নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
তল্লাশি পুরোমাত্রায় জারি থাকলেও রবিবার আরামবাগে পুলিশের উপরে হামলার ঘটনায় নতুন করে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী-সহ ধৃত ৮ জনকে সোমবার আরামবাগ আদালতে তোলা হয়। বিচারক সাত জনকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে মারধর, খুনের চেষ্টা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে মধ্যে এক মহিলা ও এক সেনাকর্মীও রয়েছেন। ছাত্রটিকে উত্তরপাড়ার জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
এ দিকে, পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে সোমবারে বেহালা এবং সংলগ্ন বাতানল, চকহাজি, চকজালান, চকআহমদের মতো গ্রামগুলি প্রায় পুরুষশূন্য ছিল। বাতানল বাসস্ট্যান্ড থেকে হাটতলা পর্যন্ত অধিকাংশ দোকানও বন্ধ ছিল।
ট্রাকের ধাক্কায় এক মহিলা খেতমজুরের মৃত্যুতে রবিবার অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে আরামবাগের বেহালা গ্রাম। মৃতের পরিবারের জন্য তৎক্ষণাৎ ক্ষতিপূরণের দাবিতে অবরোধ করে জনতা। অবরোধ তুলতে গেলে জনতার সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ বাধে। পুলিশের দু’টি গাড়ি, একটি বাস ও ট্রাকে ভাঙচুর চলে। জনতার ছোড়া ইট-পাথরে জখম হন ৯ পুলিশকর্মী। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ শূন্যে গুলি চালায়। শেষে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ গিয়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গোলমালে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ৮ জনকে।
ধৃত তিন জনের পরিবারের দাবি, পুলিশ অন্যায় ভাবে তাদের ধরেছে। বাতানল গ্রামের বাসিন্দা, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জাফারুল ইসলামকে ঘটনাস্থল থেকেই হাতেনাতে ধরা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। জাফারুলের বাবা সামসুর আলির দাবি, “ছেলের সঙ্গে ঘটনার কোনও যোগ নেই। ও বিকেলে বাজারে যাচ্ছিল। তখনই পুলিশ ধরে।” বাতানলেরই মাঝপাড়ার বাসিন্দা বুল্টি পণ্ডিতকেও হামলায় জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর স্বামী কৃষ্ণ পণ্ডিতের অভিযোগ, “পুলিশ বাড়িতে ঢুকে আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে বিনা অপরাধে মারধর করে ধরে নিয়ে যায়।” পুলিশের দাবি, বিশেষ তদন্তে হামলায় ওই মহিলা জড়িত বলে জানা গিয়েছে। তিনি যে অন্তঃসত্ত্বা, ডাক্তারি পরীক্ষায় তার প্রমাণ মেলেনি।
সেনাকর্মী সুস্মিত কুণ্ডুকে গ্রেফতারের ঘটনাতেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর বাড়ির লোক। সুস্মিতের দাদা রাজীবের দাবি, “ভাই সেলুনে গিয়েছিল। সেখান থেকেই পুলিশ তাঁকে ধরে।” পুলিশের দাবি, এ ক্ষেত্রেও মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “পুলিশের উপরে হামলার ঘটনায় তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদেরই ধরা হয়েছে। গ্রামে তল্লাশি জারি থাকবে।” |