নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
এক পান-বিড়ির দোকানদারকে ‘উৎখাত করে’ সেখানে দলীয় কার্যালয় করার প্রতিবাদ করায় নিজের দলেরই লোকজনের হাতে মার খেলেন এক তৃণমূল নেতা। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন এক তৃণমূল কর্মীও। রবিবার রাতে এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার মালিপাঁচঘড়া থানার পাশেই নস্কর পাড়া রোডে। পুলিশ জানায়, আহত তৃণমূল নেতা ও কর্মীর নাম সুরজিৎ নস্কর এবং গৌতম শেঠ। সুরজিৎবাবু উত্তর হাওড়া তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক। তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই ঘটনাকে দু’টি পাড়ার মধ্যে গোলমাল বলে দাবি করা হয়েছে। অন্য দিকে, এই ঘটনা তৃণমূলের স্বাভাবিক পরিণতি বলে কটাক্ষ করেছে সিপিএম।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মালিপাঁচঘড়া থানার পাশেই ৫৭/৫৮ নস্কর পাড়া রোডে একটি বাড়িতে নন্দু তাঁতি নামে এক ব্যক্তির পান-বিড়ির দোকান ছিল। বছর তিনেক আগে ওই বাড়ি ভেঙে বহুতল তৈরির কাজ শুরু করেন বাড়ির মালিক। তখন নন্দুবাবুকে বাড়ির মালিক জানান, বাড়ি হওয়ার পর তাঁর দোকান ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এ জন্য তাঁকে প্রতি মাসে ভাড়া দিতে হবে।
সুরজিৎবাবুর দাবি, নন্দুবাবু গত তিন বছর ধরে দোকানের ভাড়াও গুনেছেন। গত তিন বছরের ভাড়ার বিলও তিনি দেখিয়েছেন সুরজিৎবাবুকে। নন্দুবাবু গত তিন বছর তিনি ওই বাড়ির সামনেই একটি গুমটি করে দোকান চালিয়েছেন। কয়েক মাসের জন্য তিনি দেশে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন, তাঁর যেখানে দোকান দেওয়ার কথা ছিল, সেখানে তৃণমূলের দু’নম্বর ওয়ার্ডের অফিস তৈরি হয়েছে। |
এর পরে নন্দুবাবু গোটা ঘটনা সুরজিৎবাবুকে জানিয়ে দেশে চলে যান। কেন দোকান দখল করে দলীয় কার্যালয় করা হয়েছে, সে প্রসঙ্গ তুলে রবিবার রাতে সুরজিৎবাবু সেই পার্টি অফিসে গিয়েই প্রতিবাদ জানান। তখন কিছু ঘটেনি। কিন্তু তিনি ফিরে যাওয়ার পর জল অনেক দূর গড়ায়।
সোমবার দুপুরে টিএল জয়সওয়াল হাসপাতালের মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে শুয়ে সুরজিৎবাবু ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, তিনি পাড়ায় ফিরে গিয়ে রাস্তার ধারে বেঞ্চে বসে গৌতম শেঠ-সহ কয়েক জন তৃণমূলকর্মী এবং পাড়ার লোকেদের সঙ্গে গল্পগাছা করছিলেন। সুরজিৎবাবু বলেন, “রাত ১০ নাগাদ ২০-২৫ জন যুবক লাঠি, বাঁশ, ইট নিয়ে আমাদের আক্রমণ করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরা রাস্তায় ফেলে আমাদের পেটাতে শুরু করে।” তাঁর বক্তব্য, “ওরা সব আমাদের দলের কর্মী। দলীয় কার্যালয় থেকে এসে আমাদের আক্রমণ করে। প্রত্যেকে আমার পরিচিত মুখ।”
সুরজিৎবাবুর স্ত্রী শীলা নস্কর বলেন, “আমার স্বামীকে মারধরের পরে ওরা বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করে। হুমকি দিয়ে বলে, আমাদের ১৮ বছরের মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে। বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে।” এর পরে শীলাদেবী মালিপাঁচঘড়া থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সুরজিৎবাবুও জানান, তিনি এদের কথা জেলা সভাপতিকে জানিয়েছেন।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি তৃণমূলের ওই অফিসটি উদ্বোধন করেন রাজ্যের কৃষি ও বিপণন মন্ত্রী এবং তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ রায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক অশোক ঘোষ। অরূপবাবু এ দিন অবশ্য দলীয় কোন্দলের বিষয়টি এড়িয়ে বলেন, “এটা কোনও দলীয় কোন্দল নয়। দু’টো পাড়ার ঝগড়া।” দলীয় অফিস নিয়ে যে দখলদারির অভিযোগ উঠেছে, তা-ও উড়িয়ে দিয়ে তাঁর দাবি, দলের টাকায় ওই অফিস ঘরটি কেনা হয়েছিল। সেই প্রমাণ দেখার পরেই তিনি উদ্বোধনে যান। তাঁর দাবি, “অফিস কেনার দলিল না দেখে আমি পার্টি অফিস উদ্বোধন করতে যাই না।”
ঘটনাটিকে দলীয় কোন্দল বলতে রাজি নন অশোকবাবুও। উত্তর হাওড়ার বিধায়কের দাবি, “ঘটনাটা নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জন্য হয়েছে। আমরা নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেব। এর মধ্যে কোনও অন্তর্দ্বন্দ্বের ব্যাপার নেই।”
হাওড়ার সিপিএম জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, “এটাই হল তৃণমূলের পরিণতি। এই সব মারামারি দলের কী হাল তা বুঝিয়ে দিচ্ছে।” |