন করে রবিবার সন্ধ্যায় আমাকে দুর্ঘটনার খবর জানায়। প্রথমে আমাকে বলেছিল সবাই ভাল আছে। রাতের দিকে ছোট মেয়ের মামাশ্বশুর বলেন, “একমাত্র সিথু বেঁচে আছে। বাকিরা শেষ।”
হাটুরিয়ায় নারকেলডাঙা মোড়ে প্রফুল্লবাবুর চায়ের দোকান। সোমবার দুপুরে প্রফুল্লবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ছোট দু’কামরা পাকাবাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন প্রতিবেশীরা। দাওয়ায় শুয়ে রয়েছেন প্রফুল্লবাবুর স্ত্রী। শোকে কথা বলতে পারছেন না। শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে এসেছেন সুনীলের দিদি রূপা ও দীপালি।
শনিবার ছেলেকে মিথিলা এক্সপ্রেসে তুলে দিয়েছেন প্রফুল্লবাবু। তাঁর বাড়ির সামনেই রয়েছে হরিমঞ্চ। প্রফুল্লবাবু বলেন, “হরিমঞ্চে পুজো দিয়ে সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল।”
এ দিন সকালে কাঠমান্ডু রওনা দিয়েছেন প্রতিবেশী ওসমান খান এবং প্রফুল্লবাবুর ছোট জামাই পলাশ মাইতি। দুর্ঘটনায় জীবিত শিশুকন্যা সিথুই এখন সান্ত্বনা প্রফুল্লবাবুর কাছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.